বাংলাদেশে কীভাবে গরু কোরবানির রীতি শুরু হয়েছিল
Published: 7th, June 2025 GMT
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও বাংলাদেশে গরু কোরবানি দেওয়ার প্রথা তেমন ছিল না। এখানে গরুর বদলে ‘বকরি’ কোরবানি দেওয়া হতো। ফলে কোরবানি ঈদের আরেকটি নামকরণ হয়েছিল ‘বকরি ঈদ’। ধীরে ধীরে গরু কোরবানির প্রথা জনপ্রিয় হয়েছে। কেন গরু কোরবানি দেওয়া সহজ ছিল না তা জানতে এই আর্টিকেল পড়ুন।
ইতিহাসবিদদের মতে, ‘‘আজকে আমরা যে ধুমধামের সঙ্গে ঈদ-উল আযহা পালন করি, এই উৎসব চল্লিশ–পঞ্চাশ বছরের ঐতিহ্য মাত্র। হিন্দু জমিদার অধ্যুষিত এই ভূখণ্ডে গরু কোরবানি দেওয়া সহজ ব্যাপার ছিল না। এজন্য অনেকে গরুর বদলে বকরি কোরবানি দিত, সেই থেকে ঈদুল আজহার আরেক নাম দাঁড়ায় বকরি ঈদ। বাংলা অঞ্চলে গরু কোরবানি দেয়ার রীতি শুরু হতে থাকে মূলত ১৯৪৬ সালের দিকে।’’
ইসলামি ইতিহাসবিদদের মতে, ‘‘ এক সময় আরব বিশ্বে উট, মহিষ ও দুম্বা কোরবানি দেওয়ার প্রচলন ছিল। সেখান থেকে পরে বাংলা অঞ্চলেও মহিষ ও ছাগলের সাথে গরু কোরবানির পশু হিসেবে যুক্ত হয়।’’
আরো পড়ুন:
বায়তুল মোকাররমে ২য় জামাতে মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা
পর্যটক বরণে প্রস্তুত রাঙামাটি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান মিয়াজী জানিয়েছেন, ‘‘মুস্তাহিদ বা কোরআন সুন্নাহ বিশারদরা অনেক গবেষণা করে কোরবানির জন্য ছয়টি পশুর নাম চূড়ান্ত করলেন। এগুলো হলো উট, গরু, মহিষ, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া।’’
ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী কোরবানির পশু হিসেবে উটের বয়স পাঁচ বছর, গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং ছাগল, দুম্বা ও ভেড়ার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হয়।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন-এর লেখা থেকে জানা যায় ‘‘আজকে আমরা ঈদ-উল-আজহায় গরু কোরবানির অনায়াসে গরু কিনে এনে সহজেই কোরবানি দিয়ে ফেলি। আশি একশো দুরে থাকুক পঞ্চশ বছর আগেও তা তেমন সহজসাধ্য ছিল না। আজকের প্রজন্ম হয়ত অবাক হবে যে- এ নিয়ে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বিতর্ক চলেছে। এবং কোরবানি বিশেষ করে গরু কোরবানি দেওয়ার অধিকার আমাদের বাপ দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে।’’
বিভিন্ন জায়গায় যারা হিন্দু জমিদার ছিলেন, তারা গরু কোরবানি নিষিদ্ধ করা শুরু করলেন। অন্যদিকে গরু বেশি প্রচলিত না থাকার আরেকটি কারণ ছিল আর্থিক দৈন্যতা। বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সংকট ছিলো প্রবল। একটা গরু কিনে কোরবানি দেওয়া বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে অসম্ভব ছিল। এমনকি মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ও এই অঞ্চলে গরু কোরবানি খুব একটা প্রচলিত ছিল না।
ইসলামি ইতিহাসবিদরা বলছেন, মুঘল আমলে এই অঞ্চলে অনেক হিন্দু জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। যে কারণে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়েও গরু কোরবানিতে নানা বিধি নিষেধের বিষয়গুলো চলে আসে।
ওই সময়ে এ অঞ্চলে ৯৫ শতাংশই হিন্দুদের বসবাস ছিল। গরু জবাই করা মানে হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করা হতো।
বাংলা অঞ্চলে গরু কোরবানি বিস্তার লাভ করে উনিশ শতকের শেষ প্রান্তে। এই সময় থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গরু কোরবানি দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়। তবে যেসব জায়গায় যারা হিন্দু জমিদার ছিলেন সেসব জায়গা গরু কোরবানি দেওয়া কঠিন ছিল।
হিন্দু জমিদারদের প্রভাব কমে আসা এবং বাংলাদেশের মানুষের অভাব কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে গরু কোরবানির প্রবণতা লাভ করে।
অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘‘১৯৪০ এর দিকে গরু কোরবানিটা বেশি শুরু হয়। তখন এ অঞ্চলের পাট চাষিদের হাতে কিছু টাকা আসতে শুরু করলো। তখন কিছু কিছু জায়গায় নিজেদের স্ট্যাটাস দেখানোর জন্যও গরু কোরবানি দেয়া শুরু হলো।’’
সূত্র: বিবিসি
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক রব ন র প ইসল ম ই সময় শ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর
সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।
তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।
রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।
সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।
তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’
এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান