দীর্ঘ সময় ধরে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার টাকা পাচ্ছেন না বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। অর্থ সংকট ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর নানা জটিলতায় এই অর্থ প্রাপ্তির অপেক্ষা আরও বেড়েছে। অবসর ও কল্যাণ সুবিধা মিলিয়ে ৮৫ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন অনিষ্পন্ন হয়ে জমা পড়ে আছে। এসব আবেদনের বিপরীতে টাকা দেওয়ার জন্য বোর্ডে ঘাটতি রয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। আর এই সংকট কমাতে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টে ২২০০ কোটি টাকা বরাদ্দে সম্মতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে গত ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহরিয়ার জামিল স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি সম্মতিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে ২০০০ কোটি টাকা (বন্ড হিসেবে) এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে ‘মূলধন তহবিল’ গঠনের লক্ষ্যে ২০০ কোটি টাকা (অনুদান হিসেবে) বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানের চিঠিতে বলা হয়, “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাসময়ে অবসর সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহায়তা কার্যক্রমের অধীনে ‘১৩৫০০৩৪০০-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’ এর অনুকূলে ‘স্থায়ী তহবিল’ গঠনের লক্ষ্যে ‘৩৬৩১১৯৯-অন্যান্য অনুদান’ খাতে ২০০০ কোটি টাকা অর্থ বিভাগের ১০৯০১০১-১২০০০১০০০৫৯১১১১২- অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত হতে বরাদ্দ প্রদানে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি আপন করা হলো। বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জারিকৃত সংশোধিত কর্তৃত্ব অর্পণ আদেশের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।

শর্তে উল্লেখ করা হয়, (ক) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান ৬ অনুযায়ী অধিক আলোর লক্ষ্যে বোর্ডের অনুকূলে ‘স্থায়ী তহবিল’ হিসাবে প্রদত্ত ২০০০ কোটি টাকা লাভজনক সরকারি সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে; (খ) সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার ১ (এক) সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে; এবং (গ) ‘স্থায়ী তহবিল’ হিসাব হতে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে এবং ট্রেজারি বন্ডকৃত ‘স্থায়ী তহবিল’ হতে কোন অর্থ অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধুমাত্র সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ‘চলতি তহবিলে’ জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।”

অন্যদিকে শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ প্রদানের চিঠিতে বলা হয়, “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যথাসময়ে কল্যাণ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সহায়তা কার্যক্রমের অধীন ১৩৫০০৩৫০০-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে ‘মূলধন তহবিল’ গঠনের লক্ষ্যে ‘৩৬৩১১৯৯-অন্যান্য অনুদান’ খাতে ২০০ কোটি টাকা টাকা অর্থ বিভাগের ‘১০৯০১০১-১২০০০১০০০-৩৯১১১১২- অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত হতে বরাদ্দ প্রদানে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জারিকৃত সংশোধিত কর্তৃত্ব অর্পণ আদেশের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।

শর্তে উল্লেখ করা হয়, (ক) বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর প্রবিধান ৭ এ বর্ণিত ‘মূলধন তহবিল” হিসাবে কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে প্রদত্ত ২০০.

০০ (দুইশত) কোটি টাকা অধিক আয়ের লক্ষ্যে সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে;
(খ) সিকিউরিটি/ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার ১ সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে; এবং (গ) ‘মূলধন তহবিল’ হিসাব হতে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে এবং ট্রেজারি বন্ডকৃত ‘মূলধন তহবিল’ হতে কোন অর্থ অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধুমাত্র সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ‘সাধারণ তহবিলে’ জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।”

অবসর-সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৬ শতাংশ হারে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে মাসে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা আদায় হয়। এফডিআর থেকে মাসে আয় হয় পাঁচ কোটি টাকা। এই খাতে মাসে আয় হয় ৮০ কোটি টাকা, যা বছরে ৯৬০ কোটি টাকা। কিন্তু শুধু অবসর-সুবিধার জন্য মাসে প্রয়োজন হয় ১২০ ও বছরে এক হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। এই হিসাবে বছরে ঘাটতি ৪৮০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষকের আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। এসব আবেদন এখন নিষ্পত্তি করতে হলে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এরপর স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ দিলে কাউকে আর অবসর-সুবিধার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।

কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ৪ শতাংশ চাঁদার অর্থে পরিচালিত সরকারের আর্থিক এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার আবেদন অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। যার জন্য এককালীন তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা দরকার। এরপর প্রতি বছর সরকার ২০০ কোটি টাকা দিলে তা স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবসর অর থ ব ভ গ র অবসর স ব ধ ন র লক ষ য প রব ধ ন ব সরক র ২০০ ক ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক বন সংরক্ষক মোশাররফের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সাবেক বন সংরক্ষক মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চাকরি জীবনে বনের জমি বেহাত, বিক্রিসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। অনুসন্ধানে তার নামে চার কোটি ২২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে।

দুদক উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদক আইন অনুযায়ী, মামলাটি তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হবে। এর আগে একই অভিযোগে সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক মো. ওসমান গণির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল।

আসামি মোশাররফ হোসেন ১৯৮৫ সালের ২৪ এপ্রিল বন বিভাগে সহকারী বন সংরক্ষক পদে যোগদান করেন এবং ২০০৫ সালের ২৮ জুন বন সংরক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর নিয়ে তিনি মেঘনা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে আবাসন ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। 
এজাহারে তার নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়। 

স্থাবর সম্পদ: রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক কোটি ৫ লাখ টাকার ৩ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার উপকণ্ঠ পূর্বাচলে (রাজউক) ২০ লাখ টাকায় প্লট ক্রয়, কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে ৪০ শতাংশ জমি, মূল্য ৬০ লাখ টাকা। তার নামে মোট এক কোটি ৮৬ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। 

অস্থাবর সম্পদ: ১৮টি ব্যাংক হিসাবে স্থিতি, ব্যবসায়িক পুঁজি, হাতে নগদসহ তার নামে তিন কোটি ২৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে স্থিতি ৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা, জনতা ব্যাংকে ৭ লাখ দুই হাজার টাকা, কমিউনিটি ব্যাংকের একটি হিসাবে ১১ লাখ ৭২ হাজার টাকা, আরেকটি শাখায় ৪৯ হাজার টাকা, এবি ব্যাংকে ২৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, একই ব্যাংকের অন্য একটি হিসাবে ৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকে ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকে ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ইসলামী ব্যাংকে ৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকে ৪ লাখ ২২ হাজার টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে এফডিআর ১০ লাখ টাকার, একই ব্যাংকের অন্য একটি হিসাবে ৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, সোনালি ব্যাংকের হিসাবে এক লাখ ৯৭ হাজার টাকা, সোনালি ব্যাংকে ১১ লাখ ১৭ হাজার টাকা, শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকে ১৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার স্থিতি রয়েছে।

তার নামে ব্যবসায়িক পুঁজি পাওয়া গেছে ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকার, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র ৪৫ লাখ টাকার, ৪৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা মূল্যের ঢাকা মেট্রো-চ-২০-৪৮৬২ নম্বর প্রাইভেটকার, মেঘনা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডে ৬০ টাকার শেয়ার, হাতে নগদ ৭৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা। 

স্থাবর-অস্থাবর: স্থাবর ও অস্থাবর মিলে ৫ কোটি ১১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে তার নামে। 

আয়করনথি: আয়কর নথি অনুযায়ী তার নামে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় এক কোটি ৭৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। ব্যয় ব্যতীত তার নামে নিট সঞ্চয় পাওয়া যায় ৮৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকার। এই হিসাব অনুযায়ী, তার নামে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে, যা তার ভোগ-দখলে রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাজেটে সুদ মেটাতে ধরা হয়েছে ১ লাখ সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা
  • সাবেক বন সংরক্ষক মোশাররফের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
  • টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে হবে
  • জাহানারা, সালমারা আর কি ফিরতে পারবেন বাংলাদেশ দলে
  • চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নামল
  • এখন মাথাপিছু আয় ২৮২০ ডলার, যা যাবৎকালের রেকর্ড
  • বাজেটে কি ঋণের বোঝা কমানোর কৌশল থাকবে 
  • মহার্ঘ ভাতা কি সরকারি কর্মকর্তাদের খুশি করতে দেওয়া হচ্ছে: সিপিডি
  • অবসর প্রসঙ্গে রহস্যময় ধোনি