ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে বড় ধরনের আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে তাদের সেরা কিছু বাহিনীসহ ৫০ হাজারেরও বেশি সেনা ওই অঞ্চলের কাছে মোতায়েন করেছে। বড় এই হামলা থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে বিরত রাখার জন্য কিয়েভ পদক্ষেপ নিচ্ছে। 

মঙ্গলবার (২৭ মে) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন দাবি করেন জেলেনস্কি। বুধবার (২৮ মে) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।      

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া এমন এক সময়ে ইউক্রেনে গ্রীষ্মকালীন হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যখন কিয়েভ যুদ্ধবিরতি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য মস্কোর শর্তাবলী তুলে ধরে একটি স্মারকলিপি হাতে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।

আরো পড়ুন:

ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার ‘বাকযুদ্ধ’

পুতিন ‘আগুন’ নিয়ে খেলছেন: ট্রাম্প

ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলের প্রধান শহরটি রাশিয়ার কুরস্ক সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) এরও কম দূরে অবস্থিত। ইউক্রেনীয় বাহিনী গত বছর রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে প্রবেশের জন্য সুমি অঞ্চলকে লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করেছিল।

গত মাসে কুরস্কে রাশিয়ান বাহিনী কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত হওয়ার আগে ইউক্রেনীয় বাহিনী কুরস্কের বিশাল এলাকা দখল করেছিল। যদিও ইউক্রেনের দাবি, সেখানে এখনো কিছু ছোট এলাকা তাদের দখলে রয়েছে।

জেলেনস্কি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “রাশিয়ার বৃহত্তম ও শক্তিশালী বাহিনী বর্তমানে কুরস্ক ফ্রন্টে রয়েছে। আমাদের সৈন্যদের কুরস্ক অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এবং সুমি অঞ্চলের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য।”

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এর আগে বলেছিলেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে একটি ‘বাফার জোন’ চান। তবে মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, রাশিয়া সুমি সীমান্তের প্রায় ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) ভেতরে  ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের একটি বড় এলাকা দখল করতে চায়।

রাশিয়া গতকাল মঙ্গলবার সুমি অঞ্চলের কমপক্ষে চারটি সীমান্ত গ্রাম দখল করেছে। সুমির গভর্নর ওলেহ হ্রাইহোরভ ফেসবুকে লিখেছেন, নোভেনকে, বাসিভকা, ভেসেলিভকা এবং ঝুরাভকা গ্রাম রাশিয়া দখল করেছে, যদিও বাসিন্দাদের অনেক আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

এছাড়াও রাশিয়ান বাহিনী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পূর্ব ইউক্রেনের কোস্টিয়ানটিনিভকা শহরের কাছে ফ্রন্টলাইনের কিছু অংশে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে।

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলছেন, তাদের বাহিনী গত দুই দিনে ওই এলাকায় রুশ বাহিনীকে ৪ কিলোমিটার (২.

৫ মাইল) পিছু হঠতে বাধ্য করেছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি জানান, তার সরকার যেকোনো ধরনের শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তিনি প্রত্যাশা করেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে পরবর্তী আলোচনাটি প্রযুক্তিগত স্তরে হবে।

জেলেনস্কি উল্লেখ করেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন ইউক র ন র প রস ত ত র জন য ক রস ক

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ