কচুরিপানা ও ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য প্রায় ছয় কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছিল আড়াই বছর আগে। কিন্তু কার্যকর কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এর ফলে যন্ত্রটি নিতে আগ্রহ দেখায়নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু চাহিদা না থাকলেও সম্প্রতি দামি এই যন্ত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে একপ্রকার ‘গছিয়ে’ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এখন এই যন্ত্র নিয়ে কী করবে, ভেবে পাচ্ছে না সংস্থাটি।

ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কার করার দামি এই যন্ত্রের নাম উইড হারভেস্টার। গত মার্চের মাঝামাঝি পবিত্র রমজান মাসে এই যন্ত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাগরিকা ওয়ার্কশপে রেখে যায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যন্ত্রটি ওভাবেই পড়ে আছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি উইড হারভেস্টার কিনেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ‘সিটি করপোরেশনের জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ খাতের বরাদ্দ দিয়ে ২০২২ সালে এ ধরনের আটটি যন্ত্র কেনা হয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক নথিতে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের জন্য রক্ষিত উন্নয়ন সহায়তা খাতের বরাদ্দে আটটি উইড হারভেস্টার কেনা হয়। ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনকে একটি করে উইড হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে।

শুধু উইড হারভেস্টার নয়, এর আগে সিটি করপোরেশনগুলোকে দেওয়া রোড সুইপার ট্রাকও কোনো কাজে আসেনি। আওয়ামী লীগের আমলে ২০২০ সালে সড়কের ধুলাবালু পরিষ্কারের জন্য ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতালি থেকে ২০টি রোড সুইপার ট্রাক কিনেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বাজেটে মন্ত্রীর অভিপ্রায় খাত থেকে রোড সুইপার কেনার ব্যয় বহন করা হয়েছিল।

দেশের ১০টি সিটি করপোরেশনকে এসব রোড সুইপার দেওয়া হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল তিনটি। কিন্তু এগুলো ধুলা পরিষ্কারের পরিবর্তে উল্টো সড়কে আরও ধুলা ওড়ায়। কোনো কাজে না আসায় এগুলোর ব্যবহার বন্ধ রেখেছে সিটি করপোরেশনগুলো। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গাড়িগুলো সাগরিকা ওয়ার্কশপে পড়ে আছে।

বর্তমানে কাজে না আসা এসব দামি যন্ত্রপাতি কেনার সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো.

তাজুল ইসলাম। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন তিনি। এ জন্য তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এসব যন্ত্রপাতি কেনাকাটা করে। মন্ত্রীসহ প্রভাবশালীদের পছন্দের ঠিকাদার ও সরবরাহকারীদের মাধ্যমে বাড়তি দামে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয় বিনা দরপত্রে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য জানতে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিটি করপোরেশন শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আর সিটি করপোরেশনকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিনকে মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। কার্যকর যন্ত্রপাতির অভাবে নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি উইড হারভেস্টার দেওয়া হয়।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, যন্ত্রটি জলাশয়ের কচুরিপানাসহ ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য। তবে এটি কার্যকর করতে গেলে জলাশয়ের গভীরতা অন্তত সাত ফুট হতে হবে। আর প্রশস্ততায় যথেষ্ট বড় হতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরের খালগুলোর গভীরতা অত নয়। এটি চট্টগ্রাম নগরের খালগুলোতে নামানোর মতো অবস্থাও নেই।

জার্মানি থেকে কেনা এসব যন্ত্র নিয়ে ২০২২ সালের আগস্টে প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় ৭ আগস্ট আগাছা পরিষ্কার করার যন্ত্রটি পুকুরে নামানো হয়। সেখানে উপস্থিত এক কর্মকর্তা ওই সময় প্রথম আলোকে বলেন, এই যন্ত্র পরীক্ষা করার মতো জলাশয় চট্টগ্রাম সিটি এলাকায় নেই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুরে যন্ত্রটি নামানো হয়। কিন্তু যন্ত্রটি আর ওঠানো যাচ্ছিল না। অথচ জলে-স্থলে এটি চলে বলে জানানো হয়েছিল।

সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের যন্ত্র রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ কিংবা মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনোভাবেই এটি চট্টগ্রাম নগরের খালগুলোর জন্য ব্যবহার উপযোগী নয়।

সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ভাসমান ময়লা পরিষ্কারের জন্য এ ধরনের যন্ত্রের কোনো চাহিদা সিটি করপোরেশনের ছিল না। এটি এখানকার জন্য ব্যবহার উপযোগীও নয়। এখন এটি নিয়ে কী করবেন, তা-ই বুঝতে পারছেন না।

এ ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা এবং করপোরেশনগুলোকে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এসব যন্ত্রপাতি কেনায় সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। এসব কেনাকাটার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁরা ঠিকই লাভবান হচ্ছেন। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়ে এগুলোর তদন্ত করানো উচিত এবং কেনাকাটার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ষ ক র র জন য প রথম আল ক কর মকর ত এ ধরন র ব যবহ র হয় ছ ল নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কম দায়ী নয়: উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বনভূমি উজাড় ও গাছপালা কমে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাঙামাটি শহরের জিমনেশিয়াম মাঠে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।

সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে যদি বলা হয় যে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই, তাহলে খুব বেশি ভুল হবে না। ৮০ সাল পর্যন্ত এখানে বন ছিল, গাছপালা ছিল, ঝোপঝাড় ছিল। এই অঞ্চলে বা দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কোনো অংশ কম দায়ী নয়।

সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চেয়ে বড় আকারের বনভূমি এখন মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী কিংবা সিলেটে দেখা যায়। পার্বত্য অঞ্চলে এই অবস্থা কেন সৃষ্টি হলো সবার ভাবতে হবে।

পার্বত্য উপদেষ্টা আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সাধারণত ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে শীতের অনুভূতি পাওয়া যেত। এখন কার্তিক মাসেও শীতের অনুভূতি পাওয়া যায় না। যারা আদিকাল থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করে আসছে, তারা প্রকৃতি সচেতন ছিল। তাই তাদের ওপর খুব বেশি ভূমি ধস হয়েছে শোনা যায় না। তাদের বাড়িঘরেও হয়নি। প্রকৃতিকে যারা চেনে না, তাদের ওপর ভূমিধস হয়।

বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব এ কে এম আকমল হোসেন আজাদ, রাঙামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. আবদুল আওয়াল সরকার, জেলা পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, সিভিল সার্জন নূয়েন খীসা, দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এসম সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। এর আগে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করা হয়। ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই মেলা চলবে। বৃক্ষমেলায় ২১টি স্টল অংশগ্রহণ করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ