অন্তর্বর্তী সরকার আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করতে যাচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। এবারের বাজেটে সরকার কিছু পণ্য ও সেবায় ভ্যাট দ্বিগুণ করছে। কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে।  কমানোও হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে। বেশ কিছু পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে ভ্যাট অব্যাহতি দিতে যাচ্ছে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

যেসব পণ্যে বাড়ছে ভ্যাট
এবারের বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালি পণ্যের দাম বাড়তে পারে। সরকার প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালিসামগ্রী, হাইজেনিক, টয়লেট সামগ্রীসহ এ জাতীয় যে কোনো পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ ১৫ শতাংশ করতে যাচ্ছে। একইভাবে সেলফ কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড বা কোটেড পেপারের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১৫ শতাংশ।

বাড়ি বানাতে গেলেও বাড়বে খরচ। রডের উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত সুনির্দিষ্ট কর প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। নির্মাণ সংস্থার সেবার বিপরীতে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হচ্ছে ১০ শতাংশ। এ ছাড়াও ব্লেড, তারকাঁটা, টোপকাটাসহ বিভিন্ন প্রকারের স্ক্রু, জয়েন্ট, নাট, বোল্ট, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার এবং পোল ফিটিংসের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হচ্ছে । অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে তিন গুণ বেড়ে হতে পারে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া কটন সুতা ও কৃত্রিম আঁশ এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্নের উৎপাদন পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ প্রতি কেজি ৩ টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। 

যেসব পণ্যে ভ্যাট কমছে
উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে পাতা, ফুল বা বাকলের তৈরি প্লেট, বাটিসহ সব ধরনের তৈজসপত্র, হাতে তৈরি মাটির তৈজসপত্র, টেক্সটাইল গ্রেড পেট চিপস, স্যানিটারি ন্যাপকিন, প্যাকেটজাত তরল দুধ ও বল পয়েন্ট পেন। তাছাড়া ২২ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত কম্পিউটার মনিটরে উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব থাকছে বাজেটে। ভ্যাট অব্যাহতি পাচ্ছে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত উড়োজাহাজের লিজ রেন্ট।

ভ্যাট অব্যাহতি নিয়ে যা থাকছে
স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপারের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ ২০৩০ সালের ৩০ জুন বাড়ানো হচ্ছে। হাসপাতালের বেড উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সমুদয় ভ্যাট ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআই উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা থাকছে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে। একইভাবে লিফটের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে মেয়াদ ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হতে পারে।

এলপিজির সিলিন্ডারের স্থানীয় উৎপাদনে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হতে পারে। 

ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ও ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেসার কুকার, ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলারের ওপর স্থানীয় উৎপাদনে বর্তমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ কমে হতে পারে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সাধারণ মোটরকার ও মোটর ভেহিক্যালের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অব্যাহতি সুবিধা বহাল রেখে সাধারণ ও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ হাইব্রিড ও ইলেকট্রিক ভেহিক্যালকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। সাবান ও শ্যাম্পুর কাঁচামাল এবং এর স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে মেয়াদ ২০২৭ সালের ৩০ জুন করার প্রস্তাব থাকছে। 

লিথিয়াম ও গ্রাফিন ব্যাটারির উৎপাদন পর্যায়ে সমুদয় ভ্যাট ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবং ২০২৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি থাকছে। ই-বাইকের স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে। এতদিন রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার এবং এগুলোর কম্প্রেসর, পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবার এবং আইডল স্টার্ট-স্টপ ব্যাটারির স্থানীয় উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা ছিল। আসছে বাজেটে এ সুবিধা আর থাকছে না। তবে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার ও এগুলোর কম্প্রেসরের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি পাচ্ছে ২০২৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। 

ক্ষুদ্র আমানতকারীদের জন্য সুখবর থাকছে
নতুন বাজেটে ক্ষুদ্র আমানতকারী এবং ঋণগ্রহীতার জন্য সুখবর থাকছে। ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্কের প্রথম স্তরে পরিবর্তন করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক নেই। আসছে বাজেটে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির ওপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি দিতে যাচ্ছে সরকার। ব্যাংক হিসাবে আমানত বা ঋণ যে কোনো স্থিতির ওপর এ শুল্ক কাটা হয়।

আগাম কর উৎপাদন পর্যায়ে কমছে, বাড়ছে বাণিজ্যিকে
উৎপাদনের ক্ষেত্রে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক আমদানিকারকের ক্ষেত্রে  ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকের স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশি না হলে ব্যবসায়ী পর্যায়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে পুনরায় ভ্যাট আরোপ না করার বিধান রাখা হচ্ছে। বিধিবহির্ভূত রেয়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ শতাংশের পরিবর্তে  ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সম্পূরক শুল্কে যেসব পরিবর্তন আসছে 
বাণিজ্যিক আমদানিকারকের সিগারেট পেপার আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক হার ১৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০০ শতাংশ হচ্ছে। ওটিটি বা ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্ম সেবার সংজ্ঞা নির্ধারণ করে এর ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসানো হচ্ছে। এ ছাড়া সব ধরনের আইসক্রিমের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স থ ত র ওপর র প রস ত ব ন পর য য় কর র প সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না

চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।

কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।

বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।

বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।

জ্বালানি তেল

বিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।

কৃষিপণ্য

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।

খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।

২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।

চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।

দেশে কেন দাম বেশি

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।

আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।

দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।

সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০২৭ পর্যন্ত টেস্ট অধিনায়ক নাজমুল
  • ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে নভোচারী পাঠাবে চীন
  • ২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না