ডাকাতিয়া যেন ভাগাড়, ফেলা হচ্ছে বাজারের আবর্জনা
Published: 18th, May 2025 GMT
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজারের ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ডাকাতিয়া নদী। বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীটিকে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে।
নদীদূষণের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকেরা। তাঁদের দাবি, এ অবস্থার কারণে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ক্রেতা, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এ ছাড়া পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নদী রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
৪ মে সরেজমিনে দেখা যায়, বাগমারা বাজারের উত্তরে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সেতুর কাছে ময়লা-আবর্জনা বিশাল স্তূপ। দুর্গন্ধে সেখানে দাঁড়ানোও কষ্টকর। বাজারের কয়েক শ দোকান, শতাধিক বসতবাড়ি ও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা নিয়মিতভাবে নদীতে ফেলা হয়। কেউ কেউ রেললাইনের পাশেও ময়লা ফেলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগমারা বাজার এলাকার এক তরুণ বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে দিনরাত যে যেভাবে পারছেন নদীর আধা কিলোমিটার এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। বিশেষ করে বাজারের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী, মুরগি, মাছ, মাংস ও তরকারি ব্যবসায়ীরা ময়লা বস্তায় ভরে নদীতে ফেলছেন। যখন পানি বেশি থাকে, তখন এসব ময়লা স্রোতে ভেসে যায়। এ ছাড়া অনেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রেখে পরিবেশ দূষণ করছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জানান, নদীর পাড় ঘেঁষে শতাধিক বসতঘর আছে। নদীর পাড়ে বাগোরা উচ্চবিদ্যালয়, বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগমারা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ। এ ছাড়া নদী–সংলগ্ন মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়ে দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহান মুসল্লিরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা বাধ্য হয়ে নদী ও রেললাইনের পাশে ময়লা ফেলছি। কারণ, আমাদের ময়লা ফেলার জন্য কোনো জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি বাজার কমিটি, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন।’
বাজার কমিটির আহ্বায়ক ও বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন বলেন, একটি জায়গা ভাড়া নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে চার বছর ময়লা ফেলা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কুমিল্লা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, নদীদূষণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের সভায় তোলা হবে।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব জানান, নদী রক্ষার দায়িত্ব পাউবোর এবং ময়লা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের।
নদীদূষণ ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিমাদ্রী খীসা। তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তদন্তে দেখা গেছে, পানি নামার নালাগুলো ময়লা দিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এভাবে নদীতে ময়লা ফেলা চলতে থাকলে পরিবেশ আরও দূষিত হবে। এখনই কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ ব যবস য় ব গম র পর ব শ প রক শ র ময়ল উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নগর ভবনের সব ফটকে তালা, দুর্ভোগে সেবাপ্রত্যাশীরা
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে ইশরাক সমর্থকরা। যার ফলে নগর ভবনে সেবা নিতে আসা নাগরিকরা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তবে নগর ভবনে থাকা সোনালী ও জনতা ব্যাংকের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
রবিবার (১৮ মে) দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকসহ সব ফটকে তালা ঝুলছে এবং সেবাপ্রত্যাশীরা হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
নগর ভবনের সামনে প্রধান ফটকে কথা হয় সেবাপ্রার্থী সেলিম হোসেনের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমি যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছি ছেলের জন্মনিবন্ধন নেয়ার জন্য, কিন্তু এসে শুনছি অফিস বন্ধ। আগে জানলে এত যানজট ঠেলে আসতাম না। এখন তো ঢাকায় দেখি প্রতিদিনই আন্দোলন হয়। আসলে সাধারণ মানুষের জিম্মি করে এই সকল আন্দোলন করা ঠিক না। সরকারের উচিত এই বিষয়গুলোতে বিশেষ নজর দেয়া।”
রাজধানীর লালবাগ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংক্রান্ত কাজের জন্য নগর ভবনে আসেন ব্যবসায়ী ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমার দোকানের জন্য কয়েকদিন ধরে ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার জন্য নগর ভবন এসে ফেরত যেতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেক ভোগান্তিকর বিষয়। দোকান খোলা রেখে এসে এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা সম্ভব নয়। আর আন্দোলনের জন্য গত বৃহস্পতিবার থেকে সিটি কর্পোরেশনের সকল অফিস বন্ধ। এজন্য আমাদের মতো যারা সাধারণ সেবাপ্রার্থী রয়েছে তাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”
ডিএসসিসির ৩৩ নং ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, “ইশরাক হোসেন হলো জনতার মেয়র। আদালত ন্যায্য রায় দিয়েছে, তবুও কেন এত টালবাহানা বুঝি না। আমাদের দাবি অতিদ্রুত ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।”
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদল নেতা নাদিম হাসান বলেন, “২০২০ সালে যখন নির্বাচন হয়েছে তখনই ইশরাক হোসেন তাপসের থেকে বেশি ভোট পেয়েছিল, কিন্তু তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ভোট চুরি করে তাপসকে মেয়র ঘোষণা করেছে। এখন আদালত ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেছে এবং নির্বাচন কমিশন গেজেট দিয়েছে। তারপরও এখন তাকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে কেন এত দেরি সেটা আমাদের প্রশ্ন। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলছি, কোনো টালবাহানা করে লাভ নেই, অতি দ্রুত ইশরাকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করছি।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিরাপত্তাকর্মী মোকসেদুর রহমান বলেন, “নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা, শুধুমাত্র এই ভবনে থাকা সোনালী ও জনতা ব্যাংক ছাড়া। ভবনের ১৩ ও ১৪ তলায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া স্যারের অফিসসহ সব তলায় তালা দেওয়া হয়েছে। এখন অনেকে সেবার জন্য এসে ফেরত যাচ্ছে।”
নগর ভবনে তালার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। সেবাপ্রার্থীরা নগর ভবন এসে ফেরত যাচ্ছেন, এটা একটা দুঃখজনক বিষয়। আমরাও অফিস করতে পারছিনা। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ মিলে বিষয়টি সমাধান করলে সবার জন্য ভালো।”
প্রসঙ্গত, বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ মার্চ রায় দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ঢাকা/রায়হান/ফিরোজ