সরকারের সমালোচনা করায় এভাবে কারও জীবন নষ্ট করতে পারেন না: মহারাষ্ট্র সরকারকে হাইকোর্ট
Published: 28th, May 2025 GMT
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওই ছাত্রীর বয়স ১৯। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্য পুনের এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়েন। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ গ্রেপ্তার করে তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল মঙ্গলবার তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
হাইকোর্টের দুই বিচারপতি গৌরী গডসে ও সোমশেখর সুদর্শনের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘একটা মেয়ে ভুল করেছে। ভুল স্বীকারও করেছে। কোথায় তাকে ঠিক–বেঠিক বোঝাবেন, তা নয়, তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ করছেন, যেন তিনি এক দাগী অপরাধী।’
বিচারপতিরা বলেন, ওই ছাত্রীর সঙ্গে এই আচরণ অত্যন্ত মর্মান্তিক। রাজ্য সরকারের উদ্দেশে তাঁরা বলেন, ‘এভাবে আপনারা একজন ছাত্রীর জীবন নষ্ট করতে পারেন না।’
পুনের ইয়ারাদা জেল থেকে ওই ছাত্রীকে গতকাল জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি বিচারপতিরা বলেন, মুক্তির ব্যাপারে কোনো টালবাহানা যেন না হয়। মঙ্গলবারেই তাঁকে মুক্তি দিতে হবে, যাতে তিনি পরীক্ষায় বসতে পারেন।
অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করায় ওই ছাত্রীকে যেমন গ্রেপ্তার করে মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার, তেমনি হরিয়ানার অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করেছিল বিজেপিশাসিত হরিয়ানা ও দিল্লি পুলিশ। গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট আলি খানের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। আজ বুধবার তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
আলি খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১৮ মে। পুনের এক বেসরকারি কলেজের তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা শেখকে গ্রেপ্তার করা হয় ৯ মে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সরকারের সমালোচনা করার পর তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়।
খাদিজা সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছিলেন ৭ মে। পরদিনই সেই পোস্ট তিনি প্রত্যাহার করে নেন। এর এক দিন পর মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গেই কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে বহিষ্কার করে। কারণ হিসেবে বলা হয়, খাদিজা শেখ কলেজের সম্মান নষ্ট করেছেন। দেশবিরোধী মনোভাব প্রকাশের কারণে নিজের সম্প্রদায় ও সমাজকে ঝুঁকির মুখে দাঁড় করিয়েছেন।
গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে খাদিজা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। গরমের ছুটি সত্ত্বেও হাইকোর্টের অবকাশকালীন বিচারপতিরা তাঁকে জামিন দেওয়ার পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা করেন রাজ্য সরকার ও কলেজ কর্তৃপক্ষের।
বিচারপতিরা বলেন, রাষ্ট্র এমন উগ্র আচরণ করলে সমাজে উগ্রপন্থা বেড়ে যাবে। কেউ নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেছেন বলে এভাবে তাঁর জীবন নষ্ট করা যায় না।
বিচারপতিরা বলেন, ওই ছাত্রী কোনো অপরাধী নন। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ শুধু পুঁথিগত শিক্ষাদান নয়, প্রকৃত সুশিক্ষা দেওয়া। কাউকে অপরাধী করে তোলা নয়।
খাদিজার আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশি পাহারা ছাড়াই খাদিজার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ব চ রপত র ওই ছ ত র সরক র র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।
ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।