বন্দরে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ জখম
Published: 2nd, May 2025 GMT
বন্দরে বাড়ি সিমানা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলায় ৫ মাসের অন্তঃসত্বা গৃহবধূ আমেনা বেগম (২৫) মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছে। স্থানীয়রা আহত গৃহবধূকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করেছে।
এ ঘটনায় আহত গৃহবধূ মা ফেরদৌসি বেগম বাদী হয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার ওই দিন দুপুরে হামলাকারি লেডি সন্ত্রাসী হাফেজা বেগম, আরমান, জুম্মান, রোজিনা, হালিমা, ইয়াসমিন ও নাজিম উদ্দিনের নাম উল্লেখ্য করে আরো ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে বন্দর থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এর আগে শুক্রবার (২ মে) সকাল ১১টায় বন্দর উপজেলার ঘারমোড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগে বাদি উল্লেখ করেন, একই এলাকার নাজিম উদ্দিন মিয়ার স্ত্রী হাফেজা বেগমের দীর্ঘ দিন ধরে বাড়ি সিমানা সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এর ধারাবাহিকতা শুক্রবার (২ মে) সকাল ১১টায় বন্দর উপজেলার ঘারমোড়া সাকিনস্থ আমাদের বসত বাড়ীতে অবস্থানকালে আমার স্বামীর পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদীদের সহিত বিরোধ থাকায় স্থানীয় গন্যমান্য ও জনপ্রতিনিধিগন বিরোধীয় সম্পত্তির বিষয়ে সমাধানের জন্য উভয় পক্ষের সীমানা নির্ধারন করে দেন।
আমরা আমাদের সীমানা পিলার স্থাপনের সময় সবার উপস্থিতেতে বিবাদীগন পূর্ব পরিকল্পনা বেআইনী জনতাবদ্ধে অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হইয়া নাজিম উদ্দিন মিয়ার হুকুমে অন্যান্য বিবাদীগন অভিযোগের বাদিনীসহ তার পরিবারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করিতে থাকে।
অভিযোগের বাদিনী বিবাদীদের গালিগালাজ করিতে নিষেধ করিলে বিবাদীগন ক্ষিপ্ত হইয়া বাদিনী ফেরদৌসি বেগম এবং তার ৫ মাসের গর্ভবতী মেয়ে আমেনা (২৫)কে উল্লেখিত বিবাদীগন এলোপাথারী কিল ঘুষি ও লাথি মারিয়া শরীরের বিভিন্নস্থানে নিলাফুলা জখম করে।
বিবাদী হাফেজা বেগম বাদিনী মেয়ে আমেনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে দুই হাত দিয়া গলা চেপে ধরে মেরে ফেলার চেষ্টা করলে আমার মেয়ে অনেক কষ্টে জীবনের রক্ষা পায়।
বাদিনী মেয়ে মাটিতে পড়িয়া গেলে বিবাদী আরমান ও জুম্মান তার মেয়ের পরনের জামা কাপড় ছিড়ে ফেলে শ্লীলতাহানী করে। আমাদের ডাক চিৎকারে আমার আত্মীয়-স্বজনরা আগাইয়া আসিলে বিবাদীগন তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করিয়া তাদের নিকট হইতে তিনটি এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল এবং বিবাদীগন আমার মেয়ে আমেনার এর গলায় পরিহিত সোনার চেইন ওজন আট আনা জোড়পূর্বক নিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মুখে বিবাদীগন আমাদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও প্রান নাশের হুমকি প্রদান করিয়া ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ গ হবধ আম দ র গ হবধ
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।