বিদেশে পলাতক মালিকদের ধরতে রেড এলার্ট জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে: শ্রম উপদেষ্টা
Published: 3rd, May 2025 GMT
পতিত সরকারের অনেক মন্ত্রী, এমপি শ্রমিকের বেতন না দিয়ে বিদেশে পালিয়েছে বা আত্মগোপনে আছে। তাদের বাড়ি, গাড়ি, জমি বিক্রি করে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়েছে তাদের ধরে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারির কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
শনিবার শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমার শ্রমিককে আমি দেখবো, মালিকদের এমন মানসিকতা গড়ে উঠেনি। আমরা সর্বদা শ্রমিকের পক্ষে, আবার মালিককেও দেখার দায়িত্ব আছে। আমরা চাই না শ্রমিক একদিকে, মালিক অন্যদিকে। শিল্পখাতে আমাদের ব্যর্থতার কারণ অতীতের দুবৃর্ত্তায়ন। যিনি কারখানার মালিক তিনি রাজনৈতিক দলের নেতা, তিনি সংসদে এমপি, এ ভাবেই অতীতে শাসন এবং শোষণ চলেছে। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের পাশাপাশি শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও প্রাণহানি ঘটেছে। এর পেছনে কারণ ছিল তাদের দীর্ঘদিনের পূঞ্জীভূত ক্ষোভ। সরকারের অবহেলায়ই রানাপ্লাজা দুর্ঘটনা ঘটেছে। রানাপ্লাজার ধ্বংসস্তুূপ থেকে ১৭ দিন পরে রেশমা নামক নারী কর্মীকে উদ্ধার করা ছিল সাজানো নাটক।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘মে দিবস আসে যায়। দিবসটি নানা র্যালি, মিছিল-শ্লোগান, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে পালিত হয়। কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্য বদলায় না। যাদের শ্রমে-ঘামে দেশের চাকা ঘোরে, তাদের ভাগ্যের চাকা ঘোরে না। শ্রমিক অধিকার আদায়ের যে দিবস, সে দিবস তাদের স্পর্শ করে না। দেশের ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাংশ শ্রমিকেরই আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। শ্রমিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই, নেই কর্মস্থলে পরিচয়পত্র। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ১১২ জন শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ শহীদ হয়েছেন। কয়েক হাজার শ্রমজীবী মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তাই শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবি পূরণ না হলে, জুলাই বিপ্লবের অর্জিত সুফল ম্লান হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতিত শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শুধু মে দিবসে শ্রমিকদের সুরক্ষার কথা না বলে, শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনী ইশতেহারে ভালোভাবে উল্লেখ করলে তাদের ভোট বাড়বে বৈ কমবে না। আমরা শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের পক্ষে। তবে অযৌক্তিক দাবির মাধ্যমে বহিরাগতদের নিয়ে কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর, কারখানা বন্ধ করে দেওয়া, জ্বালাও-পোড়াও কোনোভাবেই আমরা সমর্থন করি না। আওয়ামী সরকারের পতনের পর কিছু দেশি-বিদেশি অপশক্তি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন মিল-ফ্যাক্টরি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। এমনও দেখা গেছে, শ্রমিক আন্দোলনের নামে উস্কানিদাতা কেউই শ্রমিক বা শ্রমিক নেতা নয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অযৌক্তিক শ্রমিক আন্দোলনের নামে তথাকথিত বিশৃঙ্খলা দমন করতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি এক বড় কালো অধ্যায়। অথচ রানা প্লাজায় নিহত ও আহত পরিবারের সাহায্যে দেশি—বিদেশিদের যে অর্থ পাওয়া গিয়েছিল তার বেশির ভাগ অংশই তৎকালীন সরকার ও তার সুবিধাভোগীরা লুটপাট করেছে।’
মহান মে দিবস—২০২৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় মালিক অপেক্ষা শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব বেশি’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মো. আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক মো. তৌহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমান ও জনাব নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ব ট ফর ড ম ক র স ম দ বস ড ব ট ফর ড ম ক র স উপদ ষ ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কম দায়ী নয়: উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বনভূমি উজাড় ও গাছপালা কমে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাঙামাটি শহরের জিমনেশিয়াম মাঠে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে যদি বলা হয় যে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই, তাহলে খুব বেশি ভুল হবে না। ৮০ সাল পর্যন্ত এখানে বন ছিল, গাছপালা ছিল, ঝোপঝাড় ছিল। এই অঞ্চলে বা দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কোনো অংশ কম দায়ী নয়।
সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চেয়ে বড় আকারের বনভূমি এখন মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী কিংবা সিলেটে দেখা যায়। পার্বত্য অঞ্চলে এই অবস্থা কেন সৃষ্টি হলো সবার ভাবতে হবে।
পার্বত্য উপদেষ্টা আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সাধারণত ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে শীতের অনুভূতি পাওয়া যেত। এখন কার্তিক মাসেও শীতের অনুভূতি পাওয়া যায় না। যারা আদিকাল থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করে আসছে, তারা প্রকৃতি সচেতন ছিল। তাই তাদের ওপর খুব বেশি ভূমি ধস হয়েছে শোনা যায় না। তাদের বাড়িঘরেও হয়নি। প্রকৃতিকে যারা চেনে না, তাদের ওপর ভূমিধস হয়।
বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব এ কে এম আকমল হোসেন আজাদ, রাঙামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. আবদুল আওয়াল সরকার, জেলা পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, সিভিল সার্জন নূয়েন খীসা, দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এসম সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। এর আগে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করা হয়। ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই মেলা চলবে। বৃক্ষমেলায় ২১টি স্টল অংশগ্রহণ করেছে।