বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস-বিসিএস পরীক্ষা লইয়া সরকারি কর্ম কমিশন- পিএসসিতে যাহা চলিতেছে তাহা দুর্ভাগ্যজনক। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পুনর্গঠিত পিএসসি ৪৬তম বিসিএসের লিখিত ও ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির তারিখ পিছাইয়াছে। ইহার পূর্বে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার তারিখ দুই দফা পিছাইয়াছেন তাহারা। দফায় দফায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত হইবার কারণে রীতিমতো বিসিএসে জট সৃষ্টি হইয়াছে, যাহার সমাধান দ্রুত না হইলে পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ ধারণ করিতে পারে। কারণ বারংবার বিসিএস পরীক্ষা পিছাইলে শুধু চাকুরিপ্রার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হইবেন না; রাষ্ট্রও উহার নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা নিয়োগে ব্যর্থ হইবে। এহেন পরিস্থিতিতে শেষাবধি ক্ষতিগ্রস্ত হইবেন বিভিন্ন সরকারি সেবাপ্রত্যাশী মানুষ।
প্রতিবেদনমতে, চার বৎসর যাবৎ কোনো বিসিএসের চূড়ান্ত ফল না হইবার কারণে বিপুলসংখ্যক প্রার্থী ৪৪ হইতে ৪৭তম– এই চারটি বিসিএসেই আবেদন করিয়াছেন। চাকুরিস্থলে প্রবেশের বয়স বজায় থাকিতেই তাহারা এই সকল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে চান। স্বাভাবিকভাবেই এই চার বিসিএস লইয়া প্রবল চাপ তৈয়ার হয় পিএসসির উপর। চাকরিপ্রার্থীদের কথা বিবেচনা করিয়া পিএসসিও দ্রুত সকল পরীক্ষা সম্পন্নকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা ও ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাসূচি একই সময়ে নির্ধারণ করায় বিপত্তি বাধে। উপরন্তু ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পূর্বেই ৪৬তমের লিখিত পরীক্ষাসূচি ঘোষণা করিবার কারণে অনেক প্রার্থী তিনটি বিসিএসে (৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম) অবতীর্ণ হইতে বাধ্য হইতেছেন। তদুপরি, ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করে পিএসসি। তিনটি লিখিত পরীক্ষা দিয়া আবার ৪৭তম প্রিলিমিনারির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ এই সকল প্রার্থীর জন্য সত্যই কষ্টকর। তবে দুঃখজনক হইল, বিষয়টি লইয়া দফায় দফায় পিএসসি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সহিত তাহারা আলোচনা করিবার পরও সমাধান পান নাই।
এদিকে গত বৎসরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। পিএসসি তাহা আমলে না লইলে আন্দোলনকারীরা আরও বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠেন। স্পষ্টত, পরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়াদি সুসম্পন্নকরণে পিএসসি তালগোল পাকাইয়া ফেলিয়াছে। ইহার খেসারত দিতে হইতেছে সাধারণ বিসিএস প্রার্থীদের। তবে দফায় দফায় পরীক্ষার তারিখ পিছাইবার পশ্চাতে পিএসসির উপর ‘অদৃশ্য প্রভাব’ ক্রিয়াশীল বলিয়া আলোচনা বিস্তর। অভিযোগ উঠিয়াছে, সরকারের দুইজন উপদেষ্টা এবং একটি রাজনৈতিক দলের চাপের কারণে পিএসসি কোনো সিদ্ধান্তে স্থির থাকিতে পারিতেছে না। প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সাংবাদিক সমিতির অফিসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং পিএসসি সদস্যদের মধ্যকার দীর্ঘ আলোচনার পর পিএসসি লিখিত পরীক্ষা আপাত স্থগিতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাহা ঘোষণা করেন পিএসসির জনৈক সদস্য। এই বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটিয়াছে সরকারের একজন উপদেষ্টার চাপাচাপির ফলে। পিএসসি একটা সাংবিধানিক, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। উহার কার্যক্রমে সরকারের উপদেষ্টারা অযাচিত হস্তক্ষেপ করিলে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হইবারই কথা। স্মরণ করা যাইতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পিএসসির পুনর্গঠন লইয়াও বহু নাটকীয়তা পরিলক্ষিত হইয়াছে। প্রথমে এক দল সদস্যকে নিযুক্তির পর রহস্যময় কারণে অত্যন্ত দ্রুততায় সকলের নিয়োগ বাতিল হইয়া যায়। নিযুক্ত করা হয় নূতন ১৫ জনকে। একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে এহেন কাণ্ড কল্পনাতীত।
সাম্প্রতিক অতীতে বিসিএস পরীক্ষা লইয়া বহু কিছু ঘটিয়াছে। বিসিএসে নিয়োগ শিক্ষার্থীদের নিকট কতটা আরাধ্য বিষয়, সম্ভবত উহা ব্যাখ্যা করিবার কিছু নাই। যেই দেশে এখনও লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করিয়া বৎসরের পর বৎসর বিসিএসের জন্য অপেক্ষমাণ, সেই দেশে যখন পিএসসির অভ্যন্তরীণ সমস্যা বা সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে বিসিএস পরীক্ষা বারংবার পিছাইয়া যায়, তাহা একেবারেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার পিএসসিকে নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী চলিতে দিবে এবং পিএসসি অবিলম্বে চাকুরিপ্রত্যাশীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ ব স এস র ব স এস প পর ক ষ র সরক র র প এসস র ত হইব সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
৪৭তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার্থীদের জন্য পিএসসির যত নির্দেশনা
আগামী শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার আসনব্যবস্থা, সময়সূচি ও শিক্ষার্থীদের জন্য নানা নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে।
পিএসসি জানিয়েছে, ৪৭তম বিসিএসে অংশ নিতে মোট ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪৭ জন চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন। ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ৪৭তম বিসিএসে মোট শূন্য ক্যাডার পদের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৭। আর নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা ২০১। এই বিসিএস থেকে মোট ৩ হাজার ৬৮৮ জনকে (ক্যাডার ও নন–ক্যাডার মিলিয়ে) নিয়োগ দেওয়া হবে। এই বিসিএসে কিছু নতুন পদ যুক্ত হয়েছে।
সময়সূচি ও কেন্দ্র১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে পরীক্ষা। পরীক্ষাকেন্দ্র ৮টি। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ।
আরও পড়ুনইউনিমেট-শাবানা মাহমুদ-দেখার হাওর-বেন গুরিয়ান বিমানবন্দর-কী, জেনে নিন১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫পরীক্ষার্থীদের করণীয়১। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। ৯টা ৩০ মিনিটের পর কোনো পরীক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীদের হলের নাম ও কক্ষ নম্বর আগেই মেসেজের মাধ্যমে তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে প্রেরণ করা হবে।
২। সকাল ৯টা ৩০ থেকে ৯টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তরপত্র বিতরণ করা হবে। উত্তরপত্রের ৪টি সেট থাকবে, যেমন সেট # ১, ২, ৩ ও ৪। সকাল ১০টায় পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে।
আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫৩। পরীক্ষাকেন্দ্রে বইপুস্তক, সব ধরনের ঘড়ি, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক কার্ড/ক্রেডিট কার্ডসদৃশ কোনো ডিভাইস, গহনা ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বর্ণিত নিষিদ্ধ সামগ্রীসহ কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবেন না।
৪। পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীরা কানের ওপর কোনো আবরণ রাখবেন না, কান খোলা রাখতে হবে। কানে কোনো ধরনের হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শপত্রসহ কমিশনের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
৫। পরীক্ষায় মোট ২০০টি এমসিকিউ টাইপ প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবেন, তবে ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য মোট প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.৫০ নম্বর করে কাটা হবে।
আরও পড়ুন৪৭ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি: শেষ মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসই আসল প্রস্তুতি১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫৬। প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে শ্রুতলেখক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিশনের মনোনীত শ্রুতলেখক ছাড়া অন্য কেউ শ্রুতলেখক হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য শ্রুতলেখকদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে।
পরীক্ষাকেন্দ্র ও নির্দেশনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন।
আরও পড়ুন৪৩তম বিসিএসের প্রশাসনে প্রথম শানিরুলকে ভাইভায় যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল ২৯ মে ২০২৪