কেউ ডাকেন সুপারস্টার, কেউ মেগাস্টার, কেউবা আবার বাংলা সিনেমার রাজকুমার। ভালোবাসার এসব উপাধি নিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একচেটিয়া রাজত্ব করে যাচ্ছেন শাকিব খান। আজ বাংলা সিনেমায় ২৬ বছর পার করলেন তিনি।
পরিচালক আফতাব খান টুলুর হাত ধরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও শাকিব খান অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’। ছবিটি সেই সময় খুব একটা সফল না হলেও নায়ক হিসেবে শাকিব সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অভিনয় জীবনের দ্বিতীয় বছরেই সেই সময়ের শীর্ষ অভিনেত্রী শাবনূরের বিপরীতে ‘গোলাম’ সিনেমায় অভিনয় করে আলোচনায় আসেন তিনি। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে ‘দু’জন দু’জনার’, ‘বিষে ভরা নাগিন’, ‘স্বপ্নের বাসর’, ‘মায়ের জেহাদ’, ‘রাঙ্গা মাস্তান’, ‘হিংসার পতন’, ‘বন্ধু যখন শত্রু’র মতো জনপ্রিয় সিনেমা জমা পড়ে তাঁর ঝুলিতে। তবে এর মাঝে দেখেছেন ব্যর্থতার রূপও। তবু থেমে থাকেনি তার পথচলা।
বিশেষ এই দিনে শাকিবের টিমের পক্ষ থেকে ফেসবুকে আবেগী বার্তাও দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে; “বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ১৯৯৯ সালের ২৮মে ‘অনন্ত ভালোবাসা’-এর মাধ্যমে উত্থান হয়েছিল এক নতুন তারকার। যিনি নিজের প্রতিভা, অধ্যাবসায়, পরিশ্রম, দক্ষতায় মাত্র ৬ বছরের মাথায় ক্যারিয়ারে রাজত্ব করতে শুরু করেছিলেন। বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্রে তার শীর্ষ অবস্থান পৃথিবীর সকল বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে দৃশ্যমান! দেখতে দেখতে খ্যাতির আকাশের এই শুকতারা তার রাজকীয় পথচলার ২৬ বছর পার করলেন।”
ঢাকাই ছবির এই নায়কের জীবন বদলে যায় ২০০৬ সালে– ‘কোটি টাকার কাবিন’ মুক্তির পর। সিনেমাটি পরিচালনা করেন এফ আই মানিক। এই সিনেমার পর নিজের মজবুত আসন গড়ে তোলেন তিনি। তবে ২০১৬ সালে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘শিকারি’ দিয়ে পর্দায় এক নতুন শাকিব খানের দেখা মেলে। বলা যায়, তারকা শাকিবের নবজন্ম ছিল সেই বছর। এর পর ‘নবাব’, ‘সত্তা’ এবং ‘বীর’ সিনেমা দিয়েও হইচই ফেলে দেন শাকিব। তার পর ‘ভাইজান এলো রে’ সিনেমায় নতুন লুকে দেখা যায় তাকে।
বর্তমানে দেশীয় সিনেমার শীর্ষ নায়কের আসনে রয়েছেন শাকিব খান। দীর্ঘ এই অভিনয় জীবনে অর্জন করেছেন চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’, ‘খোদার পরে মা’, ‘আরও ভালোবাসবো তোমায়’ ও ‘সত্তা’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। শাকিব খান অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার সংখ্যা ২৫৩।
শাকিব খানের জীবনে সবচেয়ে টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়, ২০২৩ সাল। কারণ, ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাতে ভিন্নভাবে উপস্থিত হন তিনি। এর পরের বছর ‘রাজকুমার’, ‘দরদ’ ও ‘তুফান’ সিনেমা দিয়ে অনন্য উচ্চতায় উঠে যান এই নায়ক।
সর্বশেষ গত ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ‘অন্তরাত্মা’ ও মেহেদী হাসান পরিচালিত ‘বরবাদ’। তবে ‘অন্তরাত্মা’ সিনেমাটি না চললেও ‘বরবাদ’ সিনেমাটি আগে সবকিছু ছাপিয়ে যায়।
চলতি মাসেই একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেন শাকিব। তার কথায়, ‘একসময় যখন হতাশ হয়ে যেতাম, ভাবতাম সত্যি হয়তো বা আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। আপন মানুষকেই বলতে শুনেছি, তোমার দিন শেষ শাকিব। তুমি ডেড হর্স! তাদের কথা শুনে অবাক হয়েছি, দুঃখিত হয়েছি। ভেবেছি হয়তো এখানেই শেষ, ইতি টানতে হবে। আবার ভেবেছি যাওয়ার আগে লাস্ট একটা ট্রাই তো করে যাই, এতগুলো বছর মানুষগুলো আমাকে ভালোবাসলো, একটা ট্রাই করে যাই। না হলে চলে যাব, ছেড়ে দিব চলচ্চিত্র। শূন্য হাতে এসেছিলাম, যা পেয়েছি; অনেক।”
এদিকে আসছে ঈদুল আজহায় মুক্তি পাচ্ছে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ সিনেমা। রায়হান রাফী পরিচালিত সিনেমাতে শাকিবের সঙ্গে আছেন জয়া আহসান, আফজাল হোসেন, সাবিলা নূর, এজাজুল ইসলাম, এফ এস নাঈম, রোজী সিদ্দিকী। শোনা যাচ্ছে, এই সিনেমায় আফরান নিশো, সিয়াম আহমেদ ও শারিফুল রাজের মধ্যে যেকোনো একজনকেও দেখা যাবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত