চীনে মাসিকের জন্য ছুটি চাওয়ায় ছাত্রীকে প্যান্ট খুলে প্রমাণ দিতে বলল কর্তৃপক্ষ
Published: 26th, May 2025 GMT
চীনের বেইজিংয়ের একটি কলেজে এক ছাত্রী ঋতুস্রাব বা মাসিকের কারণে ছুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু এই ছুটি পেতে তাঁকে মাসিক প্রমাণের জন্য প্যান্ট খুলতে বাধ্য করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানির পর দেশটিতে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছে।
চলতি মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ক্লিনিকের ভেতরে এক তরুণী একজন বয়স্ক নারীকে প্রশ্ন করছেন, ‘সব মেয়েকে কি মাসিকের প্রমাণ দিতে প্যান্ট খুলে দেখাতে হয়?’
জবাবে ওই নারী বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা আমাদের নিয়ম।’
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে বেইজিংয়ের গেংদান ইনস্টিটিউট বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একটি ক্লিনিকে। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের কর্মীরা কেবল ‘আচরণবিধি অনুসরণ করেছেন’। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ঘটনাটিকে গুরুতর গোপনীয়তা লঙ্ঘন বলে এর সমালোচনা করছেন।
মন্তব্যের জন্য ওই ছাত্রী ও গেংদান ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বিবিসির তরফে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ছাত্রীটির ভিডিও এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের বিবৃতি কোনোটিই এখন আর অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে স্ক্রিনশট ও অংশবিশেষ এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে। এমনকি চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
টিকটকের চীনা সংস্করণ ‘দৌয়িনে’ এক ব্যবহারকারী নিজেকে ওই ছাত্রী বলে দাবি করছেন। তিনি জানান, ভিডিওটি পোস্ট করার পর তাঁর অ্যাকাউন্ট ‘অশ্লীল কনটেন্ট’ ছড়ানোর অভিযোগে ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
১৬ মে দেওয়া বিবৃতিতে গেংদান ইনস্টিটিউট দাবি করে, ‘ঘটনার ভিডিওগুলো ‘বিকৃতভাবে’ ছড়ানো হয়েছে। যারা “অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ভিডিও ছড়িয়েছে”, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আমাদের অধিকার রয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মীরা সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। যেমন ছাত্রীর অনুমতি নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে এবং কোনো যন্ত্রের ব্যবহার বা শারীরিক পরীক্ষা করা হয়নি।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই শিক্ষার্থী যখন স্কুলের কর্মীর কাছে জানতে চান, ‘স্কুলের কোন নিয়মে মাসিক প্রমাণ করতে বলা হয়েছে, আমাকে সেটার প্রমাণ দেখান।’ তখন ওই কর্মী কোনো জবাব দেননি। বরং তিনি ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিদ্রূপের জন্ম দিয়েছে। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘আমার মাথাব্যথা করছে, এটা কি আমি মাথার খুলি খুলে দেখাব?’
আরেকজন চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে লিখেছেন, ‘চলুন, প্যাড খুলে অসুস্থতার দরখাস্তে তা লাগিয়ে দিই!’
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘দুতে নিউজ’–কে গেংদান ইনস্টিটিউটের এক কর্মী জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে ভুয়া মাসিকের অজুহাতে ছুটি না নেয়, সে জন্য এমন নিয়ম করা হয়ে থাকতে পারে।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে এই যুক্তি খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।
ওয়েইবোতে আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘যদি শিক্ষার্থীরা মাসে একাধিকবার মাসিকের অজুহাতে ছুটি নেয়, তাহলে একটা রেকর্ড রাখলেই তো হয়। এটা কোনো জটিল বিষয় নয়।’
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও এই বিতর্কে অংশ নিয়েছে। চায়না ন্যাশনাল রেডিওর একটি মতামতে বলা হয়েছে, ‘মাসিক এমনিতেই নারীদের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। এমন নিয়ম শিক্ষার্থীদের অস্বস্তিতে ফেলতে পারে, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।’
এই ঘটনার পর গেংদান ইনস্টিটিউট এখন সেই সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে, যেগুলো শিক্ষার্থীদের ওপর ‘বাড়াবাড়ি রকমের নিয়ন্ত্রণ আরোপের’ চেষ্টা করে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
গত বছর চীনের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসে বিছানার চারপাশে পর্দা ঝোলাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সমালোচনার মুখে পড়ে। যেসব কক্ষে অনেকে একসঙ্গে থাকেন, সেখানে গোপনীয়তা রক্ষার্থে শিক্ষার্থীরা প্রায় সময় এই ধরনের পর্দা ব্যবহার করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এগুলো অগ্নিনিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
এ ছাড়া গত বছর মে দিবস উপলক্ষে জনপ্রিয় ছুটির মৌসুমে শিক্ষার্থীদের ভ্রমণ পরিকল্পনা নিয়েও চীনের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কঠোর নির্দেশনা দেয়। এতে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে একা ভ্রমণ, সড়কপথে ভ্রমণ বা সাইকেল ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। অনেকেই এটিকে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনে অযথা হস্তক্ষেপ বলে মনে করেন।
চীনের আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ই-কমার্স অ্যাপ শিয়াওহংশুতে গেংদান ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘স্কুলের ক্লিনিক নিয়ে যেসব সমালোচনা হচ্ছে, তা যথাযথ।’
ওই শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘বড়দের কাছ থেকে শুনেছি, এমন ঘটনা আগেও হয়েছে। কিছু মেয়ে আগেও অভিযোগ করেছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। এবার বিষয়টা নিয়ে অন্তত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে, মানুষ চুপ থাকেনি, এটাই স্বস্তির।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র র জন য ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
ফখরুলের কণ্ঠ নকল, সতর্ক করল বিএনপি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠ নকল করে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
ঐক্যের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই: ফখরুল
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু কুচক্রি মহল পুরোনো প্রেস কনফারেন্সের ছবি ও বক্তব্য এডিট করে এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করেছে। তারপর তা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে, বিএনপি মহাসচিব আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করেছেন। বিএনপি বলছে, এই ভিডিও পুরোপুরি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই এই কুচক্রি মহল ভিডিও প্রচার করছে। দেশের মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী এবং এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এ ধরনের এডিট করা ভিডিও দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছে বিএনপি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ