Samakal:
2025-06-16@04:09:34 GMT

কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া

Published: 28th, April 2025 GMT

কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া

বৈশাখের খরতাপে পুড়ছে দেশ। বৃষ্টিশূন্যতা ও বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় অধিক গরম লাগছে। ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলেও ভারী বর্ষণের দেখা নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ভারী বর্ষণ ছাড়া উত্তপ্ত ধরণি শীতল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তীব্র গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষ। দিনভর সূর্যের প্রখর তাপ আর রাতে গুমোট গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে সবার। এক পশলা বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো আকাশে চেয়ে আছে প্রাণিকুল। তীব্র তাপদাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস থাকলেও থেমে নেই যাপিত জীবনের কর্মতৎপরতা।
কঠিন খরতাপের পাশাপাশি বাঙালির জীবনে আনন্দের সূচনা হয় এ বৈশাখে। প্রকৃতি সঞ্চারিত হয় জীববৈচিত্র্যের সমাহারে। জারুল, সোনালু আর কৃষ্ণচূড়ার চোখ ধাঁধানো রূপ কাব্যময় হয়ে ওঠে। শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলো প্রাণ পেতে শুরু করে। জোয়ার আসে। শুধু নদীতে নয়, আসে মানুষের মনেও। প্রেমিক মন ধাবিত হয় মন হরণের আঙিনায়। কাঁচা আমের ঘ্রাণে মাতায় মন। দুরন্ত কিশোর দলের ছুটে বেড়ানো যেন প্রকৃতির আবাহন। বৈশাখ তাই কবিতার অসীম ক্ষেত্র। কখনও খরতাপ, কখনও বৃষ্টির হুংকার, আকাশজুড়ে মেঘের আনাগোনা আর বাতাসের খেলা প্রকৃতির এমন বৈচিত্র্য সবই সাহিত্যের অনুষঙ্গ। প্রকৃতির সূচনা, প্রকৃতির রোষ এবং প্রকৃতির দান কাব্যের ক্যানভাস। 
জীবনে নতুন দিনের গল্পের সূচনা করে বৈশাখ। প্রাণের স্পন্দন জাগায়। বর্ণিল আয়োজনে কবিতায় ঠাঁই পায় প্রেম, গান, সুর, উদ্দামতা আর ধেয়ে আসা কালবৈশাখী। কালবৈশাখী মানে কেবল ধ্বংস নয়, জীর্ণতার অবসান, দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্তির গান। ঝড়ের প্রলয়ংকরী রূপ, অশুভ বিনাশ। বসন্ত বিদায়ে প্রকৃতি রাজ করে বৈশাখে। কবিতায় ফুটে ওঠে বৈশাখের নান্দনিক রূপ ও প্রকৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতোই যেন বৈশাখ আসে– ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে/পার হয়ে যায় গোরু/পার হয় গাড়ি/দুই ধার উঁচু তার/ঢালু তার পাড়ি।’ 
রৌদ্রের খরতাপ, ঝড় আবার প্রশান্তির বৃষ্টি। মাঠে মাঠে ফসল, প্রকৃতির রুদ্ররূপ এবং ভয়ংকরের বন্দনা চলে। কাজী নজরুল ইসলাম তাই বলেছেন– ‘ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখী ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’ কালবৈশাখী কবিতায় লিখেছেন, ‘বারেবারে যথা কালবৈশাখী ব্যর্থ হল রে পুব-হাওয়ায়/দধীচি-হাড়ের বজ্র-বহ্নি বারেবারে যথা নিভিয়া যায়/কে পাগল সেথা যাস হাঁকি/বৈশাখী কালবৈশাখী!’ বৈশাখ মানে বাংলায় বিভেদ ভুলে একত্র হওয়ার মাস। বৈশাখ মাস ধর্ম-বর্ণ মিলেমিশে এক হয়ে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার মাস। 
কবি আল মাহমুদ ‘বোশেখ’ কবিতায় লিখেছেন, সেই পবনের কাছে আমার এই মিনতি/তিষ্ঠ হাওয়া, তিষ্ঠ মহা প্রতাপশালী/গরীব মাঝির পালের দড়ি ছিঁড়ে কি লাভ?/কি সুখ বলো গুঁড়িয়ে দিয়ে চাষির ভিটে? কবিতায় বৈশাখী ঝড়ের যে রুদ্ররূপ সেই রূপের কাছেই মিনতি করা হয়েছে যেন তার প্রতাপের কোপে অসহায়ের ক্ষতি না হয়। কালবৈশাখীর এ তীব্র ভয়ংকর রূপ ছাপিয়ে সমাজকে আলোর পথ ধরে সবাই এগিয়ে যাবে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে– এটাই প্রত্যাশা।
সুহৃদ ঢাকা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোর্স ইকবালের ডাকাতি