ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওই ছাত্রীর বয়স ১৯। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্য পুনের এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়েন। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ গ্রেপ্তার করে তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল মঙ্গলবার তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

হাইকোর্টের দুই বিচারপতি গৌরী গডসে ও সোমশেখর সুদর্শনের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘একটা মেয়ে ভুল করেছে। ভুল স্বীকারও করেছে। কোথায় তাকে ঠিক–বেঠিক বোঝাবেন, তা নয়, তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করছেন, যেন তিনি এক দাগী অপরাধী।’

বিচারপতিরা বলেন, ওই ছাত্রীর সঙ্গে এই আচরণ অত্যন্ত মর্মান্তিক। রাজ্য সরকারের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, ‘এভাবে আপনারা একজন ছাত্রীর জীবন নষ্ট করতে পারেন না।’

পুনের ইয়ারাদা জেল থেকে ওই ছাত্রীকে গতকাল জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি বিচারপতিরা বলেন, মুক্তির ব্যাপারে কোনো টালবাহানা যেন না হয়। মঙ্গলবারেই তাঁকে মুক্তি দিতে হবে, যাতে তিনি পরীক্ষায় বসতে পারেন।

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করায় ওই ছাত্রীকে যেমন গ্রেপ্তার করে মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার, তেমনি হরিয়ানার অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করেছিল বিজেপিশাসিত হরিয়ানা ও দিল্লি পুলিশ। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট আলি খানের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। আজ বুধবার তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

আলি খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১৮ মে। পুনের এক বেসরকারি কলেজের তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা শেখকে গ্রেপ্তার করা হয় ৯ মে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সরকারের সমালোচনা করার পর তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়।

খাদিজা সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছিলেন ৭ মে। পরদিনই সেই পোস্ট তিনি প্রত্যাহার করে নেন। এর এক দিন পর মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গেই কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করে। কারণ হিসেবে বলা হয়, খাদিজা শেখ কলেজের সম্মান নষ্ট করেছেন। দেশবিরোধী মনোভাব প্রকাশের কারণে নিজের সম্প্রদায় ও সমাজকে ঝুঁকির মুখে দাঁড় করিয়েছেন।

গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে খাদিজা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। গরমের ছুটি সত্ত্বেও হাইকোর্টের অবকাশকালীন বিচারপতিরা তাঁকে জামিন দেওয়ার পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা করেন রাজ্য সরকার ও কলেজ কর্তৃপক্ষের।

বিচারপতিরা বলেন, রাষ্ট্র এমন উগ্র আচরণ করলে সমাজে উগ্রপন্থা বেড়ে যাবে। কেউ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেছেন বলে এভাবে তাঁর জীবন নষ্ট করা যায় না।

বিচারপতিরা বলেন, ওই ছাত্রী কোনো অপরাধী নন। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ শুধু পুঁথিগত শিক্ষাদান নয়, প্রকৃত সুশিক্ষা দেওয়া। কাউকে অপরাধী করে তোলা নয়।

খাদিজার আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশি পাহারা ছাড়াই খাদিজার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ব চ রপত র ওই ছ ত র সরক র র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

আসামে সরকারি স্কুলের শিক্ষককে বাংলাদেশে পুশ ইন করল ভারত

নাগরিকত্ব নিয়ে মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন হলেও আসাম রাজ্যের এক সরকারি স্কুলের সাবেক শিক্ষককে জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খায়রুল ইসলাম নামের ৫১ বছর বয়সী ওই সাবেক স্কুলশিক্ষকের স্ত্রী ও কন্যা এই অভিযোগ করেছেন।

বাংলাদেশি নাগরিক ‘দাগিয়ে’ এভাবে জবরদস্তি ‘পুশ ব্যাক’ নীতির বিরোধিতা করে আসামের বিরোধী দল এআইইউডিএফের এক প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্যের সঙ্গে দেখা করে ‘পুশ ব্যাকের মাধ্যমে অমানবিক আচরণ’ বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

ভারতের জাতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ওই প্রতিনিধিদলের নেতা বিধায়ক আমিনুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার ১৪ জনকে সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হলেও বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করেনি। ফলে তাঁরা নো ম্যানস ল্যান্ডে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। এই আচরণ অমানবিক।

খায়রুল ইসলাম নাগরিকত্ব মামলায় জড়িত। ২০১৬ সালে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাঁকে বিদেশি ঘোষণা করার পর তিনি রায়ের বিরুদ্ধে গুয়াহাটি হাইকোর্টে মামলা করেন। ২০১৮ সালে হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন। এরপর তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, বিদেশি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে যাঁরা দুই বছরের বেশি কারাগারে রয়েছেন, তাঁদের জামিনে মুক্তি দিতে হবে। সেই রায়ের পর খায়রুল জামিন পান।

খায়রুলের আইনজীবী অভিজিৎ রায় গণমাধ্যমকে বলেন, মামলাটি এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। শেষ শুনানি হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মক্কেলকে জবরদস্তি পুশ ব্যাক করা হয়েছে। রাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ শুধু বেআইনিই নয়, অসাংবিধানিকও।

খায়রুলের স্ত্রী রীতা খানম ও কন্যা আফরিন জানিয়েছেন, খায়রুলের এ অবস্থা তাঁরা জানতে পারেন ২৭ মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড হওয়া এক ভিডিও থেকে। ওই ভিডিওতে এক বাংলাদেশি সাংবাদিক দাবি করেন, খায়রুল ইসলাম বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার বড়াইবাড়ি সীমান্তের কাছে রয়েছেন।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, খায়রুল তাঁর পরিচয় জানিয়ে বলছেন, তিনি মরিগাঁও জেলার খান্দা পুখুরি গ্রামের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক।

রীতা খানম ও আফরিনের অভিযোগ, ২৩ মে পুলিশ খায়রুলকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘বিদেশি’ বলে চিহ্নিত ব্যক্তিদের রাখার জন্য তৈরি মাটিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে। সেখান থেকে ২৭ মে হাত-পা ও চোখ বেঁধে তাঁকে একটি বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য।

এআইইউডিএফের প্রতিনিধিরা রাজ্যপালকে বলেছেন, এভাবে বহু মানুষকে রাজ্যে আটক করা হচ্ছে। পুশ ব্যাক করা হচ্ছে। রাজ্যে একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

খায়রুল ইসলামের বর্তমান অবস্থান ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ নিয়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বা রাজ্য সরকার এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিএসএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, ২৭ মে আসামের দক্ষিণ সালমারা-মানকাচর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন বাংলাদেশের কিছু নাগরিক। বিএসএফ চ্যালেঞ্জ জানালে তাঁরা ফিরে যান। বিএসএফের ওই বিবৃতিতে অবশ্য খায়রুল ইসলামের নাম বা তাঁর অবস্থান নিয়ে কিছু ছিল না।

দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, পেহেলগামের ঘটনার পর রাজধানী দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মোট ৪৭০ জনকে ‘বাংলাদেশি’ চিহ্নিত করে সে দেশে পাঠানো হয়েছে। গত ছয় মাসে এভাবে ফেরত পাঠানো হয়েছে ৭৭০ জনকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যতদিন শেখ হাসিনা ভারতে থাকবেন ততদিন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না: সারজিস
  • আসামে সরকারি স্কুলের শিক্ষককে বাংলাদেশে পুশ ইন করল ভারত
  • কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের
  • সাপ্তাহিক ছুটি ও মানবিক আচরণ চান গৃহকর্মীরা
  • সরকারের ওপর অব্যাহত চাপ জাতি ভালোভাবে দেখছে না: চরমোনাই পীর
  • রায়পুরায় ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছেলের শাবলের আঘাতে বাবার মৃত্যু
  • আমাদের ‘আচরণে-পারফরমেন্সে’ কষ্ট পেলে ক্ষমা করে দেবেন: জামায়াত আমির
  • আমাদের কোনো আচরণে, পারফরমেন্সে কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন: জামায়াতের আমির