পরিস্থিতি-ব্যবস্থা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন: বাঁধন
Published: 19th, May 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর ভাটারা থানার এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে। সোমবার (১৯ মে) তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে জোর চর্চা চলছে সারা দেশে। সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বিষয়টিকে বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন। গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ফারিয়ার ঘটনা নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন এই অভিনেত্রী।
সোমবার (১৯ মে) বাঁধন তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে ফারিয়ার একটি ছবি পোস্ট করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে এ অভিনেত্রী লেখেন, “কি লজ্জা! ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা জনগণের সঙ্গে যা করেছে, তার সঙ্গে এই মেয়েটির কোনো সম্পর্ক নেই। আমি পরিস্থিতি এবং ব্যবস্থা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন দেশে বাস করি না, যেখানে ন্যায়বিচার সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এটি সত্যিই গ্রহণযোগ্য নয়।”
আরো পড়ুন:
হাঁটুর বয়সি নায়িকাকে চুমু, সমালোচনার মুখে কমল হাসান
হেরা ফেরি থ্রি: এবার সরে দাঁড়ালেন পরেশ রাওয়াল
বাঁধনের এ পোস্টে অসংখ্য মন্তব্য পড়েছে। সেখানেও একাধিক শিবিরে ভাগ হয়ে নানা মন্তব্য করছেন। এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকে হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল দেশের বাইরে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নুসরাত ফারিয়াকে। মামলা সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সংশ্লিষ্ট ২৮৩ জন ও অজ্ঞাতনামা তিন-চারশ’ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি। মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থ যোগান দাতা হিসেবে আসামি করা হয় নুসরাত ফারিয়াকে।
২০১৫ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়া এবং কলকাতার এসকে মুভিজের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমা ‘আশিকি’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এরপর শুরু হয় একের পর এক সিনেমায় কাজ করার অধ্যায়।
‘হিরো ৪২০’, ‘বাদশা দ্য ডন’, ‘প্রেমী ও প্রেমী’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘বস ২’, ‘বিবাহ অভিযান’— প্রায় প্রতিটি কাজেই তিনি চেষ্টা করেছেন নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে। ২০২৩ সালে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেন নুসরাত ফারিয়া।
শুধু নায়িকা হিসেবেই নয়, ফারিয়া নিজেকে মেলে ধরেছেন গায়িকা ও মডেল হিসেবেও। ‘পটাকা’ গান দিয়ে গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অনলাইনে ঝড় তোলেন। আবার ‘ডোর’ ফ্যাশন হাউজের ব্র্যান্ড মডেলসহ নানা বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন পরিচিত মুখ হিসেবে।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।