দেশের দুর্ভাগ্য, পেহেলগামের ঘটনায় সবর্দলীয় সভায় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকলেন না: কংগ্রেস সভাপতি
Published: 28th, April 2025 GMT
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামের হামলা ‘কাশ্মীরিয়ৎ’–এর ওপর আক্রমণ। জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে আজ সোমবার সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা এক প্রস্তাবে এ কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবে এ কথাও বলা হয়েছে, ওই ঘৃণ্য ও জঘন্য আক্রমণের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার কূটনৈতিক স্তরে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার তা অনুমোদন ও পূর্ণ সমর্থন করছে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বদলীয় বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার অধিবেশনে প্রস্তাবটি পেশ করেন উপমুখ্যমন্ত্রী সুরেন্দ্র চৌধুরী। পেহেলগামের ঘটনায় নিহতদের স্মৃতিতে কিছু সময় নীরবতা পালন করা হয়। ওই হামলায় নিহত স্থানীয় ঘোড়াওয়ালা সৈয়দ আদিল হুসেন শাহর সাহসিকতা ও মানসিকতার বিশেষ উল্লেখ করে বলা হয়, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরীহ পর্যটকদের বাঁচাতে তিনি বীরের মতো প্রাণ দিয়েছেন। দেশের সংবিধানে যে মূল্যবোধের কথা বলা হয়েছে, ওই হামলা ছিল তার প্রতি আক্রমণ। কাশ্মীরি জনতার যাবতীয় মূল্যবোধ, মানবিকতা, সৌভ্রাতৃত্ববোধ, শালীনতা—এককথায় যা ‘কাশ্মীরিয়ৎ’ বলে পরিচিত, ওই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল তাতে আঘাত করা। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা।
পেহেলগামের হামলার পরদিন ভারত যা কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যেমন সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত রাখা, ভিসা বাতিল করা ও অন্যান্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ, প্রস্তাবে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়।
পেহেলগামের সন্ত্রাসী হানার পর কেন্দ্রীয় সরকার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিল। সেই বৈঠকে উপস্থিত সব বিরোধী নেতা এই সন্ধিক্ষণে সরকারের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর কথাও জানিয়েছিলেন। প্রত্যেকেই বলেছিলেন, পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকার যা উপযুক্ত মনে করবে, বিরোধীদের তাতে সম্মতি থাকবে।
কিন্তু সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর সেই অনুপস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সোমবার রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে এক অনুষ্ঠানে সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের দুর্ভাগ্য, সব দলের নেতারা পেহেলগাম নিয়ে ডাকা সভায় উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ব্যস্ত ছিলেন বিহারে ভাষণ দিতে।
খাড়গে বলেন, দেশ সবার আগে। তারপর দল বা ধর্ম। দেশের জন্য সবার জোটবদ্ধ থাকা জরুরি। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যখনই দেশ এগোতে থাকে, এ ধরনের লোকজন চেষ্টা করে তাদের পিছু টানতে। কংগ্রেসকে ওইভাবে দমানো সম্ভবপর নয়।
বিজেপির সমালোচনা করে খাড়গে বলেন, কংগ্রেস ঐকবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে, ওরা দেশকে ভাঙার চেষ্টা করে। কংগ্রেস সংবিধান রক্ষার কথা বলে, ওরা অমান্য করতে চায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব উপস থ ত য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ
রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ।