Samakal:
2025-11-03@07:56:27 GMT

কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া

Published: 28th, April 2025 GMT

কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া

বৈশাখের খরতাপে পুড়ছে দেশ। বৃষ্টিশূন্যতা ও বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় অধিক গরম লাগছে। ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলেও ভারী বর্ষণের দেখা নেই। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ভারী বর্ষণ ছাড়া উত্তপ্ত ধরণি শীতল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তীব্র গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষ। দিনভর সূর্যের প্রখর তাপ আর রাতে গুমোট গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে সবার। এক পশলা বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো আকাশে চেয়ে আছে প্রাণিকুল। তীব্র তাপদাহে জনজীবনে হাঁসফাঁস থাকলেও থেমে নেই যাপিত জীবনের কর্মতৎপরতা।
কঠিন খরতাপের পাশাপাশি বাঙালির জীবনে আনন্দের সূচনা হয় এ বৈশাখে। প্রকৃতি সঞ্চারিত হয় জীববৈচিত্র্যের সমাহারে। জারুল, সোনালু আর কৃষ্ণচূড়ার চোখ ধাঁধানো রূপ কাব্যময় হয়ে ওঠে। শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলো প্রাণ পেতে শুরু করে। জোয়ার আসে। শুধু নদীতে নয়, আসে মানুষের মনেও। প্রেমিক মন ধাবিত হয় মন হরণের আঙিনায়। কাঁচা আমের ঘ্রাণে মাতায় মন। দুরন্ত কিশোর দলের ছুটে বেড়ানো যেন প্রকৃতির আবাহন। বৈশাখ তাই কবিতার অসীম ক্ষেত্র। কখনও খরতাপ, কখনও বৃষ্টির হুংকার, আকাশজুড়ে মেঘের আনাগোনা আর বাতাসের খেলা প্রকৃতির এমন বৈচিত্র্য সবই সাহিত্যের অনুষঙ্গ। প্রকৃতির সূচনা, প্রকৃতির রোষ এবং প্রকৃতির দান কাব্যের ক্যানভাস। 
জীবনে নতুন দিনের গল্পের সূচনা করে বৈশাখ। প্রাণের স্পন্দন জাগায়। বর্ণিল আয়োজনে কবিতায় ঠাঁই পায় প্রেম, গান, সুর, উদ্দামতা আর ধেয়ে আসা কালবৈশাখী। কালবৈশাখী মানে কেবল ধ্বংস নয়, জীর্ণতার অবসান, দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্তির গান। ঝড়ের প্রলয়ংকরী রূপ, অশুভ বিনাশ। বসন্ত বিদায়ে প্রকৃতি রাজ করে বৈশাখে। কবিতায় ফুটে ওঠে বৈশাখের নান্দনিক রূপ ও প্রকৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতোই যেন বৈশাখ আসে– ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে/পার হয়ে যায় গোরু/পার হয় গাড়ি/দুই ধার উঁচু তার/ঢালু তার পাড়ি।’ 
রৌদ্রের খরতাপ, ঝড় আবার প্রশান্তির বৃষ্টি। মাঠে মাঠে ফসল, প্রকৃতির রুদ্ররূপ এবং ভয়ংকরের বন্দনা চলে। কাজী নজরুল ইসলাম তাই বলেছেন– ‘ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখী ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর।’ কালবৈশাখী কবিতায় লিখেছেন, ‘বারেবারে যথা কালবৈশাখী ব্যর্থ হল রে পুব-হাওয়ায়/দধীচি-হাড়ের বজ্র-বহ্নি বারেবারে যথা নিভিয়া যায়/কে পাগল সেথা যাস হাঁকি/বৈশাখী কালবৈশাখী!’ বৈশাখ মানে বাংলায় বিভেদ ভুলে একত্র হওয়ার মাস। বৈশাখ মাস ধর্ম-বর্ণ মিলেমিশে এক হয়ে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার মাস। 
কবি আল মাহমুদ ‘বোশেখ’ কবিতায় লিখেছেন, সেই পবনের কাছে আমার এই মিনতি/তিষ্ঠ হাওয়া, তিষ্ঠ মহা প্রতাপশালী/গরীব মাঝির পালের দড়ি ছিঁড়ে কি লাভ?/কি সুখ বলো গুঁড়িয়ে দিয়ে চাষির ভিটে? কবিতায় বৈশাখী ঝড়ের যে রুদ্ররূপ সেই রূপের কাছেই মিনতি করা হয়েছে যেন তার প্রতাপের কোপে অসহায়ের ক্ষতি না হয়। কালবৈশাখীর এ তীব্র ভয়ংকর রূপ ছাপিয়ে সমাজকে আলোর পথ ধরে সবাই এগিয়ে যাবে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে– এটাই প্রত্যাশা।
সুহৃদ ঢাকা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত