স্কেলের আঘাতে শিশুর চোখ ক্ষতিগ্রস্ত: কুমিল্লার সেই স্কুলশিক্ষক গ্রেপ্তার
Published: 11th, May 2025 GMT
স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ ওঠা কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি সেবা মাল্টিমিডিয়া স্কুলের সহকারী শিক্ষক রাহাতুল ইসলাম ওরফে সৌরভকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সন্ধ্যা সাতটায় তিতাস থানা পুলিশ বাতাকান্দি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
রাহাতুল ইসলাম সৌরভ বাতাকান্দি বাজারের বাসিন্দা। তাঁকে আপাতত থানাহাজতে রাখা হয়েছে। তিনি কুমিল্লার হোমনা ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র। ঘটনার ১০ মাস আগে রাহাতুল ওই স্কুলে চাকরি নিয়েছিলেন।
গত ৩০ এপ্রিল প্রথম আলোতে ‘শিক্ষকের স্কেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত চোখ, ৮ মাস ধরে শিশুটির চিকিৎসায় পরিবারের ছোটাছুটি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি তিতাস থানা পুলিশের নজরে আসে। এর পর থেকে সৌরভকে গ্রেপ্তারে একাধিকবার অভিযান চালায় পুলিশ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফারহান ইসলাম রোহান (৭) তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামের ওমানপ্রবাসী রবিউল ইসলামের ছেলে। ফারহানের মা মায়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর স্কুলশিক্ষকের স্কেলের আঘাতে তাঁর ছেলের রোহানের ডান চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসার জন্য আট মাস ধরে ছেলেকে নিয়ে দেশ-বিদেশে ছোটাছুটি করছেন তাঁরা। ছেলের চোখে দুবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আঘাতে তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে গেছে। বাঁ চোখের আলো শতকরা ১০ ভাগ কমে গেছে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার সময় উপজেলার বাতাকান্দি এলাকার সেবা মাল্টিমিডিয়া স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত ফারহান। পাঠদানের সময় স্কুলটির সহকারী শিক্ষক রাহাতুল ইসলাম তার দিকে স্কেল ছুড়ে মেরেছিলেন। তাঁরা জানতে পেরেছেন, শিক্ষক রাহাতুল ক্লাসে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। ফারহানসহ ক্লাসের শিশুশিক্ষার্থীরা হইচই করলে শিক্ষক প্রচণ্ড রেগে যান। তিনি প্রথমে স্কেল দিয়ে ফারহানের পিঠে বাড়ি দেন। এতে স্কেল ভেঙে যায়। শিক্ষক নিজের জায়গায় ফিরে যাওয়ার পরও হইচই বন্ধ হচ্ছিল না। তখন তিনি আরও রেগে যান। তিনি ভাঙা স্কেলটি ফারহানের দিকে ছুড়ে মারেন। স্কেলটি ফারহানের ডান চোখে গিয়ে লাগে। এ ঘটনায় গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষক রাহাতুলের বিরুদ্ধে তিতাস থানায় অভিযোগ করেন ফারহানের মা। অভিযোগে গুরুতর আঘাত করে চোখ নষ্ট করার কথা বলা হয়। অভিযোগটি মামলা হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছে তিতাস থানার পুলিশ।
তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র হ ত ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজার সৈকতে উৎকট দুর্গন্ধ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দুই কিলোমিটারজুড়ে উৎকট দুর্গন্ধের কারণে পর্যটকদের হাঁটাচলা কঠিন হয় পড়েছে। পর্যটকদের পছন্দের জায়গা সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত গত এক সপ্তাহ ধরে ময়লা পানি থেকে এ দুর্গন্ধ ছড়ালেও এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে সাগর পাড়ের ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছে সৈকতে পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ করছে।
ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে কক্সবাজারের পর্যটন নিরাপত্তা, সৌন্দর্য ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই। শুধু তাই নয়, সৈকত দিয়ে হোটেল-মোটেল জোনের ময়লা পানি সরাসরি গিয়ে মিশছে সমুদ্রে।
এসব কারণে পর্যটক ও স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সৈকতে ঘুরতে গিয়ে অনেকেই পড়ছেন বিড়ম্বনায়। নিরাপত্তার পাশাপাশি সৌন্দর্যহানি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করছেন তারা।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, এতে যেমন দূষিত হচ্ছে প্রকৃতি, তেমনি পর্যটকদের জন্য তৈরি হচ্ছে প্রাণঘাতী এক ফাঁদ। যদিও প্রশাসন বলছে, এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে নির্দেশনা রয়েছে এবং কেউ আইন লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতের ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশ ঘেঁষে হোটেল মোটেল জোনের ময়লা পানি সরাসরি সাগরে চলে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে এই পথ দিয়েই হোটেল-মোটেল জোনের বর্জ্য ও দূষিত পানি মিশে সমুদ্রে যাওয়ার কারণে সাগরের পানি থেকে উৎকট দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, কয়েকবছর আগেও এ এলাকায় পানি স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতো পাশের একটি ছড়ার মাধ্যমে। সেটি প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের সামনে দিয়ে গিয়ে মিশতো সাগরে। সম্প্রতি অতিথিদের চলাচলের সুবিধার্থে ছড়াটি বালুর বস্তা দিয়েছে ক্যাফে কর্তৃপক্ষ।
এরপর সেই পানি নিষ্কাশনে বালিয়াড়ি কেটে তৈরি করা হয়েছে একটি ড্রেন। ফলে বৃষ্টির পানি, জোয়ার-ভাটা এবং ঢলের সময় এটি রূপ নেয় প্রবল স্রোতের এক বিপজ্জনক পথে। কয়েক দিনেই ড্রেনটি হয়ে উঠেছে আরও চওড়া, গভীর।
প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘সুয়েজের পানি যখন শুকায় তখন বিশ্রী গন্ধ হয়ে যায়। হোটেলের যত সুয়েজের লাইন এটা দিয়ে সমুদ্রে নামে। ফলে পর্যটকদের চলাচলে সমস্যা হয়।’
ডিভাইন ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেন শাওন বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের এসব সমস্যা পর্যটনের স্বার্থে দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।’
পর্যটক ও স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন আবাসিক ও কলকারখানার পানি এসে সমুদ্রে মিশে যাচ্ছে। সমুদ্রের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এই নালা আমরা এখানে আশা করি না। এই পানিগুলো অনেক ময়লা।
এদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন, সৈকতের আশপাশে গড়ে তোলা অনেক স্থাপনা এখনও যুক্ত করা হয়নি শহরের মূল ড্রেনেজ ব্যবস্থার সাথে। এমন প্রেক্ষাপটে অপরিকল্পিত, কৃত্রিম ড্রেনের কারণে সৈকতের স্বাভাবিক গঠন বিপর্যস্ত হচ্ছে। দূষণ ছড়াচ্ছে সমুদ্রজুড়ে, আর গুপ্তখাল থেকে তৈরি হচ্ছে সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা ঝুঁকি বা প্রাণঘাতী ফাঁদ।
পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, ‘কৃত্রিম ড্রেন খনন করার জন্য এর স্রোত সমুদ্রে যাচ্ছে। যেই সমুদ্রে যাচ্ছে এখানে একটি গুপ্তখাল সৃষ্টি হচ্ছে। যা সমুদ্রের ভেতর দেখা যায় না। পর্যটকরা এটা না জেনেই ওই জায়গায় গোসল করছে। ফলে তারা জীবনঝুঁকিতে পড়ছেন।’
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো জমির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আছে, কক্সবাজার পৌরসভা আছে তাদের ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে। এ বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।’