পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধ করায় ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর খরচ বাড়ছে
Published: 26th, April 2025 GMT
পাকিস্তান আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়ায় এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগোর মতো ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলো এখন তাদের আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট ঘুরপথে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে তাদের জ্বালানি বাবদ বেশি খরচ হবে এবং ভ্রমণের সময়ও বেড়ে যাবে।
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীর হামলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় বিমানসংস্থার জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় পাকিস্তান। নিষেধাজ্ঞাটি আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
গত মঙ্গলবার কাশ্মীরের পেহেলগামের একটি খোলামাঠে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ভারত বলছে, এ ঘটনায় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা আছে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এ ঘটনার জেরে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তদেশীয় নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে। ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পাকিস্তান।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪–এর তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভারতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো তাদের নিউইয়র্ক, আজারবাইজান ও দুবাইগামী ফ্লাইটগুলো ঘুরিয়ে দিচ্ছে। এসব ফ্লাইট সাধারণত পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে থাকে।
এই নিষেধাজ্ঞার কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে নয়াদিল্লির বিমানবন্দরের ওপর। এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর। এখান থেকে পশ্চিমা দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া ফ্লাইটগুলো সাধারণত পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করে থাকে।
ডেটা বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান সিরিয়াম অ্যাসেন্ডের তথ্য বলছে, শুধু এপ্রিল মাসেই ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া এবং তাদের সুলভ মূল্যের শাখা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০টি ফ্লাইট নির্ধারিত আছে। এগুলো নয়াদিল্লি থেকে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আমেরিকার দিকে যাবে।
ভারতের বেসরকারি বিমান চলাচলসংক্রান্ত এক নির্বাহী বলেছেন, নয়াদিল্লি থেকে মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে করে গন্তব্যে পৌঁছাতে গড়ে এক ঘণ্টা বেশি সময় লাগবে। এতে জ্বালানি খরচ যেমন বেশি হবে, তেমনি মাল পরিবহন কমাতে হবে। ওই কর্মকর্তা তাঁর নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
একটি বিমান সংস্থার মোট পরিচালন ব্যয়ের প্রায় ৩০ শতাংশই জ্বালানি ও তেল বাবদ হয়ে থাকে। এককভাবে এ খাতটি সবচেয়ে বেশি খরচের।
ইন্ডিগো বলছে, প্রায় ৫০টি আন্তর্জাতিক রুটের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে। এ ছাড়া তারা ঘোষণা দিয়েছে, ২৭ এপ্রিল থেকে অন্তত ৭ মে পর্যন্ত কাজাখস্তানে আলমাতিগামী এবং ২৮ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত উজবেকিস্তানের তাসখন্দগামী ফ্লাইটগুলো বাতিল করা হয়েছে।
ভারতীয় বিমান সংস্থার এক পাইলট রয়টার্সকে বলেন, পাকিস্তানের আকাশসীমায় নিষেধাজ্ঞার কারণে বিমান সংস্থাগুলোকে নতুন করে উড়ান সময় নিয়ে হিসাব-নিকাশ করতে হবে। পাইলট ও ক্রুদের রোস্টারও পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। অন্য এক নির্বাহী বলেন, তাঁর সংস্থার কর্মীরা এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য গত বৃহস্পতিবার অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করেছেন।
দুই কর্মকর্তার কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
ফ্লাইট অ্যাওয়ারের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার ইন্ডিগোর ৬ই১৮০৩ ফ্লাইটটির (নয়াদিল্লি থেকে আজারবাইজানের বাকু) গন্তব্যে পৌঁছাতে ৫ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট লেগেছে। পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ থাকায় তাদের বিকল্প একটি দীর্ঘ রুট ব্যবহার করতে হয়েছে। ফ্লাইটটি প্রথমে দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতের গুজরাট রাজ্যের দিকে এগিয়ে যায়, তারপর আরব সাগর পেরিয়ে উত্তর দিকে ঘুরে ইরানের ওপর দিয়ে আজারবাইজানে পৌঁছায়। অথচ গত বুধবার যখন ফ্লাইটটি পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করেছিল, তখন একই যাত্রা সম্পূর্ণ করতে সময় লেগেছিল মাত্র ৫ ঘণ্টা ৫ মিনিট।
পাকিস্তান ঘোষণা করেছে, তাদের আকাশসীমা ২৩ মে পর্যন্ত ভারতের জন্য বন্ধ থাকবে।
২০১৯ সালে পাকিস্তান প্রায় পাঁচ মাস আকাশসীমা বন্ধ রেখেছিল। ভারতের সরকারের তথ্য বলছে, ওই সময় এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো এবং অন্য বিমান সংস্থার সম্মিলিত ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র ইন ড য র জন য ফ ল ইট ইন ড গ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫