আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও আহতদের উন্নত চিকিৎসার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহতরা। রোববার সকালে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন।
এর আগের দুইদিন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে সেখানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এনসিপিসহ চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল, এবি পার্টি, লেবার পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ জুলাই অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন।
রাজপথে চলমান আন্দোলনের আহত অংশগ্রহণকারীরা বলেন, তারা কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানারে আন্দোলন করলেও ‘জুলাই সনদ’কে হারিয়ে যেতে দিতে চান না। আহতদের দাবি, তাদের জীবন থাকতেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর পুনর্বাসন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।
তারা আওয়ামী লীগকে ‘ভারতের রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘কার্যক্রম নিষিদ্ধের নামে নাটক নয়, আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে দলটিকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে।’ আন্দোলনকারীদের স্পষ্ট বার্তা, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়া তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
এছাড়া তারা দাবি করেন, রাজপথে অবস্থানকালেই ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করতে হবে। আহতদের চিকিৎসা নিশ্চয়তা দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসা জরুরি বলেও তারা জানান। দাবি তোলা হয়, আহতদের আজীবন চিকিৎসার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।
আন্দোলনকারীরা হুশিয়ারি দেন, যতদিন পর্যন্ত না তাদের সব দাবি পূরণ হবে, ততদিন পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না।
এর আগে শনিবার (১০ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। এর পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই গণঅভ য ত থ ন আহতদ র আওয় ম র জপথ
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে জুলাই শহীদ স্মৃতি সম্মাননা ও আহতদের সংবর্ধনা
চট্টগ্রামে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি সম্মাননা ও আহতদের সংবর্ধনা’ দিয়েছে সন্তান ও অভিভাবক ফোরাম। আজ রোববার বিকেল ৩টার দিকে থিয়েটার ইন্সটিটিউটে জুলাই আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২৮ জুলাই শহীদ পরিবারের হাতে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি সম্মাননা স্মারক’ এবং আহত ১০০ জনকে ‘জুলাই যোদ্ধা সম্মাননা স্মারক’ প্রদান করা হয়।
অধ্যাপক ডা. মো. আব্বাস উদ্দিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহদাত হোসেন। অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতা, শহীদদের পরিবার, আন্দোলনকারী ও নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি ডা. শাহাদাত হোসেন সন্তান ও অভিভাবক ফোরামকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তি এড়িয়ে সুন্দর বাংলাদেশে গড়ার অনুরোধ জানান তিনি।
জুলাই শহীদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান আন্দোলনে শহীদ ছেলে নাফিজকে স্মরণ করেন। তিনি ছেলে হত্যার বিচারে অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। এর জন্য সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলাও আহ্বান জানান তিনি।
জুলাই যোদ্ধা সাইফুদ্দিন এমদাদ গণহত্যাকারী সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের সহায়তাকারীদেরও বিচারের দাবি জানান।
হাসান আলী ১০ মাসেও ছেলে শহীদ আলভীর বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। বিচার নিয়ে প্রহসন না করার আহবান জানান তিনি।
শহীদ ইমামের ভাই রবিউল আউয়াল ভুঁইয়া সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত জোর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শহীদ সৈকতের বোন শারমিন আফরোজ সেবন্তি জুলাই’২৪ এর আন্দোলনে এলোপাতাড়ি গুলি, হাত-পা হারানো অসংখ্য যোদ্ধা, বাবা-মায়ের অসহায়ত্ব তুলে ধরেন।গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে সরকারের গড়িমসি ও চালাকি করছে বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
জুলাই যোদ্ধা ডা. জুনায়েদ রায়হান বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার এখনও না হওয়ায় হতাশা হয়েছি।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতি মাসের ১৮ তারিখ আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। এ তারিখে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়।’
শহীদ আহনাফের মা জারতাজ পারভীন বলেন, ‘আমার সন্তানের হত্যাকারীরা এখনও বাইরে। তারা কার মদদে এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে? তারা কীভাবে এখনও দেশের বাইরে যাচ্ছে?’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শহীদ ওয়াসিমের বাবা শফি আলম, শহীদ শ্রাবণের বাবা নেসার আহমেদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহ নেওয়াজ, চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক এস এম নসরুল কদির, সন্তান ও অভিভাবক ফোরামের সমন্বয়ক ডা. শাকিল আরিফ চৌধুরী, ডা. দলিলুর রহমান, আহত যোদ্ধা আরিফুল ইসলাম ফরহাদ, জিসান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডা. ইশরাত জাহান।