প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট দ্বিগুণ হচ্ছে, অব্যাহতি পাচ্ছে এলএনজি
Published: 1st, June 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করতে যাচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। এবারের বাজেটে সরকার কিছু পণ্য ও সেবায় ভ্যাট দ্বিগুণ করছে। কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। কমানোও হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। বেশ কিছু পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে ভ্যাট অব্যাহতি দিতে যাচ্ছে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যেসব পণ্যে বাড়ছে ভ্যাট
এবারের বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালি পণ্যের দাম বাড়তে পারে। সরকার প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালিসামগ্রী, হাইজেনিক, টয়লেট সামগ্রীসহ এ জাতীয় যে কোনো পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ ১৫ শতাংশ করতে যাচ্ছে। একইভাবে সেলফ কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড বা কোটেড পেপারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১৫ শতাংশ।
বাড়ি বানাতে গেলেও বাড়বে খরচ। রডের উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত সুনির্দিষ্ট কর প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। নির্মাণ সংস্থার সেবার বিপরীতে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১০ শতাংশ। এ ছাড়াও ব্লেড, তারকাঁটা, টোপকাটাসহ বিভিন্ন প্রকারের স্ক্রু, জয়েন্ট, নাট, বোল্ট, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার এবং পোল ফিটিংসের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হচ্ছে । অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে তিন গুণ বেড়ে হতে পারে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া কটন সুতা ও কৃত্রিম আঁশ এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্নের উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি কেজি ৩ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।
যেসব পণ্যে ভ্যাট কমছে
উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে পাতা, ফুল বা বাকলের তৈরি প্লেট, বাটিসহ সব ধরনের তৈজসপত্র, হাতে তৈরি মাটির তৈজসপত্র, টেক্সটাইল গ্রেড পেট চিপস, স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ ও বল পয়েন্ট পেন। তাছাড়া ২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরে উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত উড়োজাহাজের লিজ রেন্ট।
ভ্যাট অব্যাহতি নিয়ে যা থাকছে
স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ ২০৩০ সালের ৩০ জুন বাড়ানো হচ্ছে। হাসপাতালের বেড উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমুদয় ভ্যাট ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআই উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা থাকছে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। একইভাবে লিফটের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হতে পারে।
এলপিজির সিলিন্ডারের স্থানীয় উৎপাদনে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হতে পারে।
ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেসার কুকার, ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলারের ওপর স্থানীয় উৎপাদনে বর্তমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ কমে হতে পারে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সাধারণ মোটরকার ও মোটর ভেহিক্যালের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অব্যাহতি সুবিধা বহাল রেখে সাধারণ ও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক ভেহিক্যালকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। সাবান ও শ্যাম্পুর কাঁচামাল এবং এর স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব থাকছে।
লিথিয়াম ও গ্রাফিন ব্যাটারির উৎপাদন পর্যায়ে সমুদয় ভ্যাট ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবং ২০২৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি থাকছে। ই-বাইকের স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। এতদিন রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার এবং এগুলোর কম্প্রেসর, পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবার এবং আইডল স্টার্ট-স্টপ ব্যাটারির স্থানীয় উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা ছিল। আসছে বাজেটে এ সুবিধা আর থাকছে না। তবে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার ও এগুলোর কম্প্রেসরের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি পাচ্ছে ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
ক্ষুদ্র আমানতকারীদের জন্য সুখবর থাকছে
নতুন বাজেটে ক্ষুদ্র আমানতকারী এবং ঋণগ্রহীতার জন্য সুখবর থাকছে। ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্কের প্রথম স্তরে পরিবর্তন করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক নেই। আসছে বাজেটে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি দিতে যাচ্ছে সরকার। ব্যাংক হিসাবে আমানত বা ঋণ যে কোনো স্থিতির ওপর এ শুল্ক কাটা হয়।
আগাম কর উৎপাদন পর্যায়ে কমছে, বাড়ছে বাণিজ্যিকে
উৎপাদনের ক্ষেত্রে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক আমদানিকারকের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকের স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি না হলে ব্যবসায়ী পর্যায়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে পুনরায় ভ্যাট আরোপ না করার বিধান রাখা হচ্ছে। বিধিবহির্ভূত রেয়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সম্পূরক শুল্কে যেসব পরিবর্তন আসছে
বাণিজ্যিক আমদানিকারকের সিগারেট পেপার আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক হার ১৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০০ শতাংশ হচ্ছে। ওটিটি বা ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্ম সেবার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে এর ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ ছাড়া সব ধরনের আইসক্রিমের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স থ ত র ওপর র প রস ত ব ন পর য য় কর র প সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পিটার হাস কোন কোম্পানিতে আছেন, ভালো করে জানি না: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হয় আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে। যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, চীন, সিঙ্গাপুর—যে দেশ থেকেই আনা হয় না কেন, তুলনামূলক দর দেখা হয়। বিষয়টি এত সহজ নয় যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানিকে কাজ দিয়ে দেওয়া হবে। আর পিটার হাস কোন কোম্পানিতে আছেন, তা ভালো করে জানিও না আমরা।’
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথাগুলো বলেন।
অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন ছিল, এলএনজি আমদানিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোম্পানিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কি না।
মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি অ্যাকসিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা পদে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে যোগ দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। এর আগে তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে ২০২২ সালের মার্চ থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
অ্যাকসিলারেট এনার্জি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের উডল্যান্ডে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এলএনজি সরবরাহের পাশাপাশি এলএনজি রূপান্তরের ভাসমান টার্মিনাল ও অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে তারা।
বিভিন্ন দেশের ২৩টি কোম্পানি থেকে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি করছে। এর মধ্যে অ্যাকসিলারেট এনার্জিও রয়েছে।
কর্মসংস্থানকে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেশি কর্মসংস্থান হয় বেসরকারি খাতে। ব্যবসা–বাণিজ্য যদি একটু মন্থর হয়ে যায়, সেটা অবশ্যই প্রভাব পড়ে। ব্যবসাটা মাঝখানে একটু মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার ২০ শতাংশ থেকে আরও কমবে কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা ঘাটতিটা কমানোর জন্য কী কী আমদানি করতে পারে, দেখছে। সেখানে মোটামুটি আমরা ভালো অবস্থানে আছি।’
সার আমদানি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বিষয়টা দেখছি। চট করে ব্যবস্থা নেব না। বিস্তারিত জানি না, সার আনে বেশির ভাগ কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়। এটা তাদের দায়িত্ব। বিষয়টা আরও খতিয়ে দেখব।’