‘গছিয়ে দেওয়া’ যন্ত্র নিয়ে বিপাকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
Published: 3rd, May 2025 GMT
কচুরিপানা ও ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছিল আড়াই বছর আগে। কিন্তু কার্যকর কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এর ফলে যন্ত্রটি নিতে আগ্রহ দেখায়নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু চাহিদা না থাকলেও সম্প্রতি দামি এই যন্ত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে একপ্রকার ‘গছিয়ে’ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এখন এই যন্ত্র নিয়ে কী করবে, ভেবে পাচ্ছে না সংস্থাটি।
ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কার করার দামি এই যন্ত্রের নাম উইড হারভেস্টার। গত মার্চের মাঝামাঝি পবিত্র রমজান মাসে এই যন্ত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাগরিকা ওয়ার্কশপে রেখে যায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যন্ত্রটি ওভাবেই পড়ে আছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি উইড হারভেস্টার কিনেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ‘সিটি করপোরেশনের জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ খাতের বরাদ্দ দিয়ে ২০২২ সালে এ ধরনের আটটি যন্ত্র কেনা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক নথিতে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের জন্য রক্ষিত উন্নয়ন সহায়তা খাতের বরাদ্দে আটটি উইড হারভেস্টার কেনা হয়। ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনকে একটি করে উইড হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে।
শুধু উইড হারভেস্টার নয়, এর আগে সিটি করপোরেশনগুলোকে দেওয়া রোড সুইপার ট্রাকও কোনো কাজে আসেনি। আওয়ামী লীগের আমলে ২০২০ সালে সড়কের ধুলাবালু পরিষ্কারের জন্য ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতালি থেকে ২০টি রোড সুইপার ট্রাক কিনেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বাজেটে মন্ত্রীর অভিপ্রায় খাত থেকে রোড সুইপার কেনার ব্যয় বহন করা হয়েছিল।
দেশের ১০টি সিটি করপোরেশনকে এসব রোড সুইপার দেওয়া হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল তিনটি। কিন্তু এগুলো ধুলা পরিষ্কারের পরিবর্তে উল্টো সড়কে আরও ধুলা ওড়ায়। কোনো কাজে না আসায় এগুলোর ব্যবহার বন্ধ রেখেছে সিটি করপোরেশনগুলো। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গাড়িগুলো সাগরিকা ওয়ার্কশপে পড়ে আছে।
বর্তমানে কাজে না আসা এসব দামি যন্ত্রপাতি কেনার সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো.
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এসব যন্ত্রপাতি কেনাকাটা করে। মন্ত্রীসহ প্রভাবশালীদের পছন্দের ঠিকাদার ও সরবরাহকারীদের মাধ্যমে বাড়তি দামে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয় বিনা দরপত্রে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য জানতে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিটি করপোরেশন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আর সিটি করপোরেশনকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিনকে মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। কার্যকর যন্ত্রপাতির অভাবে নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি উইড হারভেস্টার দেওয়া হয়।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, যন্ত্রটি জলাশয়ের কচুরিপানাসহ ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য। তবে এটি কার্যকর করতে গেলে জলাশয়ের গভীরতা অন্তত সাত ফুট হতে হবে। আর প্রশস্ততায় যথেষ্ট বড় হতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরের খালগুলোর গভীরতা অত নয়। এটি চট্টগ্রাম নগরের খালগুলোতে নামানোর মতো অবস্থাও নেই।
জার্মানি থেকে কেনা এসব যন্ত্র নিয়ে ২০২২ সালের আগস্টে প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় ৭ আগস্ট আগাছা পরিষ্কার করার যন্ত্রটি পুকুরে নামানো হয়। সেখানে উপস্থিত এক কর্মকর্তা ওই সময় প্রথম আলোকে বলেন, এই যন্ত্র পরীক্ষা করার মতো জলাশয় চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় নেই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরে যন্ত্রটি নামানো হয়। কিন্তু যন্ত্রটি আর ওঠানো যাচ্ছিল না। অথচ জলে-স্থলে এটি চলে বলে জানানো হয়েছিল।
সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের যন্ত্র রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ কিংবা মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনোভাবেই এটি চট্টগ্রাম নগরের খালগুলোর জন্য ব্যবহার উপযোগী নয়।
সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ভাসমান ময়লা পরিষ্কারের জন্য এ ধরনের যন্ত্রের কোনো চাহিদা সিটি করপোরেশনের ছিল না। এটি এখানকার জন্য ব্যবহার উপযোগীও নয়। এখন এটি নিয়ে কী করবেন, তা-ই বুঝতে পারছেন না।
এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা এবং করপোরেশনগুলোকে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এসব যন্ত্রপাতি কেনায় সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। এসব কেনাকাটার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়ে এগুলোর তদন্ত করানো উচিত এবং কেনাকাটার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ষ ক র র জন য প রথম আল ক কর মকর ত এ ধরন র ব যবহ র হয় ছ ল নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ