গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। এবার প্রথম ধাপে আজ চীনে যাচ্ছে ৫০ টন আম। বিভিন্ন দেশে ৫ হাজার টন আম রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ফার্মগেটের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে আম রপ্তানি উদ্বোধন করেন কৃষি উপদেষ্টা মো.

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কৃষক, উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক, দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।

অনুষ্ঠানে কৃষি উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আমের যথেষ্ট সুনাম ও চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে উন্নত দেশের মূলধারার সুপার মার্কেটগুলোতে আম সরবরাহ করা গেলে রপ্তানির পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং আম উৎপাদনকারীরা লাভবান হবেন।

তিনি বলেন, বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি করতে আম রপ্তানি খুবই সম্ভাবনাময়। কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার আম রপ্তানির মাধ্যমে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে।

উপদেষ্টা বলেন, কৃষকদের উৎপাদনে উৎসাহ দিতে হবে, তাহলেই উৎপাদন বাড়বে। কৃষকের উপকারে কাজ করলেই ভোক্তা উপকৃত হবে। রপ্তানি বাড়াতে হবে। আমদানি যেন কমে আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আম উৎপাদন গতবারের তুলনায় বেশি হয়েছে বলেও দাবি করেন কৃষি উপদেষ্টা।

কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, গুণগত মান বজায় রেখে এবার রপ্তানিতে রেকর্ড গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আম ছাড়াও কাঁঠাল ও লিচু রপ্তানির দিকেও নজর দিচ্ছে সরকার। 

তিনি বলেন, দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে রপ্তানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বিমান ভাড়া কমাতে কার্গো বিমানের বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা দিতে ২০২২ সালের জুলাই থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন,  কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়ায় ফল ইতিবাচক।

চীনে আম রপ্তানির পথ উন্মুক্ত হয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক সফরে। তার আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চীন ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৮ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া ঘাসুড়া এলাকার একটি আমবাগান পরিদর্শন করেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

চীনে আম রপ্তানি উপলক্ষে আজ বুধবার বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিআইপি গেটেও এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ম হ ম মদ উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ