‘যে সরকারের ভরসায় ঘুরতে গিয়েছিলাম, তারা আমাদের অনাথের মতো ফেলে গেছে’
Published: 2nd, May 2025 GMT
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল ঐশান্যা দ্বিবেদীর চোখের সামনেই তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার কথা মনে করে ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। কথা বলতে গিয়ে বারবার গলা ধরে আসছিল তাঁর।
বাড়িভর্তি মানুষের মধ্যে এক কোণে চুপচাপ বসে ছিলেন ঐশান্যা। তাঁর মতোই অবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদের। একমাত্র ছেলে শুভম দ্বিবেদীকে হারিয়েছে এই পরিবার। তাঁরা উত্তর প্রদেশের কানপুরের বাসিন্দা।
শুভমের স্ত্রী ২৯ বছর বয়সী ঐশান্যা বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের দেশ, আমাদের সরকার আমাদের ওখানে (পেহেলগামে) অনাথের মতো ছেড়ে দিয়েছিল। যাদের ওপর ভরসা করে আমরা ওখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম, তারা সেই সময় ওখানে উপস্থিত ছিল না।’
হামলার সময়কার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ঐশান্যা বলেন, ‘কোনো নিরাপত্তারক্ষী ছিল না, কোনো জওয়ান ছিল না। ঘরের ভেতরে বাবা-মা আমাদের রক্ষা করতে পারেন। কিন্তু ঘরের বাইরে আমাদের রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের।’
ধীরে ধীরে লোকে শুভমকে ভুলে যাবে
সেলফের ওপর রাখা প্রয়াত স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে ঐশান্যার গলা ধরে আসে। তিনি বলছিলেন, ‘আমার নিজের চোখের সামনে আমার ভালোবাসা, আমার স্বামী, আমার পৃথিবীকে শেষ হয়ে যেতে দেখেছি। কাউকে যেন এমন দিন না দেখতে হয়।’
তারপর সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে ঐশান্যা দ্বিবেদী বলেন, ‘এই দেশের ভুলের কারণে, সরকারের ব্যর্থতার জন্য আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তাই শুভমকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হোক।’
ঐশান্যা বলতে থাকেন, ‘আর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রথম গুলিটা শুভমের লেগেছিল। তাই সেই সময় উপস্থিত অনেকে ওখান থেকে পালানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। যাঁরা সেখান থেকে নিরাপদে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছেন, যাঁরা বলতে পারছেন আমরা বেঁচে গেছি, সেটা একমাত্র শুভমের জন্যই সম্ভব হয়েছে।’
ঐশান্যা দ্বিবেদীসহ গোটা পরিবার দাবি করেছে, ঘটনার দিন শুভম দ্বিবেদীকেই প্রথমে গুলি করা হয়েছিল।
কোনো নিরাপত্তারক্ষী ছিল না, কোনো জওয়ান ছিল না। ঘরের ভেতরে বাবা-মা আমাদের রক্ষা করতে পারেন। কিন্তু ঘরের বাইরে আমাদের রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারেরঐশান্যা দ্বিবেদী, হামলায় নিহত শুভম দ্বিবেদীর স্ত্রীদেশের সব নাগরিকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ঐশান্যা, যাতে তাঁর প্রয়াত স্বামীকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘শুভমের জন্য অনেক জীবন রক্ষা পেয়েছে। তাই তাঁকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার এই দাবিতে সবাই যাতে আমাদের পাশে দাঁড়ান, সেই অনুরোধ জানাচ্ছি। শুভম শহীদের মর্যাদা না পেলে ওকে কিছুদিনের মধ্যেই সবাই ভুলে যাবে।’
‘আমার ছেলের বেড়াতে যাওয়ার শখ ছিল’
শুভমের বাবা সঞ্জয় কুমার দ্বিবেদী বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের ছেলে ঘুরতে খুব ভালোবাসত। বিশ্বের বহু দেশ ঘুরেছে। সব জায়গা থেকেই নিরাপদে ঘরে ফিরে এসেছে। এটা তো আমাদের দেশ ছিল। নিজের দেশেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।’
দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নিরাপত্তার বিষয়ে আবেদন জানিয়েছেন সঞ্জয় কুমার।
শুভম দ্বিবেদীর মা অন্য একটা ঘরে একা বসেছিলেন। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না তিনি।
ছেলের মৃত্যুর পর থেকে সঞ্জয় কুমার দ্বিবেদীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। কারও সঙ্গেই খুব একটা কথা বলেন না তিনি।
তিন–চার বছর আগে বাবার সিমেন্টের ব্যবসার পুরো দায়িত্ব নিয়েছিলেন শুভম। তিনি এমবিএ করেছেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিয়েও করেছিলেন ঐশান্যাকে। মধ্যপ্রদেশের ওরছায় ‘ডেসটিনেশন ওয়েডিং’ করেন তাঁরা।
ঐশান্যা দ্বিবেদীসহ গোটা পরিবার দাবি করেছে, ঘটনার দিন শুভম দ্বিবেদীকেই প্রথমে গুলি করা হয়েছিল।এই নববিবাহিত যুগলের বিয়ের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে। পরিবারের সবাই যে কতটা খুশি ছিলেন, তা ওই সব ছবি ও ভিডিওতে স্পষ্ট।
একটা ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে শুভমের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ঐশান্যার। প্রথম দেখা হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর।
সেই দিনের কথা স্মরণ করে ঐশান্যা দ্বিবেদী বলেন, ‘গত ছয়-সাত মাসে শুভম আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে। সেই সব স্মৃতি আঁকড়ে আমি আমার বাকি জীবনটা এই বাড়িতেই কাটিয়ে দেব।’
‘রাগ ছিল সরকারের ওপর, মারা হয়েছে নিরীহ মানুষকে’
ঐশান্যা জানান, শুভম দ্বিবেদীর পছন্দের খাবারের তালিকায় ছিল ‘ইনস্ট্যান্ট নুডলস’।
গত ১৭ এপ্রিল প্রথম পুরো পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ি ফেরার কথা ছিল ২৩ এপ্রিল।
ফিরে আসার আগের দিন, ২২ এপ্রিল পেহেলগামে ঘুরতে যান তাঁরা। যেদিন শুভম দ্বিবেদীকে হত্যা করা হয়, সেদিনই ছিল কাশ্মীরে দ্বিবেদী পরিবারের শেষ দিন।
ভ্রমণের প্রস্তুতির কথা মনে করে তাঁর স্ত্রী বলেছেন, ‘বিয়ের পর শুভম এক বছরে দুটি ফ্যামিলি ট্রিপ (পারিবারিক ভ্রমণের) পরিকল্পনা করেছিল। এটাই ছিল আমাদের প্রথম পারিবারিক ভ্রমণ।’
ঐশান্যা বলেন, ‘কোথায় বেড়াতে যাওয়া হবে, সেটা ঠিক করতে সবার ভোট নেওয়া হয়েছিল। সবাই মিলে কাশ্মীরকে বেছে নিয়েছিলাম। আমরা জানতাম না, কাশ্মীর আমাদের জন্য এতটা ভয়ংকর হয়ে উঠবে।’
নিহত শুভমের স্ত্রী বলেন, ‘সরকার তো বলে কাশ্মীর এখন নিরাপদ। সেখানে ৩৭০ ধারা বিলোপ করা হয়েছে। কোনোরকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। জানতাম না যে আমাদের পৃথিবী সেখানে শেষ হয়ে যাবে।’
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলায় নিহত শুভমের বাড়িতে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র হয় ছ ল র জন য পর ব র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নীল সমুদ্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নীল বেদনা, ভারত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
অনুমিত চিত্রনাট্যই যেন অনুসরণ করল মুম্বাইয়ের ফাইনাল ম্যাচ। ভারতের জার্সি গায়ে দর্শকে ঠাসা গ্যালারি রূপ নিল নীল সমুদ্রে। ২২ গজে আরও একবার ভারতের আধিপত্য, শাসন। যেন শিরোপার পায়চারি অনেক আগের থেকেই।
ব্যাটিংয়ে পর্বত ছুঁই-ছুঁই রান। এরপর স্পিনে ফুল ফোটালেন স্পিনাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াই করল সাধ্যের সবটুকু দিয়ে। ব্যাটে-বলে সহজে হাল ছাড়ল না তারাও। হৃদয় জিতলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাত্তাই পেল না। ভারতের শক্তি-সামর্থ্যের গভীরতার কাছে হার মানতেই হলো প্রোটিয়া নারীদের।
আরো পড়ুন:
৪১১ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৯ রানে হারল জিম্বাবুয়ে
কেন বিপিএল থেকে বাদ পড়ল চিটাগং কিংস
মুম্বাইয়ের নাভি স্টেডিয়ামের নীল সমুদ্রে সব আতশবাজি আজ রাতে ফুটল ভারতের বিশ্বকাপ উদ্যাপনে। প্রথমবার ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডেতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ৫২ রানের বিশাল জয় বুঝিয়ে দেয় হারমানপ্রীত কৌর, জেমিমা রদ্রিগেজ, দীপ্তি শর্মা কিংবা শেফালি বার্মা, স্মৃতি মান্ধানা, রিচা ঘোষরা ২২ গজকে কতটা আপন করে নিয়েছেন। শিরোপা জয়ের মঞ্চে ছাড় দেননি একটুও। ২০০৫ ও ২০১৭ বিশ্বকাপে যে ভুলগুলো হয়েছিল...সেগুলো আজ ফুল হয়ে ঝরল।
বৃষ্টি বাঁধায় বিঘ্ন ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের স্কোর পায় ভারত। ৪৫.৩ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রান করতে পারে প্রোটিয়া নারীরা। নাডিন ডি ক্লার্ক শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হলেন, স্টেডিয়ামের প্রায় ষাট হাজার ভারতীয় সমর্থকদের মুখে একটাই স্লোগান, চাক দে ইন্ডিয়া।
ওই জনসমুদ্রের স্লোগান, ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’।
বিস্তারিত আসছে …
ঢাকা/ইয়াসিন