বিলুপ্তির মুখে থাকা বাটাগুর বাসকার ৬৫টি নতুন প্রাণ সুন্দরবনে
Published: 6th, May 2025 GMT
প্রকৃতিতে মহাবিপন্ন প্রজাতির বাটাগুর বাসকা বা কালি কাইট্টা প্রজাতির ৬৫টি কচ্ছপ জন্ম নিয়েছে সুন্দরবনে। রোববার থেকে বনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রে ডিম ফুটে কচ্ছপছানাগুলো বেরিয়ে আসতে শুরু করে। বিশেষ ইনকিউবেটরের সাহায্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিম থেকে ফোটা বাচ্চাগুলোকে কেন্দ্রের কচ্ছপ লালন-পালনকেন্দ্রের সংরক্ষিত প্যানে রাখা হয়েছে।
গেল ১৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের পুকুরপাড়ে তিনটি বাটাগুর বাসকা মোট ৮২টি ডিম দেয়। পরে সেগুলো সংগ্রহ করে বিশেষ ইনকিউবেটরে (পুকুরপাড়ের বালুর চর) রাখা হয়। রোববার থেকে বাচ্চাগুলো ফুটে বের হতে শুরু করে। সব মিলিয়ে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৬৫টি বাচ্চা হয়। অবশিষ্ট ডিমগুলো নষ্ট হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্য প্রাণী ও প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, করমজল কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৫২১টি ডিম থেকে ৪৭৫টি বাচ্চা ফুটেছে। এ বছর তিনটি বাটাগুর বাসকা মোট ৮২টি ডিম দিয়েছিল। নিবিড় পরিচর্যা ও বিশেষ ইনকিউবেটরে বালুর মধ্যে রেখে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করা হয়। মোট ৬৫টি বাচ্চা ফুটেছে। বাচ্চাগুলোকে কচ্ছপ লালন-পালনকেন্দ্রর সংরক্ষণ প্যানে রাখা হয়েছে। বড় হলে এগুলো সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হবে।
ডিম ফুটে বেরিয়ে এসেছে কচ্ছপের বাচ্চাগুলো। সোমবার সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
দক্ষিণাঞ্চলের পরিবর্তন বুঝতে সুন্দরবনকে জানা জরুরি
ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন এবং জলবায়ুর প্রভাবে জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তৈরি হয় নতুন জনপদ। এতে আগের জনপদের চিহ্ন মুছে যেতে পারে। তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া যায় সুন্দরবনে। এখানে শুধু দেড় হাজার বছর আগের মানববসতি ছিল এমন নয়, মায়োসিন (কয়েক মিলিয়ন বছর আগে) যুগেও এখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে—এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনপদের সেই বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের ঝুঁকি বুঝতে গেলে সুন্দরবনকে বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কখনোই এ জনপদকে ভূতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক জরিপে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি। তাই নিজেদের জনপদের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস আমরা নিজেরাই জানি না।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর লালমাটিয়ায় সাংস্কৃতিক আড্ডার দল জ্ঞাতিজনের ‘সুন্দরবনে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান’ বিষয়ক আড্ডায় এ কথাগুলো বলেন গবেষক ইসমে আজম।
এটি ছিল জ্ঞাতিজনের ৯০তম আড্ডা। এবারের আড্ডায় মূল আলোচক ছিলেন ইসমে আজম। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খুঁজে পাওয়া প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। তিনি বাঘ ও বন্য প্রাণী নিয়ে কাজের সুবাদে দীর্ঘদিন সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ২০১৮ সালে তিনি জানিয়েছিলেন সুন্দরবনে দেড় হাজার বছর আগেও মানববসতি ছিল। শুক্রবারের আড্ডায় তিনি গত কয়েক বছরে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া বিভিন্ন নিদর্শনের ছবি তুলে ধরেন। এর কিছু কিছু নিদর্শনের কার্বন ডেটিং হয়েছে। যেগুলো প্রমাণ করছে এই বস্তুগুলোর অস্তিত্ব কয়েক হাজার বছর আগের।
ইসমে আজম ২০১৮ সালে যখন সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর পাড়ে হাজার বছর আগেও মানববসতি থাকার প্রমাণ খুঁজে পেয়েছিলেন, সেটি নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম আলোতে। গত কয়েক বছরে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে সংগতি রেখে সুন্দরবনের ভেতরের বিভিন্ন নদীর তটরেখা ধরে এগিয়ে পেয়েছেন আরও নতুন নতুন প্রাচীন স্থাপনার সন্ধান। এসব নিদর্শনের মধ্যে কখনো আছে একটি সম্পূর্ণ বসতির চিহ্ন, পাওয়া গিয়েছে মানুষের ব্যবহার করা তৈজসপত্র।
ইসমে আজম জানান, ব্যক্তিগত আগ্রহে এসব গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন খুঁজে পেলেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সুন্দরবনের অনেক নিদর্শন হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যানগ্রোভ ফরেস্টকে আমরা কখনো গুরুত্ব দিইনি বলে এই জায়গার প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান কখনো করা হয়নি। আইনের বেড়াজালে এবং অর্থের অভাবে কাজটি ব্যক্তি উদ্যোগেও সম্ভব হচ্ছে না। সরকারকেই এ জন্য এগিয়ে আসতে হবে। এখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ বন বিভাগের সহযোগিতা।’
ইসমে আজমের একক আলোচনা পর্বের শেষে ছিল শ্রোতাদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। এর আগে হয় সুন্দরবন নিয়ে লেখা তাঁর বই ‘সুন্দরবননামা’র প্রকাশনা উৎসব।
জ্ঞাতিজনের ৯০তম আড্ডায় আরও উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ক গবেষক ও লেখক আলতাফ পারভেজ, লেখক ও সাংবাদিক জাভেদ হুসেন, সংস্কৃতিকর্মী জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, অধ্যাপক ইকবাল আলম খান, জ্ঞাতিজনের সংগঠক মাজহার জীবনসহ আরও অনেকে।