২০১৩ সালের ৫ মে মধ্যরাতে রাজধানীর শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কতজন নিহত হয়েছেন, সে তালিকা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। তবে সংগঠনটির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে গঠিত সাংগঠনিক কমিটি এখন পর্যন্ত ৯৬ জনের নাম তালিকাভুক্ত করেছে, যা এখনো যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই নিহত ব্যক্তিদের তালিকা চূড়ান্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার চিন্তা করছে হেফাজত।

হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার লক্ষ্যে সংগঠনের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী। গত রোববার পর্যন্ত তাঁরা ৯৬ জনের নাম পেয়েছেন। এর মধ্যে ৮০ জনের মতো নিহত ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ নাম, পরিচয় ও ঠিকানা রয়েছে। অন্যদের নাম পাওয়া গেলেও ঠিকানা সংগ্রহ করা যায়নি।

৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন দাবিতে মহাসমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। মহাসমাবেশে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ২০১৩ সালের ৫ মের শহীদের তালিকা চলতি মাসের মধ্যে প্রকাশ করার ঘোষণা দেন।

গণহত্যা হিসেবে এর বিচারের দাবি করছি, ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি। এখন আমরা বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। মাওলানা সাজিদুর রহমান, মহাসচিব, হেফাজতে ইসলাম

ফজলুল করিম কাসেমী প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, সেটি চূড়ান্ত নয়। আমরা এ পর্যন্ত ৯৬ জনের নাম-পরিচয় পেয়েছি। এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশের পর অনেকের অভিভাবকেরা যোগাযোগ করছেন।’

হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফিরে ৭ মে এক বিবৃতিতে দাবি করেছিলেন, ওই অভিযানের সময় আড়াই থেকে তিন হাজার লোক মারা গেছেন। পরে হেফাজতের নেতারা জানিয়েছিলেন, তাঁরা হতাহত ব্যক্তিদের তালিকা করছেন, সেটা যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে। হেফাজত আমিরের বিবৃতির পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।

তবে পরে পুলিশ দাবি করেছিল, শাপলা চত্বরে ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী ২০১৩ সালের ৪ জুন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রশাসনের চাপ ও হয়রানির কারণে তাঁরা ঠিকমতো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না। তখন পর্যন্ত ৭৩ জন নিহত হওয়ার ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন জানান।

হেফাজতের একাধিক নেতা তখন দাবি করেছিলেন, তাঁদের তৈরি একটি খসড়া তালিকা মানবাধিকার সংগঠন অধিকারকে দেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালের ১০ জুন অধিকারের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান অনুসন্ধানের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অধিকার নিহত ৬১ জনের নাম সংগ্রহ করেছে। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের এক মাস পর তথ্য মন্ত্রণালয় ৬১ জনের নাম-ঠিকানা চেয়ে অধিকারকে চিঠি দেয়। কিন্তু অধিকার জানায়, সরকার হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করলে তালিকা হস্তান্তর করা হবে। এর এক মাস পর অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) গ্রেপ্তার করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৯ আগস্ট অধিকার তাদের ফেসবুকে ৬১ জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে।

এ ঘটনাকে ইতিহাসের একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন রাতের অন্ধকারে নির্মমভাবে মাদ্রাসার ছাত্র, হাফেজ, আলেমদের হত্যা করা হয়েছে, আহত ও পঙ্গু করা হয়েছে। অনেকের লাশও গুম করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এর সংখ্যা প্রকাশ করতে একটু সময় নিচ্ছি, যাচাই-বাছাই করছি। আমরা গণহত্যা হিসেবে এর বিচারের দাবি করছি, ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি। এখন আমরা বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জন র ন ম প ইসল ম স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

এটাই হয়তো আমার শেষ নির্বাচন: মির্জা ফখরুল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই নিজের শেষ নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানান। 

আরো পড়ুন:

২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, ৩টি আসনে লড়বেন খালেদা জিয়া

ফখরুলের কণ্ঠ নকল, সতর্ক করল বিএনপি

ঠাকুরগাঁও-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি রাজনীতি জীবনের দীর্ঘ পথচলা, পরিবারের ত্যাগ এবং সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এছাড়া, যারা মনোনয়ন পাননি তাদের ধর্য্য ধরারও আহ্বান জানান। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম লেখেন, “মহান আল্লাহর রহমতে বিএনপি আমাকে ঠাকুরগাঁও ১ আসনে মনোনীত করেছে! আমি বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, এবং সকল নেতা এবং নেত্রীকে আমার কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। দলের সকল কর্মীকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ আজীবন আমার সাথে থাকার জন্য!”

তিনি বলেন, “আমরা যারা সারাজীবন রাজনীতি করেছি, জেলে গেছি, আমাদের নিজেদের একটা গল্প থাকে! অনেকেই তা জানে না! আমি যখন ১৯৮৭ তে সিদ্ধান্ত নেই, আবার রাজনীতিতে ফিরব, আমার মেয়ে দুটো একদমই ছোট ছিলো! ঢাকায় পড়ত। আমার স্ত্রীর বয়স অনেক কম ছিলো! সে প্রথমে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল! বুঝতে পারছিল কি ভয়াবহ অনিশ্চিত জীবনে পা দিতে যাচ্ছে!”

“আমার মেয়ে দুটোর হাত ধরে সেই নিয়ে গেছে স্কুলে, ডাক্তারের কাছে! মনে পরে আমার বড় মেয়ের একটা অপারেশন হবে, আমি সারা রাত গাড়িতে ছিলাম, ঢাকার পথে! যাতে মেয়ের পাশে থাকতে পারি! গল্পগুলো অন্য কোনও দিন বলব যদি আল্লাহ চান! এরকম গল্প আমাদের হাজার হাজার নেতা কর্মীর আছে!”

তিনি আরো বলেন, “এই নির্বাচন হয়তো আমার শেষ নির্বাচন!  যারা মনোনয়ন পায়নি, বিশ্বাস রাখুন, ইনশাআল্লাহ দল আপনাদের যথাযথ দায়িত্ব ও সম্মান দিবে! ”

সবার কাছে দোয়া চেয়ে তিনি লেখেন, “আপনারা সবাই আমার জন্য দুআ করবেন, আমাদের দলের প্রতিটি নেতা কর্মীর জন্য দুআ করবেন! আমরা সবাই মিলে আপনাদের পাশে থাকব এবং কাজ করবো ইনশাআল্লাহ! বিএনপির সেই যোগ্যতা আছে দেশকে মর্যাদার সাথে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার! ইনশাআল্লাহ!  আপনারা পাশে থেকেন।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ