ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কর্মচারীদের সঙ্গে সেবা প্রার্থী ও হাসপাতালে ভর্তি জুলাই আন্দোলনে আহতের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। 

বুধবার (২৮ মে) বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে দুপুর দেড়টার দিকে সেবাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

এদিকে, হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং আহতদের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছিলেন কর্মচারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। কর্মবিরতির ফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এতে কয়েকশ রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান।

আরো পড়ুন:

বরিশালে মেডিকেল ছাত্রের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার

রোগী সেজে জামালপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুদকের অভিযান

জানা গেছে, শিডিউল অনুযায়ী অপারেশন করার কথা থাকলেও তা করা যাচ্ছে না। আউটডোরে লাইন থাকলেও টিকিট দেওয়ার লোক নেই। রুমের সামনে লোক থাকলেও ডাক্তার ও কর্মকর্তা নেই। শুধু জরুরি বিভাগ চলছে।

হাসপাতাল প্রাঙ্গণে একজন রোগী বলেন, “চোখের চিকিৎসার জন্য গাজীপুর থেকে আসছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি নার্স এবং কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন, তাই চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছি।”

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম জানান, সেনাবাহিনী আসার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলও হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা আপাতত বন্ধ রয়েছে। 

সম্প্রতি হাসপাতালটিতে চার জন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত রোগী বিষপান করেন। এটিকে কেন্দ্র করে পরিচালক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, গায়ে হাত তোলা, ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটেছে। পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, “গতকালকের একটি অনভিপ্রেত ঘটনার কারণে স্টাফরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। যার কারণে তারা কর্ম বিরতিতে গেছে আমি জানি। তবে আমি ছুটিতে, আমার পরিবর্তে আরেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” 

গতকালের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গতকাল জুলাই যোদ্ধারা আমার কাছে এসেছিল। তারা আমার রুমেই নিজেদের মধ্যে তর্কে লিপ্ত হয়। মারামারি করে। কেউ আবার পেট্রোল নিয়ে আসছে। পেট্রোল কী জন্য নিয়ে আসছে, জানি না। নিজেরা সুইসাইডাল অ্যাটাক করবে, না হাসপাতাল জ্বালিয়ে দিতে আনছে জানি না। কারণ, তাদের মধ্যে নানান বিভাজন আছে। এরপরে একপক্ষ আবার আমাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলাম। পরে জুলাই যোদ্ধারাই আমাকে নিরাপত্তা দিয়ে বের করে দিয়েছে।”

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনে চোখে গুরুতর আঘাত পাওয়া ৫৫ জন এখনো ওই হাসপাতালে আছেন। তাদের মধ্যে গত রবিবার চার জন বিষ পান করেন। যাদেরকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ