কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে মিয়ানমারের বাণিজ্যে বন্ধ থাকায় সীমান্তে চোরাচালান বেড়েছে। এতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনকে নিরাপদ রুট হিসেবে টার্গেট করেছে চোরাকারবারিরা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাগরপথে মিয়ানমারের পাচারকালে ৬০০ বস্তা সারসহ দশ পাচারকারীকে আটক করে কোস্ট গার্ড। তার আগের দিন সেন্টমার্টিনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মিয়ানমারে পাচার করেছে ৪০০ বস্তা সিমেন্ট আর ঢেউটিন। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউপি সদস্যসহ ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফ-সেন্টমার্টিন স্থান দিয়ে চোরাই পণ্য দেদারসে পাচার হচ্ছে। তার বিপরীতে আবার আসছে মাদক। চোরাই পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে পেঁয়াজ, তেল, রড ও সিমেন্ট। একইভাবে সে দেশ থেকে মাদক, গরু-মহিষসহ বিভিন্ন পণ্য আসছে।

এদিকে অনুসন্ধানে পাচারের নেপথ্যে সিন্ডিকেটের চক্রের কিছু নাম উঠেছে। এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে নানা জালিয়াতির মাধ্যমে মিয়ানমারের খাদ্য পণ্য, সার, নির্মাণসামগ্রী পাচার করে কোটি টাকার মালিক হয়েছে। এ চক্রের মধ্য অন্যতম ‘সেভেন স্টার’।

তারা হচ্ছেন- আবদুল মোনাফ, নুরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ আলম, আবু তালেব, মো.

আজিম ও মুক্তার আহমেদ। এছাড়া  মোহাম্মদ আলম, নারী ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার, সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার কামাল, জেলা প্রশাসনের কর্মচারী আশিকুর রহমান, জাফর আলমসহ আরো অনেকে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত জেলা প্রশাসনের বীচ কর্মী আশিকুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে সেন্টমার্টিন বীচ কর্মী আশিকুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপে সংস্কার করতে সিমেন্ট যেতে আমার নামে অনুমতিপত্রটি দ্বীপে ইউপি সদস্য মাহাফুজা আক্তার রিসিভ করেছিলেন। পরে শুনেছি এ অনুমতিপত্র নিয়ে মিয়ানমারে সিমেন্ট পাচার করা হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ঘটনায় আমি জড়িত না। একটি চক্র ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

অন্যদিকে গত দুই দিন আগে উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দ করা ৪০০ সিমেন্ট ও টিন মিয়ানমারে পাচারের অভিযোগে শুক্রবার রাতে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বীচ কর্মী আশিকুর রহমান এবং ইউপি নারী ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তারসহ ৭-৮ চোরাকারবারিকে অজ্ঞাত দেখিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে টেকনাফ থানায় মামলা করে উপজেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের ডকুমেন্ট জালিয়াতি করে একটি চক্র মিয়ানমারে সিমেন্ট-টিন পাচার করেছে। এর সঙ্গে জড়িত একজন বীচ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি একই ইউপি সদস্যসহ দুজনকে এজাহার এজাহারভুক্ত করে আরও ৭-৮ জন চোরাকারবারিকে অজ্ঞাত দেখিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া দীর্ঘ দিন চোরাচালানে জড়িত ‘সেভেন স্টার’ নামে একটি চক্রসহ আরো কিছু চোরাকারবারির নাম পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, ‘সীমান্তে চোরাচালানে ‘সেভেন স্টার’ জড়িত। তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মিয়ানমারে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের আইনের আত্ততায় আনলে সীমান্তে অনেকটা চোরাচালান কমে আসবে বলে ধারণা তার।

বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘সীমান্তে মাদক, মানবপাচার ও চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন টম র ট ন ব শ ষ ক ষমত চ র ক রব র ক রব র র ব চ কর ম প চ র কর সদস য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে মিনি চিড়িয়াখানার পাশের অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দিল সিটি করপোরেশন

ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে আওয়ামী লীগ নেতার নিয়ন্ত্রণাধীন মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্কের পাশে অবৈধভাবে নির্মিত দোকান উচ্ছেদ করেছে সিটি করপোরেশন। আজ রোববার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে অবৈধ স্থাপনা সরাতে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন।

জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে আলোচিত মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজের নামে ইজারা থাকলেও সেটি পরিচালনা করছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান। নিজের শ্যালকের নামে ইজারা নিয়ে সেটি পরিচালনা করছিলেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। অবৈধভাবে পরিচালিত মিনি চিড়িয়াখানাটিতে একটি ভালুকের শরীরে পচন ধরলে এ নিয়ে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর গত ৮ এপ্রিল মিনি চিড়িয়াখানাটি বন্ধ করে দেয় বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। এর পর থেকে শুধু শিশুপার্ক পরিচালিত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিশুপার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানার জন্য জায়গা ইজারা নিয়ে বৈশাখী মঞ্চের পাশে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সেখানে ছোট ছোট দোকান করে সেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়। ৫ আগস্টের পর সেখানে নতুন করে আরও দোকান দিতে শুরু করে দখলদারেরা। এ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তোলেন সচেতন নাগরিকেরা। বিষয়টি সামনে এলে সিটি করপোরেশন অবৈধ এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ দেয়। পরে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্ব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে গড়ে তোলা অন্তত সাতটি দোকান খননযন্ত্র দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ বলেন, অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানগুলো অপসারণ করা হয়েছে। মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক যেহেতু ইজারা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বিষয়ে করপোরেশনের সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

আরও পড়ুনঅনুমোদন নেই, প্রাণীর জোগানদাতা সাবেক মেয়র, পরিচালনায় সাবেক কাউন্সিলর০৮ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনপর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না ময়মনসিংহ মিনি চিড়িয়াখানার অসুস্থ ভালুকটি১৩ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ