সেতুর অ্যাপ্রোচে বড় গর্ত ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল
Published: 26th, May 2025 GMT
কুমিল্লার তিতাসে মজিদপুর-মোহনপুর সড়কের মাটিয়ারা নদীর ওপর মোহনপুর সেতুর অ্যাপ্রোচের মাটি দেবে গিয়ে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এর পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। যে কোনো সময় সড়ক ধসে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে স্থানীয় লোকজন ও চালকরা জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার ভোরে সেতুর পূর্ব প্রান্তে একাধিক স্থানের মাটি দেবে যায়। জানা গেছে, সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হলে মজিদপুর ও জগতপুর ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষ চলাচলে ভোগান্তির শিকার হবেন। বিকল্প পথে অতিরিক্ত ১২ থেকে ১৩ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হবে তাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা সদর কড়িকান্দি বাজার থেকে একটি পাকা সড়ক মোহনপুর গিয়ে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে মাটিয়ারা নদীর ওপর মোহনপুর সেতু। উভয় প্রান্তের অ্যাপ্রোচের কাজ গত বছর শেষ করা হয়। পশ্চিম প্রান্ত ঠিক থাকলেও সেতুর পূর্ব প্রান্তে একাধিক স্থানে মাটি দেবে গর্ত হয়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে গর্ত দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়। এ সময় দুই গর্তের মাঝের অংশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছিল। সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক দেলোয়ার হোসেন ও আব্দুল আলীমের ভাষ্য, প্রথমে গর্তটি ছোট ছিল। সোমবার ভোরে যাত্রী নিয়ে আসার সময় দেখেন, বড় হয়ে গেছে। মূল রাস্তার মাঝে গর্ত হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এ সড়কে দুই শতাধিক অটোরিকশা চলাচল করে।
একাধিক যাত্রী জানান, উপজেলা সদরে যাওয়া-আসার জন্য এটি পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। মজিদপুর ও জগতপুর ইউনিয়নের ১৫-১৬টি গ্রামের লোকজন এ পথে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাওয়া-আসা করেন।
বিষয়টি নজরে এসেছে জানিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।