বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও পঞ্চগড় জেলা আমির মাওলানা ইকবাল হোসাইন বলেছেন, “যে প্রশাসনের মাধ্যমে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করেছে, প্রশাসনের সেই দুষ্ট কর্মকর্তারা এখনো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বহাল রয়েছে।  আমরা চাই, এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক। কাজেই আমরা আগে এই দোষীদের বিচারের মাধ্যমে সংস্কার চাই, তারপর নির্বাচন।”

শনিবার (১০ মে) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট ঘটবর দাখিল মাদরাসা মাঠে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাওলানা ইকবাল হোসাইন বলেন, “বন্ধু সংগঠনগুলো থেকে জিকির করা হচ্ছে- সংস্কার চাই না, নির্বাচন চাই। আমরা মনে করি, এতে  কুমতলব আছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মারা যারা প্রশাসনে রয়েছে, তাদেরকে হয়তো তারাও ব্যবহার করতে চায়। এজন্য তারা সংস্কার চান না, তবে আমরা সংস্কার চাই।” 

আরো পড়ুন:

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই

জামায়াত আমির
নারী‌দের ঘর থে‌কে বের হ‌তে দেওয়া হ‌বে না ব‌লে অপবাদ ছড়া‌নো হ‌চ্ছে 

তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা যেভাবে হারানো স্বাধীনতা  পুনরুদ্ধার করেছি, সেভাবে হারানো, অপহৃত ভোটাধিকারকে  পুনরুদ্ধার করতে চাই আগামী নির্বাচনে। বিগত দিনে আমরা দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ছাড়া অন্যদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। মানুষ যাতে আনন্দের সঙ্গে, নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে যেন নিরাপদে তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন আমরা এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই।”

জামায়াতের এই নেতা বলেন, “আজকে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা নেই, তারপরও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, জবরদখল বন্ধ হয়নি। কারা করছে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে, আগামী নির্বাচনে তাদের প্রত্যাখ্যান করে আমরা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই।”

পঞ্চগড় সদর উপজেলা জামায়াতের সভাপতি সফিউল আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন, সহকারী সেক্রেটারি আশরাফুল আলম, মানব সম্পদ বিভাগীয় সভাপতি শহীদ আল ইসলাম, জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য সাইয়েদ নূর-ই-আলম, যুব বিভাগের সভাপতি তোফায়েল প্রধান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আবুল বাশার বসুনিয় ও সদর উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা সুলতান মাহমুদ।

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে হামলাকে হিরোশিমায় পরমাণু বোমা ফেলার সঙ্গে তুলনা ট্রাম্পের

ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে সাম্প্রতিক মার্কিন হামলার সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলার তুলনা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, ১৯৪৫-এ জাপানের ওই দুই শহরে পরমাণু বোমা হামলা যে ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল, একইভাবে ইরানে সাম্প্রতিক মার্কিন হামলা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। 

বুধবার ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ইরানের ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছে। আমি হিরোশিমার উদাহরণ দিতে চাই না। আমি নাগাসাকির উদাহরণ দিতে চাই না। তবে দুই ক্ষেত্রেই মূলত একই ব্যাপার ঘটেছে। ওই হামলায় তখনকার যুদ্ধ বন্ধ হয়েছিল। আর এই (ইরান) হামলায় এখনকার যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে। 

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা করার কারণেই যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে দাবি করে ট্রাম্প বলেন, আমরা যদি এটা (ইরানে মার্কিন হামলা) না করতাম, তা হলে তারা (ইরান ও ইসরায়েল) হয়তো এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যেত।’

ন্যাটো সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, শুধু ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনাই যুক্তরাষ্ট্রের হামলার একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। আরও দুটি টার্গেট ছিল যেগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি এবং সেগুলোতে শত শত মাইল দূরের সাবমেরিন থেকে হামলা করা হয়েছিল। এগুলো বিশ্বের গ্রেটেস্ট সাবমেরিন, এর ধারে কাছেও কেউ নেই। 

তিনি তার বক্তৃতার শুরুতেই ইরানে হামলার প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ‘ব্যাপক, সুনির্দিষ্ট হামলা’ হয়েছে। বিশ্বের আর কোনো সামরিক বাহিনী এটি করতে পারতো না। এখন আমেরিকান শক্তির এই অসাধারণ চর্চা শান্তির পথ খুলে দিয়েছে। তারা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন প্রতিরোধ করেছেন এবং একই সঙ্গে ‘আমেরিকান শক্তির বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন’।

তিনি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিও পড়ে শোনান, যেখানে বলা হয়েছে ‘পারমাণবিক স্থাপনার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে’। কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার প্রসঙ্গ টেনে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তেহরানকে এজন্য ‘সতর্ক’ করা হয়েছে। তিনি জানান, ওই ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ইরানের ছোঁড়া ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের সবকটিই ভূপাতিত করা হয়েছে।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এটম বোমা হামলার পরই জাপান আত্মসমর্পণ করেছিল। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই ঘটনার সঙ্গে গত ২২ জুন ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালায়। হামলা পাল্টা হামলার মধ্যে চলা তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এই যুদ্ধবিরতি চলমান সংঘাতের অবসানের পথে নিয়ে যাবে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। 

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক ঘোষণায় ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। নিজের ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, আগামী ‘প্রায় ছয় ঘণ্টার মধ্যে’ এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, যখন উভয় দেশ তাদের চলমান সামরিক অভিযান ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেবে। এই যুদ্ধকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে নাম দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ঘোষণায় ধীরে ধীরে উভয় দেশের বৈরিতার অবসানের কথা বলা হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, ‘২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে’ এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে বিবেচিত হবে।

মাকির্ন  প্রেসিডেন্ট বলেন, এ যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত। কিন্তু তা হয়নি, এবং কখনও হবেও না! ঈশ্বর ইসরায়েলকে আশীর্বাদ করুন, ঈশ্বর ইরানকে আশীর্বাদ করুন, ঈশ্বর মধ্যপ্রাচ্যকে আশীর্বাদ করুন। ঈশ্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আশীর্বাদ করুন এবং ঈশ্বর বিশ্বকে আশীর্বাদ করুন!

এর আগে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার জবাবে কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এ অবস্থায় সংঘাত আরও চরমে পৌঁছার আশঙ্কার মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নিরসনে একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তার সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরও এই যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ