প্রযুক্তির উন্নতির কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যোগাযোগ ও বিনোদনের ধারা বদলে গেছে। প্রযুক্তির বিকাশে যেমন মানুষের কাছে ব্যাপক সুযোগ এসেছে, তেমনি এর অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলাদেশের বিশাল যুবসমাজ যথাযথ প্রশিক্ষণ, প্রেরণা ও নীতিগত সহায়তা পেলে নতুন মিডিয়ার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে বহুমাত্রিকভাবে এগিয়ে নিতে পারবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাতাদের এখন টিকে থাকতে হলে ডিজিটাল মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই।

নিউ মিডিয়া বিষয়ক বোঝাপড়া নিয়ে টেলিভিশন ও ডিজিটাল মাধ্যমের নির্মাতাদের প্রতিষ্ঠান ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের আয়োজিত এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়ার সময় এ মন্তব্য করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদ রায়হান। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতির সেমিনার কক্ষে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট নির্মাতা ও চলচ্চিত্রবিষয়ক শিক্ষক মতিন রহমান, অনিমেষ আইচ, মুশফিকুর রহমান ও গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রশিক্ষণ ও আর্কাইভবিষয়ক সম্পাদক গাজী আপেল মাহমুদ। সঞ্চালনা করেন নির্মাতা মোস্তফা মনন।

শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, নির্মাতাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে গিল্ড বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন মাধ্যম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা তুলে ধরতে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের অবস্থা, কী করণীয়—এসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে। নির্মাতারা এ থেকে মূল্যবান দিকনির্দেশনা পাবেন।

‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক দীর্ঘ মূল প্রবন্ধে শহীদ রায়হান বলেন, নতুন মিডিয়া যোগাযোগের ধরন বদলে দিয়েছে। আগের একমুখী যোগাযোগের স্থানে এখন দ্বিমুখী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। দর্শকেরা এখন শুধুই দর্শক নন। তাঁরা তাঁদের মন্তব্য, মতামত দিতে পারেন। দর্শকেরা এখন ক্রমেই ভোক্তা থেকে নির্মাণেরও অংশ হয়ে উঠছেন। নির্মাতাদের সফল হতে হলে দর্শকদের এই মনস্তত্ত্ব সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হবে। প্রযুক্তির যেমন দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, দর্শকদের মনস্তত্ত্বেরও তেমনি দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। এ জন্য নির্মাতাদের সৃজনশীলতা, মৌলিক চিন্তার সক্ষমতার সঙ্গে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ঝুঁকি নেওয়ারও সাহস থাকতে হবে।

প্রবন্ধে বলা হয়, ভবিষ্যৎ যে ডিজিটাল মাধ্যমের, তা এখন নিশ্চিত। নির্মাতা হিসেবে নেতৃত্ব দিতে হলে এর পরিবর্তনশীল চরিত্রকে বুঝতে ও আলিঙ্গন করতে হবে। বিশ্বপ্রবণতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। নিজের দেশে এর যথোপযুক্ত বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে।

আলোচনা পর্বে মতিন রহমান বলেন, নতুন মিডিয়া কেবল টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ নয়, এটা একটা বড় সুযোগ। এর মাধ্যমে সবার জন্য দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থান করেও যে কেউ তার প্রতিভা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে পারবেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ের বইপুস্তকের অভাব রয়েছে। পাঠ্যসূচিতে নতুন মিডিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।

চলচ্চিত্র নির্মাতা অনিমেষ আইচ তাঁর বক্তব্যে দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কাজে নিজেদের পরিচয়কে স্পষ্ট করে তুলে ধরা প্রয়োজন।’

ওই সেমিনারে চলচ্চিত্র নির্মাতা মুশফিকুর রহমান কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে কারিগরি দক্ষতা অর্জনের বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নত ন ম ড য় চলচ চ ত র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ