যুক্তফ্রন্টের আদলে বামপন্থিদের নতুন জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। আগামী নির্বাচনে সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তারা। জোট গঠনের মূল উদ্যোক্তা বাম গণতান্ত্রিক জোট। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) ছয়টি দলের এই জোটের নেতারা কয়েক মাস ধরে অন্য বাম প্রগতিশীল জোট ও দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিগগিরই বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।    

উদ্যোক্তারা বলছেন, জোট গঠন বিষয়ে বামপন্থি দল ও জোটগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও নতুন জোটের নাম ঠিক হয়নি। ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ কিংবা ‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’ নামে জোটের যাত্রা শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন কোনো কোনো দলের নেতারা। তবে ১৯৫৪ সালে যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠিত হয়েছিল, তার সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই জোটের নাম কী হবে, কিংবা কোন কাঠামোয় চলবে, তা সবার মতামত নিয়ে ঠিক করা হবে। বৃহত্তর এই জোটের ব্যানারে আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ প্রশ্নে মোটামুটি একমত সবাই।       
তারা আরও বলছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দ্বিদলীয় ও বুর্জোয়া রাজনৈতিক ধারার বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে বাম প্রগতিশীল শক্তিগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। গত ৫ আগস্টের পর নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা থেকে বামপন্থিরা নতুন জোট গঠনের এ উদ্যোগ নিয়েছেন। 

বাম নেতাদের দাবি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের উচ্ছেদ হলেও ব্যবস্থার বদল হয়নি। ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল ও শক্তি, সংগঠন এবং ব্যক্তিদের নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।  
সূত্র জানায়, বাম গণতান্ত্রিক জোট নেতারা এরই মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, জাতীয় গণফ্রন্ট, ঐক্য ন্যাপসহ কয়েকটি প্রগতিশীল দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, দলিত ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একাধিক সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক গণসংগঠনের সঙ্গেও তাদের আলোচনা হয়েছে। 

ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড.

কামাল হোসেনের রাজধানীর বেইলি রোডের বাসায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠকেও সব বাম প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তির বৃহত্তর জোট গঠনের বিষয়ে কথা হয়েছে। এই ধারায় গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দল হিসেবে গণফোরামকে যুক্ত করার বিষয়ে আগে থেকেই আলোচনা চলে আসছিল। 
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক তিনটি দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সঙ্গেও কথা বলেছেন বাম জোটের নেতারা। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান পূর্ববর্তী সময়ে বিএনপি জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতারা এ বিষয়ে ‘আগ্রহ’ দেখিয়েছেন বলে দাবি করেন বাম জোট নেতারা।    

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে থেকেই বাম গণতান্ত্রিক জোট অন্য বামপন্থি জোট ও দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছিল। বিশেষ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা এবং বাংলাদেশ জাসদ বেশ কয়েকটি যুগপৎ কর্মসূচি পালন করেছে। ৫ আগস্টের পর এসব দলের ঐক্যের উদ্যোগই আরও জোরদার হয়েছে। 
গত ৩ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবির ঢাকা সমাবেশ থেকে বাম প্রগতিশীল শক্তির জোট ও দলগুলোকে একমঞ্চে নিয়ে আসার তাগিদ দেওয়া হয়। সিপিবির সমাবেশের ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১০ জানুয়ারি থেকে বামপন্থি জোট ও দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য তথা জোট গঠনের আলোচনা গতি পেয়েছে। ২১ জানুয়ারি বাম গণতান্ত্রিক জোটের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার বৈঠক হয়। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কিংবা টেলিফোনেও আলোচনা হয়েছে অন্য দল ও সংগঠনের সঙ্গে।

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া সমকালকে বলেন, তারা মনে করছেন, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে বাম প্রগতিশীলদের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি। আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকাতে এই প্রয়োজনীয়তা আরও প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে। এই বিবেচনা থেকেই বৃহত্তর ঐক্য প্রশ্নে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন তারা।   
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বিদলীয় মেরূকরণের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা অনেক আগে থেকে বলে আসছি। আশা করছি, এ বিষয়ে শিগগিরই দেশবাসীর সামনে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ও কর্মসূচি নিয়ে হাজির হতে পারব আমরা। জোট গঠনের পর বামপন্থিরা ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়ে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বামপন্থিদের বৃহত্তর ঐক্যের জন্য এই সময়টাই জরুরি। দুঃশাসন হটানোর পর এবার ব্যবস্থা বদল করতে হবে। সেটা পারবে একমাত্র বাম গণতান্ত্রিক শক্তি।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, শাসকশ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতে বিকল্প একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের প্রচেষ্টা চলছে। এ নিয়ে সব দল ও জোটের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও আলাপ-আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তিনি জানান, বৃহত্তর জোটের ব্যানারে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টাও রয়েছে বাম প্রগতিশীল দল ও শক্তিগুলোর মধ্যে।  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ব ম গণত ন ত র ক জ ট ব ম প রগত শ ল অন ন ষ ঠ ন ক জ ট গঠন র র জন ত ক নত ন জ ট জ ট ও দল ব মপন থ দলগ ল স গঠন গণফ র আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে

৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।

পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—

পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’

আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ