পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের পর ২ হাজার ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’
Published: 2nd, June 2025 GMT
‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পর ভারত এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে পাঠানো) করেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এসব ব্যক্তি ‘অবৈধভাবে’ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছিলেন।
এ ছাড়া আরও দুই হাজার ব্যক্তিকে ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় রাখা হয়েছে। ভারত দাবি করছে, এসব মানুষ নাকি ধরপাকড় ও হাজত বাস এড়াতে নিজে থেকে বাংলাদেশে চলে যেতে চাইছেন।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর ৭ মে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালায়। ১০ মে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। সেই থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী কথিত ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ ধরতে ধরপাকড় অভিযান শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য সরকারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, অবৈধভাবে যাঁরা বসবাস করছেন, সেই বিদেশিদের চিহ্নিত করে যেন দ্রুত ফেরত পাঠানো হয়। সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, এই দুই হাজার ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ সেই অভিযানেরই অংশ।
উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তবর্তী রাজ্য ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম ছাড়াও বিদেশি বাছাই অভিযান বেশি চলছে গুজরাট, হরিয়াণা, দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানে। সবার আগে সবচেয়ে বেশি ‘অবৈধ’ বসবাসকারী ফেরত পাঠায় গুজরাট। ঠেলে পাঠানো দুই হাজার ব্যক্তির মধ্যে অর্ধেক ওই রাজ্যের। যাঁদের ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং যাঁরা সীমান্তে অবস্থান করছেন, সবাইকে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাবি করছে ভারত।
অধিকাংশ রাজ্য কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালন করছে বলে সরকারি সূত্র জানালেও ঘটনা হলো, যেসব রাজ্য থেকে অবৈধভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ‘বাংলাদেশি’ বলে জবরদস্তি ফেরত পাঠানো হচ্ছে, মেঘালয় ছাড়া সেগুলোর প্রতিটিই বিজেপিশাসিত রাজ্য। মেঘালয়ে সরকারের সমর্থক ও শরিক বিজেপি।
সরকারি সূত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘অবৈধ অভিবাসী’ সন্দেহে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সরকারি খরচে উড়েজাহাজ বা ট্রেনে করে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাঁদের তুলে দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে। বিভিন্ন রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় তাঁদের থাকার জন্য অস্থায়ী আস্তানাও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তাঁদের খাদ্য-পানীয় দেওয়া হয়। প্রয়োজনে দেওয়া হয় বাংলাদেশি টাকাও। তারপর সময় ও সুযোগ বুঝে তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
ওই প্রতিবেদককে এক সরকারি কর্তা বলেছেন, মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরা দিয়ে বাংলাদেশে বেশি ‘পুশ ইন’ করা হচ্ছে। কারণ, ওই রাজ্যগুলো দিয়ে ঠেলে পাঠানো ভৌগোলিক কারণে সহজতর। পশ্চিমবঙ্গে সেই সুবিধা নেই। এ ছাড়া ‘অবৈধ অভিবাসী’দের ঠেলে পাঠানোর সময় নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতির ওপরেও নজর রাখা হয়।
সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ‘অবৈধ অভিবাসী’দের অনেকেই নিজে থেকেই বাংলাদেশে ফিরতে আগ্রহী। অন্তত দুই হাজার ব্যক্তি নিজে থেকে চলে যেতে চাইছেন। তাঁরা বুঝেছেন, ভারতের মনোভাব অত্যন্ত কড়া। অযথা ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই। ধরা পড়লে হাজত বাস করতে হবে।
ওই সরকারি সূত্রের দাবি, এসব মানুষের সবাই দরিদ্র। বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক। অনেকেই অনেক বছর ধরে নানা রকম কাজ করে রোজগার করছেন। সীমান্তে গিয়ে তাঁরা বাড়ির লোকজনকে খবর পাঠাচ্ছেন। তাঁরা সবাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতে না থেকে দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে থাকা ভালো মনে করছেন।
তবে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাসহ কয়েক শ ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’-এর ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে নয়াদিল্লিকে। চিঠিতে পুশ ইনের পুনরাবৃত্তি বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প শ ইন বসব স সরক র করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের ‘সুন্দর’ বাজেট বিলকে ‘জঘন্য’ বললেন মাস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর ও ব্যয় বিলের তীব্র সমালোচনা করেছেন শীর্ষ মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের ‘সুন্দর’ দাবি করা বাজেট বিলটিকে তিনি ‘জঘন্য’ বলে বর্ণনা করেছেন। এ ঘটনা দুই মিত্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধের সৃষ্টি করেছে।
বুধবার (৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
নতুন বিলে বহু ট্রিলিয়ন ডলারের কর ছাড় ও প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এবং একই সাথে মার্কিন সরকারকে আরো অর্থ ধার করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিলটি গত মাসে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়েছে।
আরো পড়ুন:
অভিনেতাকে গুলি করে হত্যা
যুক্তরাষ্ট্র শুল্কচুক্তি ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছে: চীন
মঙ্গলবার (৩ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, ‘যারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন তাদের জন্য লজ্জা। এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর অসহনীয় ঋণের বোঝা চাপাবে।’
ইলন মাস্ক কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প প্রশাসনের “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা (ডিওজিই)- এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব শেষ করেছেন। ওই দপ্তরে তার কাজ ছিল সরকারি খরচ কমানো ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ খাত চিহ্নিত করে সেগুলো বাতিল করা।
মাস্ক তার পোস্টে বলেন, ‘আমি দুঃখিত, কিন্তু আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এই বিশাল শুয়োরের মাংসে ভরা কংগ্রেসীয় বিলটি জঘন্য ন্যক্কারজনক। যারা এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন, আপনারা জানেন যে আপনারা ভুল করেছেন। বিলটি বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং এর ফলে দেশের নাগরিকরা ভয়াবহ ঋণের চাপে পড়বে।’
আমেরিকান রাজনীতিতে "শুয়োরের মাংস" বলতে আইন প্রণেতাদের নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্পে ব্যয় বোঝায়। মাস্ক অন্য একটি পোস্টে একটি রাজনৈতিক সতর্কতা যোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের নভেম্বরে, আমরা আমেরিকান জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী সমস্ত রাজনীতিবিদকে বরখাস্ত করব।’
“ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল” নামে পরিচিত এই বাজেট প্রস্তাবটি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উদ্যোগ। বিলে রয়েছে ২০১৭ সালের করছাড় অব্যাহত রাখা, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ, জাতীয় ঋণের সীমা ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো।
তবে এসব খরচের ভার সামলাতে গিয়ে বিলটি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কড়া কাটছাঁট করার প্রস্তাব দিয়েছে। কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) বলছে, এর ফলে মেডিকেইডে ৬৯৮ বিলিয়ন ডলার কমানো হবে, খাদ্য ভর্তুকি কর্মসূচি (এসএনএপি) থেকেও কমিয়ে দেয়া হবে ২৬৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে, মাস্কের সমালোচনার জবাব দিয়েছে হোয়াইট হাউজ। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট সাংবাদিকদের বলেন, “প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই জানেন যে, এই বিলের ব্যাপারে ইলন মাস্ক কী অবস্থান নিয়েছেন। তবে, মাস্কের এই মন্তব্য তার মতামত পরিবর্তন করে না। প্রেসিডেন্টের মতে, এটি একটি বড় এবং সুন্দর বিল। প্রেসিডেন্ট এই ক্ষেত্রে অটল আছেন।”
ঢাকা/ফিরোজ