যে দেশের প্রধান খাদ্য ভাত, সে দেশে কেউ সারা জীবনে যদি ভাত খেতে না পারে, সেটা কিছুটা অস্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। সম্প্রতি এমন একজনের কথা আমরা পত্রিকায় দেখতে পেয়েছি। অনেকে এটা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ভাত খেতে না পারা কি কোনো অসুস্থতা?
রোগীর হয়তো ভাতের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকতে পারে, যদিও এটি বিরল। খাদ্যে সংবেদনশীলতা থাকলে সেই খাবার খেলে বমি হতে পারে। এমনকি পেট ও অন্যান্য অঙ্গ ফুলে যাওয়া, পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। গুরুতর সংবেদনশীলতা থাকলে হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। তাই গুরুতর রিঅ্যাকশন হলে অবিলম্বে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুনপ্রতিদিন কি লাল চালের ভাত খাওয়া ভালো০২ মে ২০২৫

কারও ভাতে অ্যালার্জি থাকলে অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। কোনো কোনো রোগীর সাদা বা লাল ভাতে আ্যলার্জি থাকতে পারে, সেটাও টেস্টে নিশ্চিত হওয়া যায়। লাল ভাতে অ্যালার্জি থাকলে রোগীর উচিত হবে ওটস, বার্লি, রাই না খাওয়া।
যাঁদের ভাতে অ্যালার্জি আছে, তাঁরা আরও এড়িয়ে চলবেন—চালের গুঁড়া, ভাতের মাড়, দুধ, রাইস কেক, রাইস নুডলস, রাইস পুডিং, সুশি ইত্যাদি।
অনেক সময় কাউকে যদি ছোটবেলায় জোর করে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে রোগীর মধ্যে একধরনের ভীতি কাজ করে। মানসিক কারণে তাঁর ভাত না খাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তাই কারণ নির্ণয় করা জরুরি।

সমাধান কী

বিশ্বের অনেক জাতি জীবনে কখনো ভাত চোখেই দেখেনি, খাওয়া তো দূরের কথা। তাই ভাতই খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। যদি একান্তই ভাত খেতে না পারেন, তাহলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। শর্করার অন্যান্য উৎস থেকে শক্তি পাবেন। যেকোনো শস্যজাতীয় খাবার (গম, যব, ভুট্টা) খেলে ভাতের অভাব পূরণ হবে। আলু শর্করার উৎস, যা ভাতের মতোই কাজ করে। তবে যাঁদের গ্লুটেনে অ্যালার্জি থাকে, তাঁরা গমের তৈরি খাবার, যেমন আটার রুটি বা পাউরুটি খেতে পারেন না। মানসিক হলে ভাতের প্রতি সংবেদনশীলতা চিরস্থায়ী না–ও হতে পারে।

আরও পড়ুন৩৭টি ভাত খেয়ে বাংলাদেশের সুমাইয়া যেভাবে গিনেস রেকর্ড করলেন২৩ ডিসেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে

জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।

এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্পর্কিত নিবন্ধ