আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে, ডলারের দাম ‘বাজারভিত্তিক’ করার সিদ্ধান্তের পর আজ বৃহস্পতিবার ডলারের বাজারে তেমন প্রভাব নেই। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশের ডলারের বাজারে তেমন কোনো প্রভাব এখন পর্যন্ত পড়েনি। ব্যাংকগুলো আগের দামে প্রবাসী আয় কিনছে এবং ডলার বিক্রি করছে, যা ১২৩ টাকার মধ্যে রয়েছে।

অন্যদিকে খোলাবাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে। খোলাবাজারের ব্যবসায়ীরা ১২৪ টাকা ৭০ পয়সা দামে ডলার কিনছেন এবং ১২৫ টাকা দামে বিক্রি করছেন। তবে ব্যাংকগুলোতে ডলার আগের মতো বিক্রি হচ্ছে ১২৩ টাকা দামেই। তবে ডলারের দাম নিয়ে ব্যবসায়ী ও বিদেশ ভ্রমণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের মধ্যে আগ্রহ দেখা গেছে।

আজ সকাল থেকে দেশের শীর্ষ পাঁচটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকেরা ডলারের খবর জানতে অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে বেশি খোঁজখবর করছেন। অনেকে ডলার কেনার জন্য ব্যাংকে গেছেন। আবার খোলাবাজারেও একটু চাপ দেখা গেছে। অনেকে বাড়তি মুনাফার আশায় ডলার মজুত করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোতে পাঁচ কোটি ডলারের নগদ মুদ্রা মজুত আছে। তাই যে কেউ গেলেই ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে। তাই গ্রাহকেরা যাতে বাজার থেকে বেশি দামে ডলার না কেনেন, এমন পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো আজ বাড়তি দাম ‘অফার’ করেনি। বেশি দাম চাওয়া কয়েকটি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার না কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম বলে জানান তাঁরা।

অন্যদিকে ঈদকে সামনে রেখে বেশি প্রবাসী আয় আসছে। পাশাপাশি নগদ ডলার দেশে ঢুকছে। এতে ঈদের আগে কোনোভাবেই ডলারের বাজার অস্থির হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা ঘোষণা দেন। মূলত আইএমএফের ঋণের কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে এই উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে দাম কী হবে, তা ব্যাংক ও গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ডলারের দাম আরও বাজারভিত্তিক হবে, সঙ্গে থাকবে জোরদার তদারকি।

গতকালে সংবাদ সম্মেলনে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাজারভিত্তিক মানে এই নয় যে ডলার যেকোনো দামে কেনাবেচা হবে। আমাদের সরবরাহ পরিস্থিতি এবং পূর্বাভাস অনুযায়ী, যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। বড় ধরনের প্রয়োজন দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে। ডলারের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট বরদাশত করা হবে না। ডলারের দাম দুবাইয়ে নয়, দেশেই নির্ধারিত হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের নীতি নির্ধারণ করছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও জাইকা: আনু মুহাম্মদ

শেখ হাসিনার আমলে যারা সিদ্ধান্ত নিত, ইউনূস আমলেও তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘দেশের সব নীতি নির্ধারণ করছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও আইএমএফ। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আমাদের আমলাতন্ত্র আর ব্যবসায়ীরা।’

সকালে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউটে নাগরিক উদ্যোগের আয়োজনে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে এক সেমিনারে এ কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

আনু মুহাম্মদ বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা শেখ হাসিনার উন্নয়ন মডেলকে মিরাকল বা অলৌকিক বলেছিল। তারা আলাদা উন্নয়ন ধারা তৈরি করেছিল। এখন তারাই আবার নীতি নির্ধারণ করছে। উপদেষ্টারাও বিদেশিদের জন্য নীতি নির্ধারণে বেশি উৎসাহী।

গোপন চুক্তি নিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে জনগণকে জানাতে হবে। এটাই মুক্তবাজার অর্থনীতির নীতি। গোপন চুক্তি না করে এই সরকারের পরিবর্তনের দিশা তৈরির সুযোগ ছিল। তারা আগের গোপন চুক্তিগুলো প্রকাশ করতে পারত, যাতে পরের সরকারগুলো এমন চুক্তি করতে উৎসাহী না হয়। কিন্তু এসব বিষয়ের কোনো পরিবর্তন হয়নি, বিষয়টি আশা ভঙ্গের।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণ করা বা বিলম্ব করার বিষয়ে এখনো সরকারের সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ এখনো এ জন্য প্রস্তুত নয়, যদিও আমরা আগের পরিসংখ্যান বয়ে বেড়াচ্ছি। নতুন সরকার হয়তো উত্তরণ করবে। আমরা নিয়মের মধ্যে কিছু প্রস্তুতি নিচ্ছি মাত্র।’

মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে প্রধান অতিথি বলেন, এফটিএ মানে ফোর্স ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট বা জোরপূর্বক বাণিজ্য চুক্তি, এটা ছাড়া কোনো অর্থ হয় না। সেমিনারে এলডিসি উত্তরণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশের নীতি নির্ধারণ করছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও জাইকা: আনু মুহাম্মদ