গত সপ্তাহে বিবদমান কাশ্মীর অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান উত্তেজনাকর পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী শক্তি ভয়াবহ সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে। উভয় পক্ষ সীমান্তে গুলি চালিয়েছে; কূটনৈতিক কর্মীদের বহিষ্কার করেছে; স্থলসীমান্ত পাড়ি বন্ধ রেখেছে। এ ছাড়া দেশ দুটি সামরিক মহড়া চালিয়েছে এবং বাণিজ্য স্থগিত করেছে। গত ৩০ এপ্রিল একজন শীর্ষ পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে নয়াদিল্লি আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালাবে। এরই মধ্যে দুই পক্ষের গুলি চালানোর মাত্রা বেড়েছে। 

এই সংকেত ২০১৯ সালে গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে বেশ মিলে যায়। তখন পাকিস্তানভিত্তিক একটি ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর হামলায় ভারত বিমান হামলা চালিয়েছিল এবং পরে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা থেমে যায়। ফলে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ভারতের এ ধরনের হামলার পর এবারও একইভাবে উত্তেজনা কমে আসবে। এই চিন্তা অতিশয় আশাবাদী। আজ ভারত ও পাকিস্তানের মুখোমুখি পরিস্থিতি ছয় বছর আগের পরিস্থিতির চেয়ে অনেক আলাদা। তা ছাড়া এখন সংঘর্ষের আশঙ্কা বেশি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের রূপান্তর ও স্থিতিশীলতা তাঁর উত্তরাধিকারের একটি কেন্দ্রীয় স্তম্ভ করে তুলেছেন। ২০১৯ সালের হামলা তাঁর নেতৃত্বের ওপর বড় ধরনের নিরাপত্তাজনিত ব্যর্থতা ও কলঙ্ক হিসেবে দেখা হয়েছিল। তারপর মোদি কাশ্মীরে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেন এবং এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের নানা অধিকার কেড়ে নেন। পাকিস্তানের প্রতি তাঁর আক্রমণাত্মক মনোভাব এবং গত পাঁচ বছরের তুলনামূলক শান্তি তাঁকে নিজ দেশে রাজনৈতিকভাবে উৎসাহিত করেছে। অতএব মোদি সম্ভবত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন– এটিই প্রমাণ করতে তাঁর ওপর চাপ আসবে। এই গতিশীলতা তাঁকে আরও আক্রমণাত্মক কৌশল অনুসরণ করতে বাধ্য করতে পারে।
এই যুক্তি ইতোমধ্যে গত সপ্তাহে মোদির নেওয়া সাহসী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত, যা তিনি ২০১৯ সালে নেননি। যেমন তিনি ১৯৬০ সালের একটি চুক্তি থেকে সরে এসেছেন, যেখানে ভারতকে তার নদীগুলোর পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত করতে বাধ্য করা হয়েছিল, যার ওপর ইসলামাবাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি নির্ভরশীল। এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানি কর্মকর্তারা ভারতকে জল সন্ত্রাসবাদের জন্য অভিযুক্ত করেছেন এবং দেশটি হেগে আবেদন জানিয়েছে। নয়াদিল্লির সামরিক কর্তারাও এই দাবির সমর্থনে প্রমাণ উপস্থাপন না করেই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য দ্বিগুণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

বিস্তৃত ভূরাজনৈতিক প্রবণতা সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও দুর্বল করে দিচ্ছে, যা আগে যুদ্ধ প্রতিরোধে সফল হয়েছিল। ষাটের দশকের পর সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল চীন-ভারত সামরিক সংঘর্ষ। ২০২০ সালের লাদাখ সংকটের পর ভারতীয় সামরিক নীতি বিতর্কিত লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) বরাবর চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। প্রকৃতপক্ষে মোদি সংকটের পরপরই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করেছিলেন। কারণ ভারত চীনকে আরও জরুরি সীমান্ত চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করেছিল। এই কৌশলগত পরিবর্তনের পর নয়াদিল্লি বেইজিংয়ের সামরিক সুবিধা এবং চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য সামরিক আধুনিকীকরণ ত্বরান্বিত করেছে। যদিও উভয়েই সম্প্রতি বিতর্কিত সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছে, কিন্তু এলএসি অঞ্চলে এখনও ব্যাপক সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বিদ্যমান। 

স্টিভেন হনিগ ও নাতালি ক্যালোকা: গবেষক; কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত কর ছ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা

অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।

সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোবিপ্রবিতে ২ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষসহ আহত ১৫
  • মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা