এর আগে তিনটি অভিযোগের তদন্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে তথ্যাদি চেয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এবার সেই তিনটিসহ নাজমুল হাসানের সাবেক বোর্ডের বিরুদ্ধে মোট ২৭টি অভিযোগের রেকর্ডপত্রের কপি বিসিবির কাছে চেয়েছে দুদক। আজ বিকেলে দেওয়া চিঠিতে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এসব রেকর্ডপত্র দুদকে জমা দিতে বলা হয়েছে।

আজ বিকেলে দুদকের কর্মকর্তারা আবারও বিসিবি কার্যালয়ে যান। সেখানেই নতুন ২৪টি বিষয়ে তদন্তের কথা বিসিবিকে জানান তাঁরা। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দুদকের উপপরিচালক মো.

সাইদুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে যে ২৭টি বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে পূর্বাচলে স্টেডিয়াম নির্মাণে পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়ার যাবতীয় কাগজ, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান সভাপতি থাকার সময়ে বিসিবির আয়–ব্যয়সংক্রান্ত অডিট প্রতিবেদন, আইসিসি ও এসিসির লভ্যাংশ–সংক্রান্ত নীতিমালার সত্যায়িত কপি, লজিস্টিকস ও প্রটোকল বাবদ খরচের বিবরণ, বিপিএল বাবদ খরচের বিবরণ, বিদেশি কোচ নিয়োগে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নাম-ঠিকানা, বিদেশি কোচ নিয়োগের নীতিমালা এবং সম্মানী বা বেতন-ভাতা পরিশোধের রেকর্ডের সত্যায়িত অনুলিপি, বিসিবির অর্থ বিভাগ, লজিস্টিকস ও বিপিএল দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য।

দুদক থেকে আরও চাওয়া হয়েছে ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০’ নামের প্রকল্পে ব্যয় করা অর্থের রেকর্ডপত্র ও নোটশিট, এ আর রাহমানের কনসার্ট–সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র ও নোটশিট, ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু বিপিএল আয়োজনে ব্যয় করা অর্থের রেকর্ডপত্র ও নোটশিট, অডিট ফার্মের তালিকা ও বিল পরিশোধ–সংক্রান্ত রেকর্ডের সত্যায়িত কপি, বিসিবির কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তালিকা, নাজমুল হাসান বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পালনের সময়ের বার্ষিক সাধারণ সভার খরচের রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি, তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ক্লাবগুলোর তালিকা এবং বাছাই কমিটির কার্যপরিধির সত্যায়িত কপি, ২০১২-১৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভার সংখ্যা এবং খাতভিত্তিক খরচের তালিকা ও অডিট প্রতিবেদন।

আরও পড়ুনতাইজুলকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত বোলার’ বললেন তামিম১ ঘণ্টা আগে

নাজমুল হাসান সভাপতি থাকাকালে বিসিবির টাকায় বিদেশে ভ্রমণকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের বিস্তারিত তালিকা, তাঁদের ব্যয়বিবরণী ও বিদেশভ্রমণ–সংক্রান্ত নীতিমালার সত্যায়িত কপিও চেয়েছে দুদক। ক্রিকেট ম্যাচ দেখার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহারের খরচের রেকর্ড এবং সভাপতির হেলিকপ্টার ব্যবহারের নীতিমালাসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি ছাড়াও ওই সময়ে স্টেডিয়াম নির্মাণ, সংস্কার ও শোভা বৃদ্ধি–সংক্রান্ত উন্নয়নকাজের তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট সব টেন্ডার ডকুমেন্ট থেকে বিল পরিশোধ পর্যন্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি দিতেও বলা হয়েছে বিসিবিকে।

বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র র কর ড খরচ র

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ