যুক্তফ্রন্টের আদলে আসছে বামপন্থিদের নতুন জোট
Published: 25th, April 2025 GMT
যুক্তফ্রন্টের আদলে বামপন্থিদের নতুন জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। আগামী নির্বাচনে সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তারা। জোট গঠনের মূল উদ্যোক্তা বাম গণতান্ত্রিক জোট। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) ছয়টি দলের এই জোটের নেতারা কয়েক মাস ধরে অন্য বাম প্রগতিশীল জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিগগিরই বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
উদ্যোক্তারা বলছেন, জোট গঠন বিষয়ে বামপন্থি দল ও জোটগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও নতুন জোটের নাম ঠিক হয়নি। ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ কিংবা ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ নামে জোটের যাত্রা শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন কোনো কোনো দলের নেতারা। তবে ১৯৫৪ সালে যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠিত হয়েছিল, তার সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই জোটের নাম কী হবে, কিংবা কোন কাঠামোয় চলবে, তা সবার মতামত নিয়ে ঠিক করা হবে। বৃহত্তর এই জোটের ব্যানারে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ প্রশ্নে মোটামুটি একমত সবাই।
তারা আরও বলছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দ্বিদলীয় ও বুর্জোয়া রাজনৈতিক ধারার বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে বাম প্রগতিশীল শক্তিগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। গত ৫ আগস্টের পর নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা থেকে বামপন্থিরা নতুন জোট গঠনের এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
বাম নেতাদের দাবি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের উচ্ছেদ হলেও ব্যবস্থার বদল হয়নি। ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ও শক্তি, সংগঠন এবং ব্যক্তিদের নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সূত্র জানায়, বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারা এরই মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, জাতীয় গণফ্রন্ট, ঐক্য ন্যাপসহ কয়েকটি প্রগতিশীল দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একাধিক সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গণসংগঠনের সঙ্গেও তাদের আলোচনা হয়েছে।
ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড.
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক তিনটি দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সঙ্গেও কথা বলেছেন বাম জোটের নেতারা। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী সময়ে বিএনপি জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতারা এ বিষয়ে ‘আগ্রহ’ দেখিয়েছেন বলে দাবি করেন বাম জোট নেতারা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে থেকেই বাম গণতান্ত্রিক জোট অন্য বামপন্থি জোট ও দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছিল। বিশেষ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা এবং বাংলাদেশ জাসদ বেশ কয়েকটি যুগপৎ কর্মসূচি পালন করেছে। ৫ আগস্টের পর এসব দলের ঐক্যের উদ্যোগই আরও জোরদার হয়েছে।
গত ৩ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির ঢাকা সমাবেশ থেকে বাম প্রগতিশীল শক্তির জোট ও দলগুলোকে একমঞ্চে নিয়ে আসার তাগিদ দেওয়া হয়। সিপিবির সমাবেশের ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১০ জানুয়ারি থেকে বামপন্থি জোট ও দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য তথা জোট গঠনের আলোচনা গতি পেয়েছে। ২১ জানুয়ারি বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার বৈঠক হয়। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কিংবা টেলিফোনেও আলোচনা হয়েছে অন্য দল ও সংগঠনের সঙ্গে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া সমকালকে বলেন, তারা মনে করছেন, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে বাম প্রগতিশীলদের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি। আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকাতে এই প্রয়োজনীয়তা আরও প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে। এই বিবেচনা থেকেই বৃহত্তর ঐক্য প্রশ্নে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন তারা।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বিদলীয় মেরূকরণের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা অনেক আগে থেকে বলে আসছি। আশা করছি, এ বিষয়ে শিগগিরই দেশবাসীর সামনে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ও কর্মসূচি নিয়ে হাজির হতে পারব আমরা। জোট গঠনের পর বামপন্থিরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বামপন্থিদের বৃহত্তর ঐক্যের জন্য এই সময়টাই জরুরি। দুঃশাসন হটানোর পর এবার ব্যবস্থা বদল করতে হবে। সেটা পারবে একমাত্র বাম গণতান্ত্রিক শক্তি।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, শাসকশ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতে বিকল্প একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রচেষ্টা চলছে। এ নিয়ে সব দল ও জোটের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তিনি জানান, বৃহত্তর জোটের ব্যানারে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টাও রয়েছে বাম প্রগতিশীল দল ও শক্তিগুলোর মধ্যে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ব ম গণত ন ত র ক জ ট ব ম প রগত শ ল অন ন ষ ঠ ন ক জ ট গঠন র র জন ত ক নত ন জ ট জ ট ও দল ব মপন থ দলগ ল স গঠন গণফ র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ
এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।
আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।
বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।
বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।