ইলন মাস্ক মঞ্চে নাচলেন, সঙ্গী হলো রোবট
Published: 7th, November 2025 GMT
বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা চলাকালে রোবটের সঙ্গে নেচেছেন। এক ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা ইলন মাস্কের জন্য প্রায় এক লাখ কোটি ডলারে বেতন প্যাকেজ অনুমোদন করার পর তিনি নেচে নেচে উদ্যাপন করেন।
টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা গতকাল টেক্সাসের অস্টিনে বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ইলন মাস্কের জন্য একটি বেতন প্যাকেজ অনুমোদন করেন। এ বেতন প্যাকেজের আওতায় আগামী এক দশকে ধাপে ধাপে তাঁকে শেয়ার আকারে প্রায় এক লাখ কোটি ডলার অর্থ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নতুন বেতন প্যাকেজ অনুমোদনের পর মুহূর্তের মধ্যেই মাস্ক মঞ্চে উঠে আসেন। সেখানে উপস্থিত থাকা মানুষেরা তখন উল্লাসে মেতে ওঠেন। মাস্ক মঞ্চে নাচতে শুরু করেন। তখন মঞ্চে থাকা রোবটও তাঁর নাচের ভঙ্গি অনুকরণ করে নাচতে থাকে।
মাস্ককে আগামী ১০ বছরের জন্য যে লক্ষ্যগুলো বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—২ কোটি গাড়ি সরবরাহ করা, ১০ লাখ রোবোট্যাক্সি চালু করা, ১০ লাখ রোবট বিক্রি ও ৪০ হাজার কোটি ডলারের মতো নিট মুনাফা করা।মাস্ক দর্শকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘শেয়ারহোল্ডারদের অন্য সভাগুলো একঘেয়ে, কিন্তু আমাদের সভাগুলো দারুণ। দেখুন না, এটা কত চমৎকার।’
এরপর মাস্ক ঘোষণা করেন যে টেসলা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে। তিনি বলেছেন, এ নতুন যুগ শুধু গাড়িতে নয়, রোবোটিকস ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতেও শুরু হচ্ছে। তিনি তখন ইশারায় পাশে থাকা মানবসদৃশ রোবটকে দেখান।
গতকাল টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা প্রায় ৮৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেতন প্যাকেজ অনুমোদন করেন। এটিকে মাস্কের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা মাস্কের টেসলাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিকসে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যকে সমর্থন জানিয়েছেন।
টেসলা কর্তৃপক্ষ এবং নতুন বেতন প্যাকেজ অনুমোদনকারী বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, প্রায় ১ ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের এই বেতন প্যাকেজ দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্যই লাভজনক। কারণ, মাস্ককে বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে টেসলার জন্য নির্ধারিত কিছু যুগান্তকারী লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।কিছু বড় বিনিয়োগকারীর বিরোধিতার পরও গতকাল বেতন প্যাকেজের প্রস্তাবটি অনুমোদন পেয়েছে। তবে টেসলা কর্তৃপক্ষের ধারণা, প্রস্তাবটি অনুমোদন না পেলে মাস্ক হয়তো কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদত্যাগ করতেন।
আরও পড়ুনমাস্কের জন্য লাখো কোটি ডলারের বেতন প্যাকেজ অনুমোদন করলেন টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা২ ঘণ্টা আগেটেসলা কর্তৃপক্ষ ও নতুন বেতন প্যাকেজ অনুমোদনকারী বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, প্রায় ১ ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের এই বেতন প্যাকেজ দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্যই লাভজনক। কারণ, মাস্ককে বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে টেসলার জন্য নির্ধারিত কিছু যুগান্তকারী লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।
মাস্ককে আগামী ১০ বছরের জন্য যে লক্ষ্যগুলো বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—২ কোটি গাড়ি সরবরাহ করা, ১০ লাখ রোবোট্যাক্সি চালু করা, ১০ লাখ রোবট বিক্রি এবং ৪০ হাজার কোটি ডলারের মতো নিট মুনাফা করা।
মাস্ককে বেতন পেতে হলে, টেসলার বাজারমূল্যও বৃদ্ধি পেতে হবে। প্রথমে বর্তমান বাজারমূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারকে ২ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে। এর পরে বাজারমূল্যের পরিমাণ ৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে হবে।
নতুন পরিকল্পনার আওতায়, মাস্ক টেসলার শেয়ার হিসেবে ১০ বছরের মধ্যে ৮৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার আয় করতে পারেন। আদতে মাস্ককে ১ লাখ কোটি ডলার দেওয়া হতে পারে, তবে তাঁকে কিছু অর্থ টেসলাকে ফেরত দিতে হবে। এ জন্য তা ৮৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে নেমে আসবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ক র জন য ১০ ল খ র ব এক ল খ ক ট ইলন ম স ক লক ষ য গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে
বাংলাদেশের তিনটি বড় শিল্পগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বছরে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানি করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ও ইউএস সয়ের সঙ্গে দেশীয় তিন প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র (এলওআই) সই করেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকি; মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা; সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান; ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের মান সব সময়ই অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনবীজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা চাইলে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। আমরা এলপিজি, অপরিশোধিত তেল ও সয়াবিন আনতে পারলে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে।’
মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার অংশীদারত্বে যুক্ত হতে পেরেছি। গত এক বছরে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। এ বছর মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’
তানজিমা বিনতে মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বর্তমানে সয়াবিন আমদানিতে যে শুল্ককাঠামো রয়েছে, তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। শুল্ককাঠামো ঠিক করা হলে পোলট্রি ও মৎস্য খাতের খাদ্যের দাম সাশ্রয়ী থাকবে।’
আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেতানজিমা বিনতে মোস্তফা, পরিচালক, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।সিটি গ্রুপের এমডি মো. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখা ও তা টেকসই করে তুলতে আমরা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহার বাড়াতে চাই। এতে ভোক্তাদের কাছে উন্নতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাতে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। এই এলওআই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি উদ্ভাবন ও অগ্রগতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা আসলে দুই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা বলছি, যেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর এ বছর তা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আশা করছি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী সয়াবিনবীজ আমদানি হয় মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৮ কোটি ডলারের ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ, যা এবার আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।