যতটা না বলেছেন তার চেয়ে বেশি করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কথার সঙ্গে কাজের মিল রেখে বিরতিহীনভাবে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। টেলিভিশন ও ইউটিউব নাটকে তাঁর সরব উপস্থিতি। কখনও কমেডি আবার কখনও রোমান্টিক রূপে, আবার কখনও হুট করেই হাজির হচ্ছেন অ্যাকশন অবতারে। নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে এগিয়ে চলছেন আপন গতিতে। নিজেকে গড়তে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। সেই চেষ্টা এখনও চলমান। বলছি, ছোটপর্দার অভিনেতা আরশ খানের কথা।

কয়েক বছরের অভিনয়জীবনে তাঁর নাটকগুলোর প্রতি দর্শকের যেমন আগ্রহ তৈরি হচ্ছে, ঠিক তেমনি নির্মাতারাও হয়ে উঠছেন আরশকেন্দ্রিক।

গেল ঈদ থেকে শুরু করে জুলাইয়ের প্রথমভাগ পর্যন্ত প্রায় ১৭টি নাটকে দেখা গেছে আরশকে। এগুলোর মধ্যে ‘প্রথম হারালো মন’, ‘পাখি গো নাম ধরে ডাকো’, ‘পাগল প্রেম’, ‘আদরে রেখো’, ‘কখনও কি তোমার হবো’, ‘আমার গার্লফ্রেন্ড’, ‘বেলা শেষে তুমি’, ‘তোমাকেই ছুঁতে চাই’, ‘প্রেম প্রেম লাগে’, ‘হৃদয়ের টানে’, ‘দোষটা কার’, ‘সিম্প্যাথি’, ‘নেমেসিস’, ‘শেওলা ফুল’, ‘কখনও কখনও’, ‘তোমাকেই চাই’, ‘সুখের মতো অসুখ’ ইত্যাদি। সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা। মানের দিক বিবেচনায় দর্শকের মন কেড়েছে।

শুক্রবার আসছে মাবরুর রশীদ বান্নাহ পরিচালিত ও আরশ খান অভিনীত নাটক ‘যত্ন’। এরই মধ্যে বেশকিছু নাটকের শুটিংও শেষ করেছেন। সেগুলো সময়মতো মুক্তি পাবে।

নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এখন বেশ সচেতন তিনি। ভালো অভিনয় ও ভালো কাজের ক্ষুধা দিন দিন বেড়েই চলছে। নতুন কাজের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে চান। গল্পের সঙ্গে নিজেকে সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করাটাই এখন তাঁর মূল লক্ষ্য। মাথা উঁচু করে টিকে থাকার মতো কাজ করে যেতে চান।

আরশ বলেন, ‘তারকা হওয়ার চেয়ে ভালো প্রজেক্ট উপহার দিতে চাই। একই বিষয় বারবার তুলে আনতে চাই না। একটা সময় কমেডি করেছি, এরপর রোমান্টিক। সঙ্গে কিছুটা অ্যাকশন। এখন কাজ করতে চান সব ধরনের গল্পে। তবে শর্ত একটাই। ভালো গল্প ও চ্যালেঞ্জিং চরিত্র হতে হবে। কারণ, দর্শক যেন আমার কাজগুলোতে নিজেদের গল্প খুঁজে পান। ব্যতিক্রমী কাজ করলে দর্শক সন্তুষ্ট হয়। সেই সঙ্গে আমার নিজেরও ভালো লাগে।’

অনেক সময় অনেকে বলেন সিনেমার বাজার ভালো হলে নাটকের বাজার পড়ে যায়। এমন কথায় বিশ্বাসী নন এই অভিনেতা। তবে দেশে ভালো সিনেমার কারণে নাটকে নিজেদের দায়িত্ববোধ বেড়েছে বলেও জানালেন তিনি।

তাঁর কথায়, ‘দেশে এখন ভালো সিনেমা হচ্ছে। দর্শকও সিনেমা হলমুখী হচ্ছে। এটিতে নাটকের দর্শক কমছে না বরং আমাদের প্রেশার বেড়েছে। কারণ, ভালো একটি সিনেমা দেখে এসে কেন আমার নাটকটা দেখবে? সেই ভাবনা থেকে আমি চেষ্টা করছি এমন কিছু মৌলিক গল্প-চরিত্রে কাজ করার সেটি সাধারণ মানুষকে কানেক্ট করে। ঈদের পর যেসব নাটকে অভিনয় করেছি। সবক’টিতে ভালো সাড়া পেয়েছি। দর্শক নাটকগুলো সাদরে গ্রহণ করেছে। এখন আরও সচেতনভাবে অভিনয় করতে চাই।’

একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে সহশিল্পীর সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন নতুন কিছু নয়। তেমনি এই অভিনেতার সঙ্গে সহশিল্পীর প্রেমের গুঞ্জন উঠেছে একাধিকবার। নতুন করে সুনেরাহ বিনতে কামালে সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

আরশ খান বলেন, ‘এমন গুঞ্জন তো অনেকের সঙ্গে উঠেছে।  পরে দেখা গেছে বিষয়টি ভুয়া। তাঁর সঙ্গে সুনেরাহ ভালো অভিনয়শিল্পী। তাঁর সঙ্গে আমার কিছু কাজ হয়েছে। এখনও হচ্ছে। এখানে প্রেম কোথা থেকে এলো সেটিই বুঝলাম না। আমরা শুধু সহকর্মী। একসঙ্গে কাজ করি। এরপর বাড়ি চলে যাই। এখানে প্রেমের কিছু নেই।’

নাটকে অভিনয় দিয়ে নিজেকে পরিপক্ব করতে চান আরশ। নিজেকে সঠিকভাবে ঝালিয়ে আসতে চান বড়পর্দায়। এজন্য সময় নিচ্ছেন, নিজেকে সেইভাবেই প্রস্তুত করছেন।

আরশের কথায়, ‘সময় হলেই সিনেমা করব। কারণ, আমি খুব অল্প সময় হলো ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি। আমাদের সিনিয়র চঞ্চল চৌধুরী, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, আফরান নিশো, সিয়াম আহমেদ ভাইসহ আরও যারা আছেন তাদের তুলনায় ইন্ডাস্ট্রিতে আমার টাইম ডিউরেশন কম। অনেক বছর পর আফরান নিশো-সিয়াম আহমেদরা সিনেমার দিকে গেছেন। তারা ভালো কাজ করেছেন বলেই সেই জায়গাতে পৌঁছাতে পেরেছেন। আমি অভিজ্ঞতা বাড়াতে থাকি। আমি কমার্শিয়াল সিনেমাও চাই আবার গল্পনির্ভর সিনেমাও চাই। এজন্য নিজেকে প্রস্তুত করা দরকার বলে আমি মনে করি। সেটিই করে যাচ্ছি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আরশ খ ন ক জ কর গ ঞ জন

এছাড়াও পড়ুন:

পরোপকারী দম্পতির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী

গ্রামের শিক্ষাবিস্তারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়। সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অবসরে যান তিনি। জীবনের দীর্ঘ সময়ে তাঁর সঙ্গে কারও তেমন কোনো ঝগড়া হয়নি। এলাকাবাসীর বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন। দুই ছেলে সরকারি চাকরি করায় বাড়ির বাইরে থাকতেন। জীবনের পড়ন্ত বেলায় স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে থাকতেন তিনি। সেই বাড়িতেই গতকাল শনিবার নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না এলাকাবাসী।

পুলিশ বলছে, চায়নিজ কুড়াল দিয়ে যোগেশের মাথার পেছনে ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়ের কপালে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে। তিনি উত্তর রহিমাপুর নয়াহাট মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে ২০১৭ সালে অবসরে যান। তাঁর বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় র‍্যাবে ও ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায় পুলিশে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়িতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকতেন।

যোগেশের বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাবার সঙ্গে কখনো কারও ঝগড়া হয়নি। আমরা চাকরি করি, বাইরে থাকি। এক বছর আগে বাবা গ্রামের শ্মশানে ৮ শতক জমি দান করেন। এটা কিছু লোক সাপোর্ট করেননি। আমার বাবা-মা আর কদিন বাঁচতেন? তাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

পুলিশ জানায়, গতকাল শনিবার রাত ৯টা ২২ মিনিটে ছোট ছেলে রাজেশের সঙ্গে কথা হয় যোগেশের। আজ সকালে দিনমজুর দীপক চন্দ্র রায় বাড়িতে কাজে এসে প্রধান ফটকে ডাকাডাকি করলে কেউ সাড়া দেননি। পরে প্রতিবেশীদের ডেকে মই বেয়ে প্রধান ফটকের ওপর দিয়ে ভেতরে ঢুকে খাবারঘরে যোগেশ চন্দ্রের ও রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।

প্রত্যক্ষদর্শী দীপক চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো সকালে কাজ করতে যোগেশ দাদুর বাড়িতে যাই। সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত খুলিতে ধানের কাজ করি; কিন্তু এত বেলা হয়ে গেলেও কেউ বাড়ি থেকে বের না হওয়ায় দরজা ধাক্কাধাক্কি করে ডাকি। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। এরপর আশপাশের লোকজন ডেকে মই বেয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি, ঘরে কেউ নেই। পরে ডাইনিং রুমের দরজা খুলে দেখি, দাদুর লাশ আর রান্নাঘরে দিদার লাশ পড়ে আছে।’

খবর পেয়ে প্রথমে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পরে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পিবিআই ও র‍্যাবের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া রংপুর-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার ও জামায়াতের প্রার্থী এ টি এম আজহারুল ইসলাম, তারাগঞ্জ উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর বাড়িতে যান।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী হোসেন বলেন, ‘বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ ও তাঁর স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এখন নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের নিরাপত্তা চাই। যারা যোগেশ ও তাঁর স্ত্রীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধারা কঠোর আন্দোলনে যাব।’

আরও পড়ুনরংপুরে নিজ বাড়ি থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার৯ ঘণ্টা আগে

কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তুহিনুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় অত্যন্ত বিনয়ী পরোপকারী মানুষ ছিলেন। তাঁরা জীবনের শেষ অধ্যায়ে পা দিয়েছেন। অথচ তাঁকে ও তাঁর সহধর্মিণীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

রংপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যোগেশ চন্দ্র রায়ের মাথার পেছনে ও সুবর্ণা রায়ের কপালে কোপের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে, চায়নিজ কুড়াল অথবা রামদা দিয়ে মারা হয়েছে। চায়নিজ কুড়াল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটতে পারে। অনেকগুলো বিষয় মাথায় রেখে তাঁরা তদন্ত করছেন। খুব দ্রুত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘চুরি-ডাকাতির কোনো লক্ষণ নেই। টাকাপয়সা বা গয়না তেমন ছিল না বলে পরিবার জানিয়েছে। গেটে তালা দেওয়া ছিল। পুরো বাড়ির তিন দিকে ঘর, একদিকে প্রাচীর। উত্তর দিকে প্রাচীর টপকে ঘাতকেরা ভেতরে ঢোকে। সেখানে পায়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ