নগরবাসীর সুবিধায় প্রতি কোরবানির ঈদের আগে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) পশুর হাট বসায়। জোড়াগেট পাইকারি কাঁচাবাজারে এবারও ১ জুন শুরু হবে এই হাট; যা চলবে ঈদের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ক্রেতারা জানিয়েছেন, ওই হাটে উচ্চহারে খাজনা আদায় করা হয়। এ জন্য পশু কিনতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয় তাদের।
জেলার উপজেলা পর্যায়ে স্থাপিত হাটগুলোতে দেড় থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত খাজনা আদায় করা হয়। কোথাও কোথাও নেওয়া হয় এর চেয়েও কম। কেসিসির এই পশুর হাটে খাজনা দিতে হয় ৫ শতাংশ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতারা। তাদের ভাষ্য, প্রতি বছর কোরবানির গরু ও ছাগলের দাম বাড়ছে। মাঝারি আকারের গরুর দামই কয়েক বছর আগে লাখ টাকা ছুঁয়েছে। এমন একটি গরু কেসিসির ওই হাট থেকে কিনতে হলে ৫-৭ হাজার টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হয়। এটিকে বাড়াবাড়ি উল্লেখ করে তারা এবার খাজনা কমানোর দাবি তোলেন।
নগরীর শেখপাড়ার বাসিন্দা হুসাইন আহমেদ সোহাগ বলেন, পশু কেনার জন্য বন্ধুদের নিয়ে প্রতি কোরবানি ঈদের আগে আশপাশের সব হাটে যান। নগরীর জোড়াগেট হাটে পশুর দাম যেমন বেশি, হাসিলও বেশি। তেরখাদায় যত বড় গরুই কেনা হোক না কেন, ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার বেশি হাসিল লাগে না। একই আকারের গরুর হাসিল জোড়াগেটে দিতে হয় ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। শাহপুর, চুকনগর, আঠারো মাইল হাটেও হাসিল দুই হাজার টাকার মধ্যে থাকে। কেসিসির জোড়াগেট হাটে সবকিছুর খরচ বেশি।
জানা গেছে, এবার জেলায় ২৬টি পশুর হাট বসবে। খুলনার সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুরে। এই হাটে ২ শতাংশ করে রাজস্ব (খাজনা) আদায় করা হয়। একই উপজেলার আঠারো মাইল ও চুকনগরেও বড় হাট বসে। সেখানেও আদায় করা হয় ২ শতাংশ হারে।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ২ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায়ের সিদ্ধান্ত হলেও গরু ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের কাছ থেকে আরও কম রাখা হয়।
তেরখাদা উপজেলার ইখড়িতেও বসে বড় একটি হাট। ওই হাটের ইজারাদার মিলটন মুন্সির ভাষ্য, গরুর ব্যাপারীদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা ও সাধারণ ক্রেতার কাছ থেকে দেড় শতাংশ হারে খাজনা আদায় করা হয়। অনেকে এ টাকাও দেন না।
কেসিসি সূত্র জানায়, জোড়াগেট পাইকারি কাঁচাবাজারে পশুর হাট বসছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত কখনও ইজারা দিয়ে, কখনও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনা করত কেসিসি। খাজনার উচ্চ দরের কারণে ২০০৯ সালের পর থেকে ইজারার দরপত্রে সাড়া মেলেনি। সেই থেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনা করে আসছে কেসিসি। চলতি বছরও ইজারায় কেউ অংশ নেয়নি। তাই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবারও ৫ শতাংশ হারে খাজনা আদায়ের কথা।
এই হাটে ২০২৪ সালে বিক্রি হয় ৬ হাজার ২২৭টি পশু। হাসিল হিসেবে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে ৬ হাজার ২০টি পশু বিক্রি থেকে আদায় হয়েছে ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২২ সালে ৬ হাজার ৭৬০টি পশু বিক্রি থেকে আদায় হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। নগরীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবছর এই হাট থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও তা নগরবাসীর উপকারে আসে না। আয়ের বিপুল অংশ কেসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানীর পেছনে খরচ হয়। সরকারকে ভ্যাট, আয়কর দিয়ে বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। গত ১৫ বছর হাট থেকে আয় করা টাকার মধ্যে খরচ বাদ দিয়ে ১৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যাংকে পড়ে আছে।
কেসিসির রাজস্ব কর্মকর্তা এস কে তাছাদুজ্জামানের দাবি, সরকারি হাট পরিচালনা নীতিমালায় ৫ শতাংশ হারে খাজনা নেওয়ার কথা রয়েছে। যদিও কেসিসির বাজার শাখা থেকে সরকারি হাট বাজারগুলোর ব্যবস্থাপনা ইজারা পদ্ধতি ও বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালা সংগ্রহ করে দেখা যায়, ৫ শতাংশ খাজনা আদায়ের কথা কোথাও উল্লেখ নেই। সেখানে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি টোল বা খাজনার হার নির্ধারণ করবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
কেসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা বলেন, অনেক আগে কেসিসির সাধারণ সভায় পশুর হাটে ৫ শতাংশ হারে খাজনা আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে ৫ শতাংশ হারে আদায় করা হচ্ছে।
খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, শহরের হাটে পশুর দাম বেশি থাকে। এখানে ৫ শতাংশ মানে অনেক টাকা। যেহেতু আলোচনার মাধ্যমে টোল নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেসিসির উচিত হাটের টোল কমিয়ে দেওয়া।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত এই হ ট উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।