টিকে থাকতে হলে ডিজিটাল মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই
Published: 26th, April 2025 GMT
প্রযুক্তির উন্নতির কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও যোগাযোগ ও বিনোদনের ধারা বদলে গেছে। প্রযুক্তির বিকাশে যেমন মানুষের কাছে ব্যাপক সুযোগ এসেছে, তেমনি এর অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলাদেশের বিশাল যুবসমাজ যথাযথ প্রশিক্ষণ, প্রেরণা ও নীতিগত সহায়তা পেলে নতুন মিডিয়ার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে বহুমাত্রিকভাবে এগিয়ে নিতে পারবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাতাদের এখন টিকে থাকতে হলে ডিজিটাল মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই।
নিউ মিডিয়া বিষয়ক বোঝাপড়া নিয়ে টেলিভিশন ও ডিজিটাল মাধ্যমের নির্মাতাদের প্রতিষ্ঠান ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের আয়োজিত এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়ার সময় এ মন্তব্য করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা শহীদ রায়হান। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতির সেমিনার কক্ষে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট নির্মাতা ও চলচ্চিত্রবিষয়ক শিক্ষক মতিন রহমান, অনিমেষ আইচ, মুশফিকুর রহমান ও গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রশিক্ষণ ও আর্কাইভবিষয়ক সম্পাদক গাজী আপেল মাহমুদ। সঞ্চালনা করেন নির্মাতা মোস্তফা মনন।
শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, নির্মাতাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে গিল্ড বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন মাধ্যম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা তুলে ধরতে এই সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের অবস্থা, কী করণীয়—এসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে। নির্মাতারা এ থেকে মূল্যবান দিকনির্দেশনা পাবেন।
‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক দীর্ঘ মূল প্রবন্ধে শহীদ রায়হান বলেন, নতুন মিডিয়া যোগাযোগের ধরন বদলে দিয়েছে। আগের একমুখী যোগাযোগের স্থানে এখন দ্বিমুখী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। দর্শকেরা এখন শুধুই দর্শক নন। তাঁরা তাঁদের মন্তব্য, মতামত দিতে পারেন। দর্শকেরা এখন ক্রমেই ভোক্তা থেকে নির্মাণেরও অংশ হয়ে উঠছেন। নির্মাতাদের সফল হতে হলে দর্শকদের এই মনস্তত্ত্ব সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হবে। প্রযুক্তির যেমন দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, দর্শকদের মনস্তত্ত্বেরও তেমনি দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। এ জন্য নির্মাতাদের সৃজনশীলতা, মৌলিক চিন্তার সক্ষমতার সঙ্গে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ঝুঁকি নেওয়ারও সাহস থাকতে হবে।
প্রবন্ধে বলা হয়, ভবিষ্যৎ যে ডিজিটাল মাধ্যমের, তা এখন নিশ্চিত। নির্মাতা হিসেবে নেতৃত্ব দিতে হলে এর পরিবর্তনশীল চরিত্রকে বুঝতে ও আলিঙ্গন করতে হবে। বিশ্বপ্রবণতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। নিজের দেশে এর যথোপযুক্ত বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
আলোচনা পর্বে মতিন রহমান বলেন, নতুন মিডিয়া কেবল টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ নয়, এটা একটা বড় সুযোগ। এর মাধ্যমে সবার জন্য দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থান করেও যে কেউ তার প্রতিভা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাতে পারবেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ের বইপুস্তকের অভাব রয়েছে। পাঠ্যসূচিতে নতুন মিডিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।
চলচ্চিত্র নির্মাতা অনিমেষ আইচ তাঁর বক্তব্যে দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কাজে নিজেদের পরিচয়কে স্পষ্ট করে তুলে ধরা প্রয়োজন।’
ওই সেমিনারে চলচ্চিত্র নির্মাতা মুশফিকুর রহমান কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে কারিগরি দক্ষতা অর্জনের বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নত ন ম ড য় চলচ চ ত র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।