আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ঝিনাইদহে প্রাণ গেছে একজনের। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত ২১ জন। বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার ফুরসুন্দি ইউনিয়নের দিঘিরপাড় গ্রামে এ সংঘর্ষ হয়। নিহত মোশাররফ হোসেন মোল্লা (৪৫) দিঘিরপাড়ের সমশের আলী মোল্লার ছেলে। তিনি পেশায় কৃষক। স্থানীয়রা জানান, বিবদমান দুটি পক্ষই আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। ৫ আগস্টের পর তারা বিএনপিতে যোগ দেয়। 

জানা গেছে, মোশাররফের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল একই গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার। তারা দু’জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর মোশাররফ স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহাবুর রহমান ও আলিম উদ্দিনের পক্ষে যোগ দেন। কুদ্দুস সমর্থন করেন তাদের প্রতিপক্ষ রেজোয়ান, জাহিদ বিশ্বাস ও মাহাবুর আলী মল্লিকের পক্ষকে।

এলাকাবাসী জানায়, দু’জনই বিএনপিতে যোগ দেওয়ায় জমির বিরোধ দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক রঙ পায়। বুধবার সকালেই তাদের লোকজন দিঘিরপাড় গ্রাম ও পাশের মাগুরা জেলার সানদা-লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার দিকে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২১ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে মোশাররফসহ জাহাঙ্গীর, নাহিদ, মিজানুর, মোহাম্মদ আলী, আনিচুর, মতিয়ার, জাহানারা ও সুফিয়া বেগমকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক মোশাররফ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যরা সেখানে চিকিৎসাধীন। 

হাসপাতালের আরএমও ডা.

আশরাফুজ্জামান সজীব বলেন, মোশাররফ হোসেনের শরীরে গুরুতর আঘাত ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন। আহত অনেকের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

মোশাররফের ভাবি আন্না বেগমের ভাষ্য, ‘দুই পক্ষের মধ্যে তিন-চার দিন ধরেই ঝামেলা চলছিল। আমাদের লোকজন মাঠে কাজে যেতেও পারে না। সকালে প্রথমে ওদের কয়েকশ লোক আমাদের মাঠে কামলাদের (শ্রমিক) ওপর আক্রমণ করে। তারা পালিয়ে গেলে বাড়িতে এসে মোশাররফ ভাইকে কুপিয়ে মেরে রেখে যায়। তাদের সঙ্গে মাগুরার সানদা গ্রামের অনেক মানুষ ছিল।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিএনপি নেতা শাহাবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জাহিদ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমার লোকজন মারামারি করেছে, এটা মিথ্যা কথা। যে ঘটনায় মোশাররফ মারা গেছেন, তা সামাজিক বিরোধ।’

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বিকেলে বলেন, ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কাউকে আটক করা হয়নি। এখন পরিস্থিতি শান্ত।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ ব এনপ ন হত ম শ ররফ স ঘর ষ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

বিগ-বির মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ

এক দশক আগে বঙ্গোপসাগর ঘিরে বাংলাদেশের জন্য বিগ-বি নামে পরিচিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট গ্রহণ করেছিল জাপান। বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প প্রবৃদ্ধির ওই উদ্যোগে রয়েছে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎ প্রকল্প আর আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার বিকাশ। মে মাসের শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরে বিগ–বির মাধ্যমে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। তাঁর জাপান সফরের আগে টোকিওতে ১৫ মে অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জাপানের আলোচনায় কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

১৫ মে টোকিওতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং জাপানের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।  
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে কোন কোন বিষয়গুলো ১৫ মের আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পাবে, তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফরসহ সচিব পর্যায়ের সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিগ–বিতে সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসা, বিনিয়োগ, নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন সফর নিয়ে আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, টোকিওতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয়। আর দ্বিতীয় ভাগে থাকবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি।

আঞ্চলিক বিষয়াদিতে জাপানের বিগ–বি নিয়ে আলোচনা হবে। এ সময় ঢাকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের বাস্তবতা তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে এ প্রকল্প সামনে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও বলা হবে। পরে ভারত যদি এর সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, তবে তার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হবে।

বিগ–বির সঙ্গে ২০২৩ সালে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে যুক্ত করে জাপান। কিন্তু ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে চরম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক। এমন এক প্রেক্ষাপটে বিগ–বিকে বিশেষ করে সংযুক্তিকে বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নেওয়ার পরিকল্পনায় আপাতত একটা ধাক্কা এসেছে। এ নিয়ে জাপান নানাভাবে নিজেদের অস্বস্তির বিষয়টি বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বিগ–বি জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অগ্রাধিকার প্রস্তাব হওয়ায় এটিতে বিশেষ গুরুত্ব আছে টোকিওর। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আগ্রহী জাপান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরে জাপান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিবিড় করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কাছ থেকে সমরাস্ত্র বিক্রির ওপর কয়েক বছর ধরে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে জাপান।

বাংলাদেশকে ২০২৩ সালে জাপানের সরকারি নিরাপত্তা সহায়তায় (ওএসএ) যুক্ত করা হয়েছে। মূলত জাপান নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে এই কাঠামো তৈরি করেছে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ওই দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা দিয়ে থাকে। ওএসএর মাধ্যমে জাপান একটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দিয়ে থাকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ