আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও বাংলাদেশে গরু কোরবানি দেওয়ার প্রথা তেমন ছিল না। এখানে গরুর বদলে ‘বকরি’ কোরবানি দেওয়া হতো। ফলে কোরবানি ঈদের আরেকটি নামকরণ হয়েছিল ‘বকরি ঈদ’। ধীরে ধীরে গরু কোরবানির প্রথা জনপ্রিয় হয়েছে। কেন গরু কোরবানি দেওয়া সহজ ছিল না তা জানতে এই আর্টিকেল পড়ুন। 

ইতিহাসবিদদের মতে, ‘‘আজকে আমরা যে ধুমধামের সঙ্গে ঈদ-উল আযহা পালন করি, এই উৎসব চল্লিশ–পঞ্চাশ বছরের ঐতিহ্য মাত্র। হিন্দু জমিদার অধ্যুষিত এই ভূখণ্ডে গরু কোরবানি দেওয়া সহজ ব্যাপার ছিল না। এজন্য অনেকে গরুর বদলে বকরি কোরবানি দিত, সেই থেকে ঈদুল আজহার আরেক নাম দাঁড়ায় বকরি ঈদ। বাংলা অঞ্চলে গরু কোরবানি দেয়ার রীতি শুরু হতে থাকে মূলত ১৯৪৬ সালের দিকে।’’

ইসলামি ইতিহাসবিদদের মতে, ‘‘ এক সময় আরব বিশ্বে উট, মহিষ ও দুম্বা কোরবানি দেওয়ার প্রচলন ছিল। সেখান থেকে পরে বাংলা অঞ্চলেও মহিষ ও ছাগলের সাথে গরু কোরবানির পশু হিসেবে যুক্ত হয়।’’

আরো পড়ুন:

বায়তুল মোকাররমে ২য় জামাতে মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা

পর্যটক বরণে প্রস্তুত রাঙামাটি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো.

আতাউর রহমান মিয়াজীর মতে, ‘‘সেই সময় এই উপমহাদেশ ও আশপাশে গরুকে সবচেয়ে বেশি হাতের কাছে পাওয়া যেতো। তখন উট ও মহিষের সাথে গরুটাও ওই সময়ে যুক্ত হয়ে গেল।’’


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান মিয়াজী জানিয়েছেন,  ‘‘মুস্তাহিদ বা কোরআন সুন্নাহ বিশারদরা অনেক গবেষণা করে কোরবানির জন্য ছয়টি পশুর নাম চূড়ান্ত করলেন। এগুলো  হলো  উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া।’’

ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী কোরবানির পশু হিসেবে উটের বয়স পাঁচ বছর, গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হয়। 

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন-এর লেখা থেকে জানা যায় ‘‘আজকে আমরা ঈদ-উল-আজহায় গরু কোরবানির অনায়াসে গরু কিনে এনে সহজেই কোরবানি দিয়ে ফেলি। আশি একশো দুরে থাকুক পঞ্চশ বছর আগেও তা তেমন সহজসাধ্য ছিল না। আজকের প্রজন্ম হয়ত অবাক হবে যে- এ নিয়ে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বিতর্ক চলেছে। এবং কোরবানি বিশেষ করে গরু কোরবানি দেওয়ার অধিকার আমাদের বাপ দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে।’’

বিভিন্ন জায়গায় যারা হিন্দু জমিদার ছিলেন, তারা গরু কোরবানি নিষিদ্ধ করা শুরু করলেন। অন্যদিকে গরু বেশি প্রচলিত না থাকার আরেকটি কারণ ছিল আর্থিক দৈন্যতা। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সংকট ছিলো প্রবল। একটা গরু কিনে কোরবানি দেওয়া বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে অসম্ভব ছিল। এমনকি মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ও এই অঞ্চলে গরু কোরবানি খুব একটা প্রচলিত ছিল না।

ইসলামি ইতিহাসবিদরা বলছেন, মুঘল আমলে এই অঞ্চলে অনেক হিন্দু জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। যে কারণে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়েও গরু কোরবানিতে নানা বিধি নিষেধের বিষয়গুলো চলে আসে।

ওই সময়ে এ অঞ্চলে ৯৫ শতাংশই হিন্দুদের বসবাস ছিল। গরু জবাই করা মানে হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করা হতো। 

বাংলা অঞ্চলে গরু কোরবানি বিস্তার লাভ করে উনিশ শতকের শেষ প্রান্তে। এই সময় থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গরু কোরবানি দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। তবে যেসব জায়গায় যারা হিন্দু জমিদার ছিলেন সেসব জায়গা গরু কোরবানি দেওয়া কঠিন ছিল। 

হিন্দু জমিদারদের প্রভাব কমে আসা এবং বাংলাদেশের মানুষের অভাব কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে গরু কোরবানির প্রবণতা লাভ করে।

অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘‘১৯৪০ এর দিকে গরু কোরবানিটা বেশি শুরু হয়। তখন এ অঞ্চলের পাট চাষিদের হাতে কিছু টাকা আসতে শুরু করলো। তখন কিছু কিছু জায়গায় নিজেদের স্ট্যাটাস দেখানোর জন্যও গরু কোরবানি দেয়া শুরু হলো।’’

সূত্র: বিবিসি

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র প ইসল ম ই সময় শ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

বর্জ্য অপসারণে নগরবাসীর সহায়তা চাইলেন ইশরাক

কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে নগরবাসীর সহায়তা চেয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।  শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনে বেরিয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।

ঈদুল আজহার দুপুরে ইশরাক হোসেন যান রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শনে। সেখান থেকে রহমতগঞ্জ পোস্তা হয়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করেন। পরে ডিএসসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ বেইলি রোড যান। এ ছাড়াও হাজারীবাগ, শাহজাহানপুর, ব্রাদার্স ক্লাব ও কমলাপুরের পশুর হাট ঘুরে দেখেন ইশরাক। 

এ সময় ইশরাক হোসেন পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছাও বিনিময় করেন। পশুর হাটে সৃষ্ট আবর্জনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে নানা নির্দেশনাও দেন। এদিন তিনি নগর ভবনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম তদারকি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষে যান। সেখানে কর্মরত ব্যক্তিদেরও নির্দেশনা দেন।

ইশরাক হোসেন এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণে নিরলসভাবে কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে বৃষ্টির কারণে এ কাজে কিছুটা দেরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে বর্জ্য অপসারণে সহায়তা করতে নগরবাসীর প্রতি  আহ্বান জানান তিনি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ