মাত্র ১০ মাসেই জুলাই অভ্যুত্থানকে অনেকে বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছেন। দেশের যাবতীয় দুর্দশার জন্যও অভ্যুত্থানের নেতাদের দায়ী করা হচ্ছে। জুলাইয়ের চেতনার বাস্তবায়ন এবং কটাক্ষের এই চর্চা বন্ধ করার জন্য জুলাই ঘোষণাপত্র জরুরি বলে একটি আলোচনা সভায় বক্তারা অভিমত দিয়েছেন।

আজ শুক্রবার বিকেলে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের কনফারেন্স কক্ষে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র: গণ–আকাঙ্ক্ষার সনদ’ শীর্ষক এই নাগরিক সংলাপ হয়। সংলাপের আয়োজন করে ঢাকা রিভিউ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।

সংলাপে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, প্রগতিশীলতা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ছোট একটি গোষ্ঠী পুরো দেশের ওপর কর্তৃত্ব দাবি করছিল। এর বিপক্ষে যে বিপুল পরিমাণ জনগণ ছিল তাদের জীবন তারা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষাই ছিল জুলাই অভ্যুত্থান।

জুলাই অভ্যুত্থানে তাঁর আকাঙ্ক্ষা সামান্য ছিল বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। তিনি বলেন, ‘সেই সামান্য আকাঙ্ক্ষা পূরণেও ব্যর্থ হয়েছেন আন্দোলনের নেতারা। পাশাপাশি জুলাই–পরবর্তী গঠিত সরকারও ব্যর্থ হয়েছে।’

আন্দোলনের নেতাদের এবং সরকারের ব্যর্থতা দিয়ে জনগণ জুলাই আন্দোলনকে বিচার করছে উল্লেখ করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, এ জন্য তিনি মনে করেন, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ঘোষণাপত্র হতে হবে, কিন্তু তা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নয়।

সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা তুহিন খান বলেন, এখন যে ঘোষণাপত্র হবে তা মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শে হবে। এরপরও জুলাই ঘোষণাপত্র জরুরি। তিনি বলেন, জুলাইয়ে তাঁরা যে অভ্যুত্থান করেছেন, মাত্র ১০ মাসেই সেটাকে অনেকে বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছেন। দেশের যাবতীয় দুর্দশার জন্যও অভ্যুত্থানের নেতাদের দায়ী করা হচ্ছে। অভ্যুত্থানকে কটাক্ষ করার এই চর্চা বন্ধ করতে জুলাই সনদ প্রয়োজন।

সাংবাদিক কাজী জেসিন বলেন, বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও ইনসাফ কায়েমের জন্য জুলাই ঘোষণাপত্রে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দুঃশাসনের দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

আইনজীবী মনজুর আল মতিনের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবায়ের মাহমুদ, লেখক ও চিন্তক রিফাত হাসান, কবি হাসান রোবায়েত, জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের মুখপাত্র ফানতাসির মাহমুদ প্রমুখ।

সংলাপে তাঁরা বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র কেবল একটি রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক দলিল নয়, বরং তা জাতির দীর্ঘদিনের সংগ্রামের স্বীকৃতি, জনগণের আকাঙ্ক্ষার দলিল এবং ভবিষ্যৎ পথচলার নির্দেশনা হবে। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও প্রচারে সব পক্ষের সক্রিয় ভূমিকা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’

আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • জুলাই সনদ নিয়ে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
  • ফরিদপুরে সীমানা নিয়ে ডিসির চিঠি, এলাকাবাসীর ৫ দাবি
  • জামায়া‌তের তিন‌ দি‌নের কর্মসূচি ঘোষণা