Samakal:
2025-06-02@07:54:44 GMT

দুধের দাম বাড়ায় পুষ্টিতে টান

Published: 31st, May 2025 GMT

দুধের দাম বাড়ায় পুষ্টিতে টান

দেশে গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। আড়ং, প্রাণ, মিল্ক ভিটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের দুধের দাম বাড়িয়েছে প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে আড়ংয়ের এক লিটার পাস্তুরিত দুধের দাম ১০৫ টাকা, মিল্ক ভিটার এক লিটার দুধের দাম ১০০ টাকা। দাম বাড়ায় অনেক ভোক্তা এরই মধ্যে তাদের দৈনিক দুধ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় দুধ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন মানুষের দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন। দুধের দাম বাড়ায় এই চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক পরিবার।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন হচ্ছে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। এ উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আজ রাজধানীর ফার্মগেটের কেআইবি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
জানা গেছে, লোকসানের মুখে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই দাম বাড়ানোর পথে হেঁটেছে মিল্ক ভিটা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খামারিদের কাছ থেকে দুধের ক্রয়মূল্য বাড়ানো হয়েছে। গড়ে ৪ শতাংশ ফ্যাটযুক্ত দুধের দাম ৫৮ টাকা প্রতি লিটার, পরিবহন খরচসহ ৬১ টাকার বেশি। প্রক্রিয়াজাতকরণসহ অন্যান্য খরচ যোগ করে আমাদের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৮২ টাকার ওপরে। তবে পরিবেশকদের কাছে আমরা দুধ বিক্রি করছি ৭৮ টাকায়। ফলে প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

দুধের দাম বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে প্রাণের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘খামারি পর্যায়ে উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে দুধের দাম বাড়াতে হয়েছে। যেটা আমরা ভোক্তা পর্যায়ে বাড়িয়েছি। খামারিদের দাবি ছিল, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। সে জন্য তাদের লোকসান হচ্ছে। তারা বাড়তি দাম চাচ্ছিলেন, যে কারণে আমাদেরও বিক্রির দাম বাড়াতে হয়েছে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে দুগ্ধ খামারির সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদন হতো প্রায় ৫০ লাখ ৭০ হাজার টন। এর পরের তিন অর্থবছরে সেটি বেড়ে ৭২ লাখ টনের বেশি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে হয় ৯২ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেটি বেড়ে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টন আর ২০২৪ সালে ১ কোটি ৫২ লাখ ৫২ হাজার টন হয়েছে। বিপরীতে দেশে বছরে তরল দুধের চাহিদা ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার টনের বেশি। বাকি চাহিদা মেটানো হয় গুঁড়া দুধ আমদানি করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৮ থেকে ৯ লাখ টন দুধ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুত করছে। বাকি দুধ খামারিরা মিষ্টি তৈরির দোকান এবং খোলাবাজারে বিক্রি করেন।

দাম নিয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের আতিক ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী আল মাহমুদ বলেন, আমরা মিল্ক ভিটাকে দুধ সরবরাহ করি। আমার খামারে দৈনিক ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ লিটার দুধ পাই। এগুলো ৫৮ থেকে ৬১ টাকার মধ্যেই সাধারণত বিক্রি করি। তবে বাজার কখনও কখনও নেমেও যায়।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, পাবনার ফরিদপুর, ভাঙ্গুরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খামারিরা জানান, প্রতিষ্ঠানগুলো দুধের দাম বাড়ালেও খামারিদের কাছ থেকে ক্রয়মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। অনেক খামারি বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা গো-খাদ্যের খরচ মেটাতে পর্যাপ্ত নয়।

শাহজাদপুরে দুগ্ধ খামারি আছেন প্রায় ৩০ হাজার। প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হয় ৫ লাখ লিটার। খামারির কাছ থেকে বড়-ছোট দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান দিনে সাড়ে ৩ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ, ইগলু ও আকিজের দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র রয়েছে শাহজাদপুরে।
উল্লাপাড়ার পশ্চিমপাড়া গ্রামের খামারি জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুধের টাকা দিয়ে গরুর খাবার কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। খাবারের দামের চেয়ে দুধের দাম পেলে কিছুটা আয় হতো।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির জন্য তো বটেই, বড়দের খাদ্য তালিকায়ও দুধ থাকা উচিত। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্তের খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে দুধ। এতে শিশুদের পুষ্টি ঘাটতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, দুধে প্রোটিন, ক্যালসিয়ামসহ গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। দাম বাড়ায় নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে দুধের গ্রহণ কমে যাচ্ছে; যা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক 
ডা.

মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, দুধ শিশুদের প্রয়োজনীয় খাবার। দুধের দাম নিয়ন্ত্রণে না আনলে পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রান্তিক খামারিদের জন্য দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সুবিধা বাড়াতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে পরিবহন সমস্যা সমাধান ও পণ্য বহুমুখীকরণে। দুধের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার, প্রতিষ্ঠান ও খামারিদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তা না হলে পুষ্টি সংকট ও খামারিদের লোকসান আরও বাড়বে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সুফিয়ান বলেন, খামারিদের ঘাস চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা গো-খাদ্যের খরচ কমাতে সহায়ক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ প রক র য় জ ত হ জ র টন ল খ টন

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টির প্রভাবে বেড়েছে সবজির দাম, স্বস্তি চাল মুরগিতে

টানা বৃষ্টির প্রভাবে সরবরাহ কম হওয়ায় কিছু সবজির দাম সামান্য বেড়েছে। তবে বাজারে বোরো ধান থেকে তৈরি নতুন চাল আসায় চালের দাম কমেছে। বিক্রেতারা বলছে নতুন চালের দাম মানভেদে প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে। এদিকে অনেক দিন পর কমতে শুরু করছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়।

শুক্রবার (৩০ মে) রাজধানীর নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন ডায়মন্ড, মঞ্জুর ব্র্যান্ডের নতুন মিনিকেট চাল ৭৫ টাকা, রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৭২ টাকা, মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৮২ টাকা, নাজিরশাইল চাল মানভেদে ৮০ থেকে ৯৫ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ চাল ৫৮ টাকা ও মোটা স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ১০ টাকা এবং প্রতি কেজি সোনালি মুরগির দাম কমেছে ২০ টাকা পর্যন্ত। দেশি মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।  প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০টাকায়, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০টাকা কেজি দরে।

আজ বাজারে বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০টাকা, পটল ৫০, করলা ৬০, গাজর ৭০, মুলা ৪০, কাঁচামরিচ ৫০, প্রতি পিস লাউ ৫০, টমেটো ৬০, চিচিঙ্গা ৫০, ঢেঁড়স ৪০, দেশি শশা ৬০, বরবটি ৭০, কাঁকরোল ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 
অন্যদিকে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। 

এ সপ্তাহে মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। চাষের পাঙাস কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০, কৈ ২২০, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০, দেশি পাঁচমেশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহিণী রুনা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম থাকলেও অন্যান্য সব কিছুর দাম বেশি। মাছের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। তাই মাছ না কিনে ব্রয়লার মুরগি নিয়ে যাচ্ছি। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।’’ 

ডিমের দাম গত সপ্তাহ থেকে বেড়েছে দাবি করে রুনা বেগম বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে ডিম নিয়েছি ১২০ টাকা ডজন। এখন ১৪০ টাকা ডজন চাচ্ছে!’’ 

নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাখাওয়া মোল্লা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘গত কয়দিন বৃষ্টির জন্য আজ সব সবজি নিয়ে আসতে পারিনি। এছাড়া পাইকারি বাজারেও গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজি সরবরাহ কম। তবে দাম একেবারে বেশি বাড়েনি। দু’একটা সবজিতে সামান্য দাম বেড়েছে। তবে আজকে বাজারে ক্রেতা কম।’’

ঢাকা/রায়হান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ থেকে বাজারে নতুন টাকা, মিলবে কোন কোন ব্যাংকে
  • পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামে স্বস্তি, তবে ক্রেতা কম
  • শনিবার থেকে নতুন টাকা পাবেন গ্রাহকরা  
  • সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা
  • ক্রেতা বলছেন দাম চড়া বিক্রেতার ভাষ্য কম
  • গ্যাস সঙ্কটে শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে
  • শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা
  • সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে তীরে চার জাহাজ
  • বৃষ্টির প্রভাবে বেড়েছে সবজির দাম, স্বস্তি চাল মুরগিতে