বাংলাদেশের মতো ছোট একটি দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা দেড়শর কম হবে না। এই সংখ্যা নির্বাচন ঘনিয়ে এলে হুহু করে বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে সংবাদে উঠে এসেছে, গত আট মাসে দেশে ২২টি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছে। আরও কয়েকটি জন্ম ঘোষণার অপেক্ষা করছে।

দল গঠন এখন পাড়ায় ক্লাব গঠনের চেয়েও সহজ। প্রেস ক্লাবে এক ঘণ্টার একটি সভা করে ১০-২০ হাজার টাকা খরচ করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করলেই একটি রাজনৈতিক দলের পত্তন হয়ে যায়। আগে লেটারহেড প্যাড করতে প্রেসে যাওয়া লাগত। এখন সেই পরিশ্রমটুকুও করতে হয় না। নীলক্ষেত কিংবা আরামবাগ এলাকায় কম্পিউটারের দোকান থেকে ১০০ টাকা খরচ করে লেটারহেড প্যাড বানিয়ে নেওয়া যায়। এবার নিজ বাসা, কোনো দর্জির দোকান কিংবা স্টেশনারি দোকানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিলে রাজনৈতিক দল হয়ে গেল। 

কোনো কোনো দলের আবার এটুকুও নেই। মাঝে মাঝে পত্রিকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো, ফেসবুকে পেজ খোলা, দু-একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া– মোটামুটি এটুকু করতে পারলে একটি দল হয়ে গেল। 

দলের সংখ্যা বৃদ্ধি শুধু নতুন দলের জন্মেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশে নেতৃত্বের কোন্দলের কারণেও দলসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিদ্যমান দলগুলোর নেতারা স্বার্থগত কারণে বিভক্ত হন। এরও ইতিহাস লম্বা। স্বাধীনতার আগে তো বটেই, পরেও ব্র্যাকেটবন্দি হওয়ার সেই চিত্র দেখা যায়। কতটা ভয়াবহ অবস্থা এই ব্র্যাকেটবন্দি হওয়ার চিত্র, তা দেখা যাবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকালে। ৫ আগস্টের আগে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৪টিই ভেঙে ব্র্যাকেটবন্দি হয়েছে। সুতরাং নতুন দল সৃষ্টিই দল বৃদ্ধির কারণ নয়। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বও দলসংখ্যা বৃদ্ধি করে। 

তবে দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে হলে কিছুটা কাঠখড় পোড়াতে হয়। এক-তৃতীয়াংশ জেলায় শাখা, কেন্দ্রে কমিটি ও কার্যালয়, ১০০ উপজেলা কিংবা পৌরসভায় কার্যালয় ও কমিটি, প্রতিটি শাখায় অন্তত ২০০ সমর্থক জোগানো, দলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি শর্ত পূরণ করতে পারলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হয়। উল্লেখ করার মতো এসব শর্ত পূরণ কিংবা আংশিক পূরণ করে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের আবেদন পড়ে আছে প্রায় ৮০টি। নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫০ ছাড়িয়েছে। আরও দু-একটি নিশ্চিতভাবে নিবন্ধন পাবে।

নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত দলগুলো নির্বাচন করতে পারবে দলগতভাবে। নির্বাচনে এত দল অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনী ফলাফল দেখে অবাধে দল সৃষ্টির অসারতা প্রমাণ হয়। নির্বাচনের পর দেখা যায়, অধিকাংশ দলের ২-৩ শতাংশ প্রার্থীও জামানত টেকাতে পারেন না। বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে জন্ম নেওয়া এত রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র বিএনপি ছাড়া কারও তৃণমূল পর্যন্ত এবং সারাদেশে কমিটি নেই। কোনো কোনো দল অস্তিত্বহীন এখন। 

তারপরও দল গঠন ও নেতা হওয়ার এই আগ্রহ কেন? আসলে ক্ষমতাই মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য যে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন কিংবা পার্লামেন্টে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন– সেটাই নয়; একটি দলের নেতা হিসেবে নানা সুযোগ-সুবিধা, শুভানুধ্যায়ীদের ‘সহযোগিতা’ কম নয়। 
নেতার পরিচিতির সুবিধা ভোগের একটি উদাহরণ মনে পড়ছে। একবার ব্যাংকে কীসের একটি চালান জমা দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। বেশ লম্বা লাইন। হঠাৎ দেখি একজন লাইন ছাড়া চালান জমা দিচ্ছেন। চালানের কাগজের আগে তিনি একটি ভিজিটিং কার্ড কাউন্টারে দিলেন। কৌতূহলে আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি, ভিজিটিং কার্ডে লেখা ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী’। যতটুকু মনে পড়ে, তিনি পরবর্তী সময়ে একটি রাজনৈতিক দলও গঠন করেছিলেন। 

তাই নির্বাচন কমিশন বেঁধে দেওয়া নিবন্ধন আইনকে শিথিল করা নয়, বরং আরও কঠোর করাই উত্তম বলে মনে করি। ইতোমধ্যে কিছু নিবন্ধনপ্রার্থী দল নিবন্ধন আইনকে শিথিল করার যে দাবি জানিয়েছে, তা বিবেচনাযোগ্য নয়। একটি দলকে মন্তব্য করতে দেখা গেছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাও নাকি কঠিন কাজ। একটি রাজনৈতিক দল যদি একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টই খুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে, তাহলে তারা রাষ্ট্র পরিচালনার মতো কঠিন কাজ কীভাবে করবে? 
যারা মনে করেন– দল বৃদ্ধিতে সমস্যা নেই; জনসমর্থন না পেলে হারিয়ে যাবে; দল টিকবে কি না-টিকবে, ভোটেই তা নির্ধারিত হবে। বিনয়সহ বলছি, হারিয়ে যাওয়া পর্যন্ত যে ফল তারা গণতন্ত্রকে উপহার দেবে, তার দায় সইতে হবে আম জনতাকে। তাই দেখেশুনে দলের সংখ্যা সীমিত রাখাই উত্তম।

মোস্তফা হোসেইন: সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত দল র স খ য ন বন ধ ত

এছাড়াও পড়ুন:

আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।

সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১

গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২

এশিয়া কাপ ক্রিকেট

আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক

অ্যাথলেটিকস

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২

ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১

নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২

ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ