পায়ে একাধিক গভীর ক্ষত নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় পাহাড়ে পড়েছিল একটি বন্যহাতি। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে হাতিটির চিকিৎসায় এগিয়ে আসে বন বিভাগ এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। গাজীপুর সাফারি পার্ক ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসকদের যৌথ সহযোগিতায় চিকিৎসা দেওয়া হয় হাতিটিকে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের কাটাবাড়ি এলাকায় অসুস্থ হাতিটির চিকিৎসা দেওয়ার পর বনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বন বিভাগ জানায়, একটি বন্যহাতি পায়ে গভীর কয়েকটি ক্ষত নিয়ে কাটাবাড়ি পাহাড়ে খুঁড়িয়ে চলছিল। বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে এলে বন বিভাগকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ শেরপুরের তত্ত্বাবধানে হাতির সুস্থতায় উদ্যোগ নেওয়া হয়। গাজীপুর সাফারি পার্ক ও স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় প্রথমে ইনজেকশন দিয়ে হাতিটিকে অজ্ঞান করা হয়। পরে ক্ষতস্থানে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করে আরেকটি ইনজেকশনের মাধ্যমে হাতিটির জ্ঞান ফেরানো হয়। চিকিৎসা শেষ হলে হাতিটি ধীরে ধীরে পাহাড়ের গহিনে দলের কাছে ফিরে যায়।
অসুস্থ বন্যহাতিটির চিকিৎসায় অংশ নেন গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন
ডা.
মেডিকেল টিমের প্রধান চিকিৎসক গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রায় ৩-৪ মাস আগে বল্লমজাতীয় অস্ত্র দিয়ে হাতিটিকে আঘাত করা হয়। ৩-৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ওই আঘাতের গভীরতা প্রায় ৬ ইঞ্চির মতো। আঘাতের কারণে হাতিটি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তার দেহের মেজর টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাতিটির আঘাতপ্রাপ্ত স্থান ড্রেসিং করে তার দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাতিটি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবে
বলে আশা তাঁর।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, হাতিটি অসুস্থ থাকায় দলছুট ছিল। খুঁডিয়ে খুঁডিয়ে জঙ্গলে একাই চলাফেরা করত। আমরা হাতিটির গতিবিধি কয়েকদিন ধরে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। এখন থেকে হাতিটির ওপর নজরদারি থাকবে এবং প্রয়োজনে আবারও চিকিৎসা দেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে বেশ কিছু দিন ধরে বন্যহাতির পাল বিচরণ করছে। এসব হাতি মাঝে মধ্যেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। হয়তো স্থানীয় কারও আস্ত্রের আঘাতেই দলছুট হাতিটির পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এটিএম বুথে কিশোরীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত সেই নিরাপত্তাকর্মী গ্রেপ্তার
গাজীপুরের শ্রীপুরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথের ভেতরে কিশোরীকে (১৪) ধর্ষণের মামলার একমাত্র আসামি মো. লিটন মিয়াকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক।
এর আগে গত রোববার দুপুরে শ্রীপুরের মুলাইদ গ্রামের একটি কারখানার সামনে বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথের ভেতরে এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত মো. লিটন মিয়া শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের আতাবুদ্দিন মুসার বাড়ির ভাড়াটে এবং ওই এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে গত রোববার রাতে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে লিটনকে একমাত্র আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে লিটন পলাতক ছিলেন। তিনি একাধিকবার স্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে ছিলেন। সোমবার তাকে ধরতে পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালায়। অভিযানে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে লিটনের পিছু নেয় আভিযানিক দলটি। একপর্যায়ে তাকে গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আনসার রোড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার বিষয়ে কিশোরীর বাবা প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেছেন, তিনি টাকা তোলার জন্য ওই এটিএম বুথে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মী মো. লিটনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁর মেয়ে একটি স্পিনিং কারখানায় স্বল্প বেতনের চাকরি করে। বিষয়টি জানতে পেরে লিটন অন্য কারখানায় ভালো বেতনের চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। আশ্বাস পেয়ে রোববার তিনি তাঁর মেয়েকে নিয়ে ওই বুথে যান।
ওই কিশোরীর বাবা আরও বলেন, বুথে যাওয়ার পর লিটন মিয়া তাঁর মেয়েকে বুথের ভেতরে থাকা ছোট্ট একটি কক্ষে নিয়ে বসান। অন্য একটি কারখানার এক কর্মকর্তা কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আসবেন বলে অপেক্ষা করিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে লিটন মিয়া ওই কিশোরীকে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন এবং তাঁর বাবাকে বাড়িতে চলে যেতে বলেন। কিশোরীর বাবা সেখান থেকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর খবর নিতে এসে দেখেন তাঁর মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বুথের ভেতর থেকে বের হচ্ছে। পরে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে গেলে ধর্ষণের বিষয়টি তার মাকে জানায়।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর থেকে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসামি ধরার চেষ্টা করে। অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুনএটিএম বুথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, নিরাপত্তাকর্মী পলাতক১৫ জুন ২০২৫