দীর্ঘদিন ধরিয়া অচল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) যন্ত্রটি বারংবার তাগাদার পরেও মেরামত না করিবার নেপথ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যেই মনস্তত্ত্ব কাজ করিতেছে, উহাকে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সংক্রামক ব্যাধি বলিলে ভুল হইবে না। উহার কারণ হইতে পারে এমআরআই সেবাপ্রত্যাশীদের বেসরকারি রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে পাঠাইয়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কিঞ্চিৎ বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা করা। অবশ্য অপেক্ষাকৃত ভদ্র ভাষায় স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলাও বলা যায়। যেই নামেই ডাকা হউক, ইহাকে ব্যাধি বলিবার কারণ হইল, শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে যদ্রূপ বলা হইয়াছে, যন্ত্রটির রোগ সারাইতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গত চার বৎসরে ৪২ দফায় পত্র লিখিবার পরও সদুত্তর মিলে নাই। চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্কসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআই পরীক্ষা জরুরি। এই পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হয়। অতএব স্বাস্থ্যসেবায় যন্ত্রটির গুরুত্ব বাড়াইয়া বলিবার প্রয়োজন নাই। উপরন্তু, চট্টগ্রাম অঞ্চলের কয়েক লক্ষ রোগীর একমাত্র ভরসার নাম ২২ শত শয্যার চমেক হাসপাতাল, যথায় প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় চার সহস্র। প্রতিদিন শুধু বহির্বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ করিয়া থাকেন আরও তিন সহস্র রোগী। এই সকল রোগীর মধ্যে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগীকে এমআরআই পরীক্ষার জন্য পাঠাইয়া থাকেন বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকগণ। প্রসঙ্গত, প্রতিবেদনমতে চমেকে মাত্র ৩ সহস্র টাকায় এমআরআই পরীক্ষা সম্ভব হইলেও বেসরকারি হাসপাতালে উহার জন্য গুনিতে হয় ৮ হইতে ১৫ সহস্র টাকা। রোগীদের এই পকেট কাটিবার ব্যবস্থা কি অকারণেই? সন্দেহ করিবার অবকাশ যথেষ্ট যে, রোগীদের যতই কষ্ট হউক, এই বাবদ প্রাপ্ত কমিশন চমেকের কেউ যদ্রূপ পাইয়া থাকেন তদ্রুপ মন্ত্রণালয়েও উহার ভাগ যাইবার কথা। অন্যথায় এইরূপ গুরুতর চিকিৎসাযন্ত্র লইয়া দীর্ঘসূত্রতার হেতু কী? 

সরকারি স্বাস্থ্যসেবাকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছাইয়া দিবার দাবি এই দেশে দীর্ঘদিনের। জটিল যেই কোনো রোগ তো বটেই, সামান্য অসুখেও অনেককে রাজধানীমুখী হইতে হয়। কিন্তু এই দাবি যে বরাবরই উপেক্ষিত রহিয়াছে, তাহার প্রমাণ হইল, চমেক হাসপাতালের ন্যায় বিভাগীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রেও মাত্র একটা এমআরআই যন্ত্র বসানো হইয়াছে। যন্ত্রটি নষ্ট হইবার চার বৎসর পরও মেরামত না করিবার পশ্চাতেও অভিন্ন মানসিকতা কাজ করিয়াছে। অনস্বীকার্য, এই সময়ে সমগ্র দেশে বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়াছে। ইহাও সত্য, প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির অভাবে একদিকে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান লইয়া বহু প্রশ্ন জন্ম লইয়াছে, অন্যদিকে ইহা অনেকাংশে নিরীহ রোগীদের পকেট কাটিবার একপ্রকার যন্ত্রে পরিণত হইয়াছে। এই ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, এমনকি নীতিনির্ধারকেরাও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছেন। সামগ্রিকভাবে জনগণের স্বাস্থ্য অধিকারের প্রতি তাহাদের অবহেলা ও উপেক্ষাই ইহার জন্য প্রথমত দায়ী। আলোচ্য এমআরআই যন্ত্র যথাসময়ে সারাই না হইবার মধ্যে যাহা পুনরায় পরিস্ফুট হইয়াছে। স্মরণে রাখিতে হইবে, চমেক কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, যন্ত্রটি মেরামতে মাত্র সাত কোটি টাকা প্রয়োজন। অতএব অর্থের অভাব নহে, অন্য কিছু এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

আশার বিষয় হইল, চমেক হাসপাতালের পরিচালক বলিয়াছেন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন শেষে এক সপ্তাহের মধ্যে যন্ত্রটি পুনরায় সচল হইবে। আমরাও ইহাই প্রত্যাশা করি। কিন্তু এই ঘটনা হইতে প্রাপ্ত শিক্ষা কাজে না লাগাইলে সমস্যা যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থাকিয়া যাইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব সরক র ব যবস থ পর ক ষ র জন য হইয় ছ সহস র

এছাড়াও পড়ুন:

তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।

উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।

ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।

এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ