ট্রাম্পের নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় কী আছে
Published: 5th, June 2025 GMT
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এক নির্বাহী আদেশে ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউস থেকে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়ে বলা হয়, যদি যথার্থ অগ্রগতি হয়, তাহলে এই তালিকা পর্যালোচনা করা হতে পারে। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ–ও বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে নতুন হুমকি দেখা দিলে আরও দেশ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বার সুনির্দিষ্ট করে কোনো দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন ট্রাম্প। এর আগে নিজের প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে তিনি একই ধরনের একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ১২টি দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ট্রাম্পের১২ ঘণ্টা আগেনতুন আদেশে যে ১২ দেশের নাগরিকদের ওপর পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো হলো আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন।
এ ছাড়া আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশগুলো হলো বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা।
নতুন আদেশে যে ১২ দেশের নাগরিকদের ওপর পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো হলো আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন।উভয় শ্রেণিতেই আগামী সোমবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
গতবারের নিষেধাজ্ঞাটি বিনা নোটিশে কার্যকর হওয়ায় সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিমানবন্দরগুলোতে যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল, তা এড়াতে এবার এই সময়টুকু দেওয়া হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা কেন দেওয়া হয়েছে
হোয়াইট হাউস বলেছে, সাধারণ বুদ্ধি থেকে আরোপ করা এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে বিপজ্জনক বিদেশি ব্যক্তিদের হাত থেকে রক্ষা করবে।
নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি ভিডিও পোস্ট করে ট্রাম্প বলেছেন, কলোরাডোর বোল্ডারে সম্প্রতি কথিত সন্ত্রাসী হামলাটি প্রমাণ করে—যেসব বিদেশি নাগরিক সম্পর্কে যথাযথভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়নি, তাঁরা চরম ঝুঁকি সৃষ্টি করেছেন।’
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে গাজায় বন্দী ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে এক ব্যক্তি হামলা চালালে ১২ জন আহত হয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি মিসরের নাগরিক বলে শনাক্ত হয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞার কী প্রতিক্রিয়া এসেছে?
ট্রাম্পের সর্বশেষ আদেশ জারির পর দেশ-বিদেশ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এসেছে। ট্রাম্পের এ আদেশ আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমালিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে যেকোনো নিরাপত্তা সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রে সোমালিয়ার রাষ্ট্রদূত দাহির হাসান আবদি বলেন, তাঁর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।
ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়োসদাদো কাবেও সতর্ক করে বলেন, ‘শুধু ভেনেজুয়েলাবাসীর জন্যই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এখন যেকোনো মানুষের জন্যই বড় ঝুঁকির।’
ডেমোক্র্যাটরা দ্রুতই ট্রাম্পের এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে পার্লামেন্ট সদস্য ডেমোক্রেটিক দলের প্রমীলা জয়পাল বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্প্রসারিত রূপ। এটা শুধু আমাদের বিশ্বমঞ্চে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।’
আরেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ডন বেয়ার বলেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
আরও পড়ুনট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা 'আইনসম্মত'০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭শেষবার কী হয়েছিল
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে তাঁর প্রথম মেয়াদে, ২০১৭ সালে আদি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাটি জারি করেছিলেন।
ইরান, লিবিয়া ও সোমালিয়ার মতো দেশ সেবারও তাঁর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল।
সমালোচকেরা সেবার ট্রাম্পের ওই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে ‘মুসলিম ব্যান’ বা ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। কারণ, ট্রাম্পের প্রাথমিক তালিকায় থাকা সাতটি দেশ ছিল মুসলিম অধ্যুষিত। হোয়াইট হাউস পরে নীতি সংশোধন করে দুই অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলাকে যুক্ত করে।
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের সেই আদেশ বৈধ বলে ঘোষণা দেয়। জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২১ সালে ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিবেকের ওপর কলঙ্ক বলে উল্লেখ করেছিলেন বাইডেন।
আরও পড়ুনএবার ছয় মুসলিম দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা০৬ মার্চ ২০১৭.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ভ রমণ ন ষ ধ জ ঞ র ওপর ন ষ ধ জ ঞ য ক তর ষ ট র র এই ন ষ ধ জ ঞ কর ছ ল ন কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষ, আদেশ ৬ আগস্ট
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর আদেশের জন্য আগামী ৬ আগস্ট তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার শুনানি শেষে আদেশের এই তারিখ ধার্য করেন।
গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য ১ জুলাই তারিখ ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার শুনানি হয়।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়; পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারীপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়া ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর আজ শুনানি শেষ হলো।