অন্তর্বর্তী সরকার আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করতে যাচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। এবারের বাজেটে সরকার কিছু পণ্য ও সেবায় ভ্যাট দ্বিগুণ করছে। কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে।  কমানোও হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। বেশ কিছু পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে ভ্যাট অব্যাহতি দিতে যাচ্ছে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

যেসব পণ্যে বাড়ছে ভ্যাট
এবারের বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালি পণ্যের দাম বাড়তে পারে। সরকার প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালিসামগ্রী, হাইজেনিক, টয়লেট সামগ্রীসহ এ জাতীয় যে কোনো পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ ১৫ শতাংশ করতে যাচ্ছে। একইভাবে সেলফ কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড বা কোটেড পেপারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১৫ শতাংশ।

বাড়ি বানাতে গেলেও বাড়বে খরচ। রডের উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত সুনির্দিষ্ট কর প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। নির্মাণ সংস্থার সেবার বিপরীতে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১০ শতাংশ। এ ছাড়াও ব্লেড, তারকাঁটা, টোপকাটাসহ বিভিন্ন প্রকারের স্ক্রু, জয়েন্ট, নাট, বোল্ট, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার এবং পোল ফিটিংসের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হচ্ছে । অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে তিন গুণ বেড়ে হতে পারে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া কটন সুতা ও কৃত্রিম আঁশ এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্নের উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি কেজি ৩ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। 

যেসব পণ্যে ভ্যাট কমছে
উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে পাতা, ফুল বা বাকলের তৈরি প্লেট, বাটিসহ সব ধরনের তৈজসপত্র, হাতে তৈরি মাটির তৈজসপত্র, টেক্সটাইল গ্রেড পেট চিপস, স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ ও বল পয়েন্ট পেন। তাছাড়া ২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরে উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত উড়োজাহাজের লিজ রেন্ট।

ভ্যাট অব্যাহতি নিয়ে যা থাকছে
স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ ২০৩০ সালের ৩০ জুন বাড়ানো হচ্ছে। হাসপাতালের বেড উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমুদয় ভ্যাট ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআই উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা থাকছে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। একইভাবে লিফটের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হতে পারে।

এলপিজির সিলিন্ডারের স্থানীয় উৎপাদনে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হতে পারে। 

ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেসার কুকার, ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলারের ওপর স্থানীয় উৎপাদনে বর্তমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ কমে হতে পারে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সাধারণ মোটরকার ও মোটর ভেহিক্যালের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অব্যাহতি সুবিধা বহাল রেখে সাধারণ ও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক ভেহিক্যালকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। সাবান ও শ্যাম্পুর কাঁচামাল এবং এর স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব থাকছে। 

লিথিয়াম ও গ্রাফিন ব্যাটারির উৎপাদন পর্যায়ে সমুদয় ভ্যাট ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবং ২০২৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি থাকছে। ই-বাইকের স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। এতদিন রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার এবং এগুলোর কম্প্রেসর, পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবার এবং আইডল স্টার্ট-স্টপ ব্যাটারির স্থানীয় উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা ছিল। আসছে বাজেটে এ সুবিধা আর থাকছে না। তবে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার ও এগুলোর কম্প্রেসরের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি পাচ্ছে ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। 

ক্ষুদ্র আমানতকারীদের জন্য সুখবর থাকছে
নতুন বাজেটে ক্ষুদ্র আমানতকারী এবং ঋণগ্রহীতার জন্য সুখবর থাকছে। ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্কের প্রথম স্তরে পরিবর্তন করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক নেই। আসছে বাজেটে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি দিতে যাচ্ছে সরকার। ব্যাংক হিসাবে আমানত বা ঋণ যে কোনো স্থিতির ওপর এ শুল্ক কাটা হয়।

আগাম কর উৎপাদন পর্যায়ে কমছে, বাড়ছে বাণিজ্যিকে
উৎপাদনের ক্ষেত্রে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক আমদানিকারকের ক্ষেত্রে  ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকের স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি না হলে ব্যবসায়ী পর্যায়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে পুনরায় ভ্যাট আরোপ না করার বিধান রাখা হচ্ছে। বিধিবহির্ভূত রেয়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ শতাংশের পরিবর্তে  ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সম্পূরক শুল্কে যেসব পরিবর্তন আসছে 
বাণিজ্যিক আমদানিকারকের সিগারেট পেপার আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক হার ১৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০০ শতাংশ হচ্ছে। ওটিটি বা ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্ম সেবার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে এর ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ ছাড়া সব ধরনের আইসক্রিমের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স থ ত র ওপর র প রস ত ব ন পর য য় কর র প সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অপরিবর্তিত থাকছে করমুক্ত আয়সীমা

আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত থাকছে। অর্থাৎ, এবারও করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

তবে, পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ২০২৬-২০২৭ ও ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধারা। ২০২৬-২৭ করবর্ষে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধা পাবেন তারা।

সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন। জাতির সামনে তিনি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন।

আরো পড়ুন:

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আরো ৫ লাখ পরিবার যুক্ত হচ্ছে

সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা

অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সীমিত আয়ের জনগণের জন্য করের বোঝা হ্রাস করা, সামাজিক সুরক্ষা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা ও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার লক্ষ্যে ২০২৬-২০২৭ ও ২০২৭-২০২৮ করবর্ষের জন্য স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। গেজেটভুক্ত ‘জুলাই যোদ্ধা’ করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে ২০২৬-২০২৭ ও ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরের জন্য নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের জন্য ৪ লাখ ২৫ হাজার, প্রতিবন্ধী করদাতার জন্য ৫ লাখ, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ ২৫ হাজার এবং তৃতীয় লিঙ্গের করদাতার জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ হাজার টাকা করা হয়েছে।

সোমবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এবারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা গুরুত্ব পাচ্ছে এ বাজেটে।

ঢাকা/এনটি/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এলএনজি আমদানিতে পেট্রোবাংলার সাশ্রয় হতে পারে ৬–৮ হাজার কোটি টাকা
  • বিদ্যুতের দাম আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত: অর্থ উপদেষ্টা
  • অপরিবর্তিত থাকছে করমুক্ত আয়সীমা
  • ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা, নতুন করদাতাদের জন্য ১ হাজার
  • আগামী ২ অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়বে
  • সুরমা-কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপরে
  • সুনামগঞ্জে আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, নদীর পানিও বাড়ছে
  • আজ সন্ধ্যার মধ্যে গ্যাস সাপ্লাই স্বাভাবিক হবে: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান
  • গ্যাস সরবরাহ সংকট কাটছেই না