আমি অন্তর্মুখী। তাই সব সময় মনে হতো, গুরুত্বপূর্ণ মিটিং চলাকালে আমি কথা বলি না। কিন্তু তারপর উপলব্ধি করলাম, আমার নিজের ভালো গুণগুলোর প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া এবং যোগাযোগে ভালো করার দিকে নজর দেওয়া উচিত। আরও বুঝতে পারলাম, সব সময় আমার কথা বলার আদতে প্রয়োজনও নেই।

আমি কাজ করতাম এক স্বাস্থ্যসেবাদাতা কোম্পানিতে। একদিন অন্য এক কোম্পানি আমাদের কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করল। আমাদের নতুন কোম্পানির প্রধান কার্যালয় ছিল সান দিয়াগোতে। আমাকে ঘিরে একটা টেবিলের চারপাশে কোম্পানির নেতৃত্বস্থানীয় অনেকে বসে ছিলেন। এদিকে আমি ভাবছিলাম, তাঁরা কি কোম্পানি একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? আমার খুবই অবাক লাগছিল, তাই চুপ করে রইলাম। সেদিনের মিটিংয়ে বলতে গেলে অংশই নিইনি। শুধু মনে হচ্ছিল, তাঁরা ভাবছেন, আমাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে? কেন আমি খামাখা একটা চেয়ার দখল করে রেখেছি?

মিটিংয়ের পর হোটেলে নিজের রুমে গিয়ে ভাবতে থাকলাম, আমার কী কী বলা উচিত ছিল, কী কী প্রশ্ন করতে পারতাম, এ রকম আরও অনেক কিছু। আর অন্তর্মুখী হওয়ার জন্য নিজেকে দোষ দিতে থাকলাম। মনে হলো, ইশ্, যদি গুছিয়ে কথা বলতে পারতাম! নিজের চিন্তাভাবনা আর আইডিয়াগুলো দ্রুত গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারতাম!

আরও পড়ুনইতি, তোমার অন্তর্মুখী বন্ধু২০ জুন ২০১৮

আমি অন্তর্মুখী—কথাটি যখন বলি, তখন মানুষ প্রায়ই অবাক হয়। কারণ, আমি আমার ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় কাজ করেছি প্রশিক্ষক ও বক্তা হিসেবে।

নিজেকে চেনার জন্য কিছু পরীক্ষা করার এবং মার্কিন লেখক সুজান কেইনের ‘কোয়ায়েট: দ্য পাওয়ার অব ইন্ট্রোভার্টস ইন আ ওয়ার্ল্ড দ্যাট ক্যান নট স্টপ টকিং’ বইটি পড়ার পর আবিষ্কার করলাম, আমি আদতেই অন্তর্মুখী। বইটি আমাকে নিজের কিছু ইতিবাচক দিক আবিষ্কার করতে সাহায্য করেছে, যেসব অন্তর্মুখিতার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন মনোযোগ দিয়ে শোনা; যা কিছু শুনি, তা নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করা এবং ভালো প্রশ্ন করতে পারা।

এর অর্থ হলো আমি অনেক বহির্মুখীর মতো মুখে কোনো কথা বলি না। আমার এই বৈশিষ্ট্যের কারণে অফিসের পরিবেশে খাপ খাওয়ানো আমার জন্য কঠিন হতে পারে। অনেক অফিস চলেই শুধু মিটিং আর মুক্ত আলোচনার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু আমার মস্তিষ্ক অন্যভাবে কাজ করে। তাই আমাকে আমার পথ খুঁজে নিতে হয়েছে। নিচের ৩টি পরামর্শ অন্তর্মুখী হয়েও কর্মক্ষেত্রে আমাকে উন্নতি করতে সহায়তা করেছে।

১.

নিজের ইতিবাচক দিকগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে শিখেছি

সেদিন মিটিং শেষে হোটেল রুমে ফিরে আসার পর লিখতে বসলাম, কী কারণে কোম্পানির সিইও আমাকে মিটিংয়ে রেখেছেন এবং কোম্পানি একীভূতকরণের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে নির্বাচিত করেছেন। কয়েকটি কারণ ভেবে বের করতে পারলাম। যেমন আমি পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম; প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমার দক্ষতা আছে।

বুঝতে পারলাম, অন্তর্মুখী হওয়ার কারণে আমার যেসব গুণ আছে, যেমন মনোযোগ দিয়ে শোনা, ভালো ভালো প্রশ্ন করা, এসব গুণ আমার ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই আমি একজন দলনেতা হিসেবে ভালো করতে পারব।

আরও বুঝতে পারলাম, আমার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর না–ও থাকতে পারে। তবু নিজের শিখতে ও প্রশ্ন করতে পারার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে মিটিংয়ে আলোচনার সূত্রপাত করতে পারি কিংবা গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যা কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন, সেসব নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে পারি।

আরও পড়ুনকীভাবে বুঝবেন আপনি একই সঙ্গে বহির্মুখী ও অন্তর্মুখী০৬ অক্টোবর ২০২২২. শব্দ বাছাইয়ের পরিবর্তে সংযোগ তৈরির ওপর মনোযোগ দিয়েছিলাম

প্রেজেন্টেশনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বিভ্রান্ত হয়ে পড়তাম। আমার কী বলা উচিত, সঠিক পদ্ধতি কী, যদি দর্শক-শ্রোতা আমাকে বোকা ভাবে? এসব বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করতাম।

এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখেছি, কোন পদ্ধতিতে প্রেজেন্টেশন দেওয়া আমার মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? প্রেজেন্টেশনটির মাধ্যমে দর্শক-শ্রোতার মধ্যে কী ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি করতে চাই?

যখন এভাবে চিন্তা করতে শুরু করলাম, তখন আমার ভয়গুলো নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না। বরং দর্শক-শ্রোতার সঙ্গে আমার সংযোগ গড়ে তোলার প্রতি বেশি করে নজর দিলাম।

৩. আমার শুধু তখনই কথা বলা উচিত, যখন আমাকে বলতেই হবে

বেশ কয়েক বছর আগে আমার ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের (আইভিএফ) ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলাম। আর্টিকেলটি যখন ছাপা হলো, তখন অনেকেই না জেনে–বুঝে অনেক মন্তব্য করতে শুরু করলেন, যা ছিল ভীষণ কষ্টদায়ক।

কমেন্টগুলো পড়ে কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু আর্টিকেলটি লেখার জন্য আমার কোনো অনুশোচনা হয়নি। কারণ, বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং কর্মস্থল–সংক্রান্ত নীতিমালার উন্নয়নের পক্ষে কথা বলা আমার মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই অভিজ্ঞতা থেকে শিখলাম, আমার কথাগুলো তখনই সবচেয়ে শক্তিশালী হবে, যখন কথাগুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। আগে মনে করতাম, বহির্মুখী এবং সফল হতে হলে আমাকে সবকিছু নিয়েই কথা বলতে হবে। বিষয়টি আদতে এমন নয়। আমাকে খুঁজে নিতে হবে আমার কাছে কোন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো সেই বিষয়েই আমাকে কথা বলতে হবে। বুঝতে পেরেছি, জীবনে সফল হতে হলে আমি যেমন, সেভাবেই নিজেকে গ্রহণ করতে হবে। আমি কী বলব এবং কখন বলব, সে ব্যাপারে নিজেকেই নির্দেশনা দিতে হবে।

সূত্র: এমএসএন

আরও পড়ুনঅন্তর্মুখী নাকি বহির্মুখী, কোন ধরনের মানুষেরা বেশি সুখী১৪ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য মন য গ আম র ক

এছাড়াও পড়ুন:

মনের ক্ষত সারাতে এসব কাজ করতে পারেন

জীবনে আপনি যত খারাপ অনুভূতির সম্মুখীনই হোন না কেন, সব সময়ের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে ভালোবাসা। অন্যের কথায় নিজেকে ছোট ভাবতে নেই। প্রত্যেক মানুষই অনন্য। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজের মনের ক্ষত আপনি নিজেই সারিয়ে তুলতে পারবেন। মনের ক্ষত সারানোর কিছু উপায় জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক

কারণ বিশ্লেষণ

ঠিক কোন কারণে মনটা বেশি আহত হয়েছে, তা বুঝতে চেষ্টা করুন। আবেগের মুহূর্তে গোটা পৃথিবীকেই অন্য রকম দেখায়। ধীরেসুস্থে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন কেন কষ্ট পাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই মনের ক্ষতের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কেবল অন্যের তির্যক কথা। কারও কোনো কথা আপনার জীবনে বড়সড় প্রভাব ফেলছে কি না, তা ভেবে দেখুন। অবশ্যই মনে রাখবেন, চমৎকার সুন্দর এই পৃথিবী অনেক ক্ষেত্রেই নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে যে কারও সঙ্গে। অনেক মানুষ তাঁর ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ অন্যের ওপর প্রকাশ করে ফেলেন। যাঁর কারণে আপনি কষ্ট পেলেন, তিনি যদি আপনার আপনজন হয়ে থাকেন, তাঁর ওই আচরণের কারণ উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুন। আর খুব কাছের কেউ না হলে অন্যের আচরণকে অতটা গুরুত্ব দিতে নেই।

ক্ষমা করুন, নিজেকেও

কাছের মানুষদের ক্ষমা করে দিন। তাতে আপনার নিজের মনের ক্ষত সারানো সহজ হবে। আবেগের বশে আপনি কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকলে সেটিও আপনার মন খারাপের কারণ হতে পারে। নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজেকে ক্ষমা করুন। আপনজনের কাছে ছোট্ট একটি শব্দে দুঃখ প্রকাশ করলে তাতেও মনের আঘাত সামলানো সহজ হয়।

ভাবনাগুলো ভাগ করে নিন

কী কারণে কষ্ট পাচ্ছেন, তা নিয়ে আলাপ করতে পারেন খুব কাছের কোনো মানুষের সঙ্গে। যাঁর সঙ্গে সমস্যা হয়েছে, তাঁর সঙ্গেই আলোচনা করতে পারেন। সমাধানে আসতে পারেন। কিংবা ধরা যাক, অফিসে কোনো সমস্যা হয়েছে, যা নিয়ে আপনি অশান্তিতে আছেন। সে বিষয়ে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাতে বিষয়টির সমাধান না হলেও আপনার মনের কষ্ট কমবে।

এমন কিছু কথা থাকতে পারে, যা আপনি কাউকেই বলতে পারছেন না, সেসব নিজের মতো করে লিখে রাখুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ