সুরা আদিয়াত অর্থ ‘ধাবমান অশ্ব’। পবিত্র কোরআনের শততম সুরা। মানুষ আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ আর ধন সম্পদের লোভে মত্ত হয়ে আছে। এতে পরকালীন জীবনের প্রথম স্তর কবর এবং হাশরের বিবরণ দান করে মানুষকে সৎকাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

সুরা আদিয়াতের অর্থ আবার দেখে নিই:

পরম করুণাময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে

১. শপথ তাদের যারা ছোটে হাঁপাতে হাঁপাতে, ২.

আগুনের ফুলকি ছিটিয়ে, ৩. সকালের হামলায়, ৪. ধুলো উড়িয়ে, ৫. ঢুকে পড়ে এক সঙ্গে। ৬. মানুষ তো তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ। ৭. আর সে তো ৮. আর সে তো ধনসম্পদের লালসায় মেতে আছে। এ-বিষয়ে নিজেই তার সাক্ষী। ৯. তবে সে কি জানে না সেই সময় সম্পর্কে, যখন কবরে যা আছে তা ওঠানো হবে ১০. আর অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে? ১১. আর সেদিন ওদের কী ঘটবে ওদের প্রতিপালক অবশ্যই তা ভালো করেই জানেন।

সুরার সারসংক্ষেপ:

প্রথম অংশে (১ থেকে ৫ আয়াতে) আল্লাহ্ বেপরোয়া কিছু মানুষের কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেছেন যাদের উদাহরণ দ্রুত গতিতে দৌড়ানো ঘোড়ার মতো। দ্বিতীয় অংশে (৬ থেকে ৮ আয়াতে) আল্লাহ্ মানুষের কিছু মানবিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথম অংশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, মানুষ আসলে বেপরোয়া এবং ঘোড়ার মতো সে মনিবের বাধ্যগত নয় বরং অবাধ্য। তৃতীয় অংশে (৯ থেকে ১১ আয়াতে) আল্লাহ্ আখিরাতের কথা বলেছেন, যেদিন মানুষের ওই বেপরোয়া ভাব প্রকাশ পাবে, যা সে লুকিয়ে রাখত সেদিন মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে তার কর্মকাণ্ডের জন্য।

আরও পড়ুনস্বজাতিকে বাঁচাতে চাইল যে কাঠমিস্ত্রি১৬ এপ্রিল ২০২৫

তিনটি দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে: ক. মানুষ তার পালনকর্তার প্রতি অকৃতজ্ঞ। খ. মানুষ জানার পরও কৃতজ্ঞতার ও জবাবদিহির বিষয়ে উদাসহীন। গ. মানুষ ধন-সম্পদের ভালোবাসায় মত্ত থাকে।

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বিভিন্ন উপায় আছে। যেমন, ১. অন্তরের মাধ্যমে অর্থাৎ আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে অন্তরে শুকরিয়া আদায় করা। এর পদ্ধতি হলো, আল্লাহকে ভয় করা, তাঁর অবাধ্য তার মানসিকতা না থাকা এবং তাকওয়া অবলম্বন করা। ২. ভাষার মাধ্যমে। অর্থাৎ, মুখে নিয়ামতের শোকরিয়া প্রকাশ করা, গণনা করা ইত্যাদি। দিনরাত আল্লাহর প্রশংসা করেছেন। ৩. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শুকরিয়া হলো নামাজ আদায় করা ও বেশি বেশি ভালো কাজ করা।

আল্লাহ কিছু মানুষের কথা বলেছেন যারা ঘোড়ার মতো দ্রুত গতিতে চলে। আল্লাহ মানুষের কিছু দুর্বলতার কথা বলেছেন। যেমনটা বলা হয়েছে মানুষ বেপরোয়া এবং ঘোড়ার মতো। সে মনিবের বাধ্যগত নয় বরং অবাধ্য। এই অবাধ্য সে নিজেই জানে, স্বীকার করে। আখিরাতের কথা বলা হয়েছে যেদিন তাঁর এই বেপরোয়া ভাব প্রকাশ পাবে। যা সে লুকিয়ে রাখত। সেদিন রবের প্রতি অকৃতজ্ঞ হলেও বা বেপরোয়া হলেও তাকে জবাবদিহি করতে হবে।এই সুরায় ঘোড়ার কথা বলা হলেও আল্লাহ মানুষের কথা বলেছেন। মানুষের চরিত্র, অবস্থা বলে দিচ্ছেন আল্লাহ। ওই আরোহীদের মতোই মানুষ আল্লাহকে অমান্য করে, অকৃতজ্ঞতা দেখায়। ঘোড়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের মতো সে নিজেকেও নিজে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। ঘোড়া জীবনকে বাজি রেখে বিপদের মুখে নিজেকে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিন্তু মানুষ তো তাঁর মনিবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধে যাওয়া দূরে থাক, ইবাদতও করতে চায় না।

তখনকার আরবের চারদিকে ছিল লুটতরাজ, হানাহানি, খুনোখুনি ও দস্যুতা। আল্লাহর দেওয়া শক্তিগুলো অপব্যবহার তাঁর প্রতি অকৃজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়, এ অনুভূতি জাগার পর ও লোকদের বলা হয়েছে, এ ব্যাপারটি এই দুনিয়াতেই শেষ হয়ে যাবে না বরং মৃত্যুর পর আর একটি জীবন শুরু হচ্ছে, সেখানে কেবল তোমাদের সব কাজেরই নয় বরং নিয়তও যাচাই বা পর্যালোচনা করা হবে।

আরও পড়ুনএরা কথা বলতে পারে না১৫ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘ ড় র মত আল ল হ ব পর য় অব ধ য বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘পোপের’ বেশে নিজের ছবি প্রকাশ করলেন ট্রাম্প

ছবি: হোয়াইট হাউসের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ