চাকরির এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কৌশল
Published: 8th, June 2025 GMT
বর্তমানে প্রায় সব চাকরির প্রাথমিক ধাপেই বহুনির্বাচনি প্রশ্ন (এমসিকিউ) পরীক্ষা রয়েছে—হোক সেটা বিসিএস, ব্যাংক বা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ। সময় সীমিত, প্রশ্ন বেশি, ভুলের জন্য নেতিবাচক মার্কিং—এই বাস্তবতায় কেবল মুখস্থ আর দীর্ঘ সময় ধরে পড়ালেখা করলেই সফলতা আসে না। দরকার স্মার্ট পড়াশোনা ও পরিকল্পিত রিভিশন। এই লেখায় আমরা এমসিকিউ পরীক্ষায় উৎকর্ষ অর্জনের জন্য কার্যকর কৌশল নিয়ে আলোচনা করব।
এমসিকিউ পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ
এমসিকিউ পরীক্ষা জ্ঞানের পাশাপাশি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মানসিক প্রস্তুতি পরীক্ষা করে। মূল চ্যালেঞ্জগুলো হলো—প্রশ্ন বেশি, সময় কম, প্রতি প্রশ্নে ৩০–৪০ সেকেন্ড মাত্র। ভুল উত্তরের জন্য নেগেটিভ মার্কিং। গাইড ও প্রশ্নব্যাংকের উপচে পড়া তথ্য ভেতর থেকে কী পড়বেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। একটি বিষয় শিখে তা দীর্ঘদিন মনে রাখা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট পড়াশোনা ও পুনরাবৃত্তির কৌশল অপরিহার্য।
স্মার্ট পড়াশোনার কৌশলসিলেবাস ও প্রশ্নের ধরন বিশ্লেষণ
প্রথমেই প্রতিটি পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবণ্টন ভালোভাবে জানুন। যেমন বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, এবং আইসিটির ওপর প্রশ্ন থাকে। সিলেবাসের প্রতিটি বিষয়ের জন্য কত সময় বরাদ্দ করবেন, তা ঠিক করুন। একটি দৈনিক রুটিন তৈরি করুন, যেখানে দুর্বল বিষয়গুলোর জন্য বেশি সময় রাখবেন। ধরুন, আপনার গণিত দুর্বল—তাহলে সপ্তাহে ৩-৪ দিন গণিতের জন্য ২-৩ ঘণ্টা করে বরাদ্দ করুন। প্রশ্নভিত্তিক অধ্যয়ন করুন, বইভিত্তিক নয়। যে বিষয় বা অধ্যায়ে বেশি প্রশ্ন আসে, সেগুলো আগে গুরুত্ব দিন। বিগত পাঁচ বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে জানুন, কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। এই বিশ্লেষণ আপনার পড়াশোনাকে ফোকাসড করবে। সেই সঙ্গে একটি প্রশ্ন কীভাবে পরিবর্তন হয়ে ঘুরেফিরে আসে, তা বোঝার জন্য আগের বছরের প্রশ্নপত্র পড়ুন, নোট নিন। একই ধাঁচের প্রশ্নে ভুল না করাই স্মার্ট প্রস্তুতির মূল।
গুরুত্বপূর্ণ টপিকে অগ্রাধিকার
প্রতিটি বিষয়ের মূল ধারণাগুলো চিহ্নিত করুন। যেমন বাংলা: গুরুত্বপূর্ণ লেখক, তাঁদের রচনা, এবং সাহিত্যিক পুরস্কার। ইংরেজি: ব্যাকরণ, শব্দভান্ডার, এবং রিডিং স্কিল বাড়ান। গণিত: শর্টকাট পদ্ধতি ও সূত্রের প্রয়োগ। সাধারণ জ্ঞান: মুক্তিযুদ্ধ, ভূগোল, সমসাময়িক ঘটনা, এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন ইত্যাদি। এই টপিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সময় বরাদ্দ করুন।
আরও পড়ুন৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা: বিষয়ভিত্তিক মডেল টেস্ট-৩২৪ মে ২০২৫বেসিক ধারণা স্পষ্ট করুন
এমসিকিউ পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বিষয়ের মূল ধারণাগুলো ভালোভাবে বোঝা অত্যাবশ্যক। শুধু মুখস্থ না করে প্রতিটি টপিকের অন্তর্নিহিত অর্থ এবং প্রয়োগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন। কারণ, এমসিকিউ প্রশ্ন প্রায়শই সরাসরি না এসে একটু ঘুরিয়ে আসতে পারে।
সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি
বই বা গাইডে দেওয়া তথ্য নয়, আপনি নিজে যে তথ্য লিখে রাখবেন, সেটাই বারবার পড়তে সুবিধা হয়। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাইলাইট করুন এবং টেবিল, চার্ট, বা মাইন্ড ম্যাপ ব্যবহার করুন। সংক্ষিপ্ত, মার্কড ও হাইলাইটেড নোট হলে দ্রুত রিভিশন সম্ভব। এই নোট দ্রুত পুনরালোচনার জন্য আদর্শ। উদাহরণস্বরূপ, সংবিধানের অনুচ্ছেদ বা ইতিহাসের ঘটনার ক্রম সংক্ষিপ্ত টেবিলে সাজান।
আরও পড়ুনবেসরকারি ব্যাংকে চাকরির সুযোগ, স্নাতক–স্নাতকোত্তরে আবেদন২০ মে ২০২৫ডিজিটাল রিসোর্সের ব্যবহার
আধুনিক প্রযুক্তি আপনার প্রস্তুতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ইউটিউব এর শিক্ষামূলক ভিডিও দেখুন। মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে পরীক্ষা দিন।
সময় ব্যবস্থাপনা
পরীক্ষার সময় সীমিত। তাই প্রশ্ন সমাধানের কৌশল শিখুন, সহজ প্রশ্ন আগে উত্তর দিন। প্রথমে যেগুলো নিশ্চিত জানেন, সেগুলো সমাধান করুন। এলিমিনেশন মেথড প্রয়োগ করুন। ভুল অপশন বাদ দিয়ে সঠিক উত্তর খুঁজুন। নেগেটিভ মার্কিং এড়াতে শুধু নিশ্চিত হলেই উত্তর দিন।
আরও পড়ুনপ্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে রাজস্ব খাতে চাকরি, নেবে ২৫ জন১৪ মে ২০২৫কার্যকর পুনরাবৃত্তির কৌশলরিপিটেশন
‘তিন ধাপ পদ্ধতি’ অনুসরণ করুন। মনোবিজ্ঞানের এই পদ্ধতি তথ্য দীর্ঘ মেয়াদে মনে রাখতে সাহায্য করে। প্রথম পাঠ: বিষয়টি বুঝে পড়ুন। দ্বিতীয় পাঠ: ৩ দিনের মধ্যে আবার পড়ুন, হাইলাইট করুন গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তৃতীয় পাঠ: ৭ দিনের মধ্যে সংক্ষেপে রিভিশন দিন—তবে এবার ভুল অংশে ফোকাস করুন।
একটিভ রিকল
চোখ বন্ধ করে পড়া বিষয় মনে করার চেষ্টা করুন। এটি মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ মনে করার চেষ্টা করুন।
ফ্ল্যাশকার্ড
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সূত্র, বা সংজ্ঞা ফ্ল্যাশকার্ডে লিখুন। একপাশে প্রশ্ন, অন্যপাশে উত্তর। যাতায়াতের সময় বা অবসরে এগুলো দেখুন।
আরও পড়ুনজ্বালানি ও খনিজ সম্পদের অধীনে নিয়োগ, বেতন স্কেল ৮,৫০০ থেকে ৩৫,৫০০১৮ মে ২০২৫মক টেস্ট
সপ্তাহে ২-৩টি মক টেস্ট দিন, টাইমার সেট করে। ভুল উত্তর বিশ্লেষণ করে দুর্বলতা শনাক্ত করুন। এটি পরীক্ষার চাপ সামলানোর অভ্যাস গড়ে তুলবে।
গ্রুপ আলোচনা
বন্ধুদের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করুন। একে অপরকে প্রশ্ন করে জ্ঞান পরীক্ষা করুন। তবে বিতর্ক এড়িয়ে ফলপ্রসূ আলোচনায় মনোযোগ দিন।
পরীক্ষার দিনের প্রস্তুতি
আগের রাতে নতুন বিষয় না পড়ে শুধু নোট রিভিশন করুন। মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে গভীর শ্বাস নিয়ে শান্ত থাকুন। পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর খাবার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমান। ধ্যান বা হালকা ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে পারেন। ইতিবাচক মনোভাব রেখে নিজের প্রস্তুতির ওপর ভরসা রাখুন।
উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা
এমসিকিউ পরীক্ষা শুধু জ্ঞানের নয়, কৌশল ও ধৈর্যের পরীক্ষা। প্রতিদিন নিজের উন্নতি পর্যবেক্ষণ করুন, অন্যের সঙ্গে তুলনা নয়। প্রতিটি ভুল একটি শিক্ষা; প্রতিটি প্রচেষ্টা আপনাকে লক্ষ্যের কাছে নিয়ে যায়। নিয়মিত চর্চা, স্মার্ট পরিকল্পনা, এবং অটুট আত্মবিশ্বাস আপনাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দেবে।
শেষ কথা
এমসিকিউ পরীক্ষায় সফলতার মূল চাবিকাঠি হলো পুনরাবৃত্তি ও কৌশলী প্রস্তুতি। আজই একটি মক টেস্ট দিয়ে দুর্বলতা চিহ্নিত করুন এবং সেগুলো কাটিয়ে উঠতে কাজ শুরু করুন। মনে রাখবেন, ‘সাফল্য তখনই আসে, যখন প্রস্তুতি ও সুযোগ মিলিত হয়।’ আপনার প্রস্তুতি যেন কখনো অপ্রতুল না হয়। শুভকামনা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রস ত ত এমস ক উ প পর ক ষ র র জন য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার রাজপথে এক ‘জাদুঘর’
রাজধানীর ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল ও সদরঘাটের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন জাদুঘর। হঠাৎ সড়ক থেকে উঠে যান ৪০ ফুট উপরে, ভাসেন বাতাসে। এমনই ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা নিয়ে মুক্তি পাচ্ছে তরুণ ম্যাজিশিয়ান রাজুর নতুন সিরিজ ‘লাইফ ইজ ম্যাজিক’। বৃহস্পতিবার এ সিরিজের টিজার প্রকাশিত হয়।
ম্যাজিশিয়ান রাজু বলেন, জাদুর এই সিরিজ এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন। এটা নিছক জাদু নয়, আমার ভালোবাসা ও জীবন দর্শন।
তিনি বলেন, প্রায় এক বছরের প্রস্তুতি ও সাধনার ফসল এই ম্যাজিক সিরিজ। প্রস্তুতির পর ছয় মাস ধরে কাজ করেছে একটি পূর্ণাঙ্গ টেকনিক্যাল টিম। আমি চেয়েছি ম্যাজিক জীবনের অংশ হোক। রাস্তায়, ট্রাফিকে, বাজারে। শত শত মানুষের সামনে। চেয়েছি, মঞ্চের গণ্ডি পেরিয়ে ম্যাজিক ঢুকে পড়ুক যাপিত জীবনে৷ সেই চাওয়া পূর্ণ হলো। মানুষের বিস্ময়মাখা আনন্দিত মুখ দেখে প্রাণ জুড়িয়েছে।
রাজু আরও বলেন, ম্যাজিকে এরকম কাজ বাংলাদেশে আগে কেউ করেনি। পথে পথে হাজার মানুষের ভিড়ে এমন ম্যাজিক দেখানো মানে শুধুই টেকনিক নয়। এজন্য সাহস লাগে, নিরাপত্তা লাগে আর লাগে দৃঢ় প্যাশন ও পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, ম্যাজিক সিরিজে আলাদা কোনো পরিচালক নেই। কারণ, এখানে দৃশ্যগুলো ঘটেছে ভিড়ের সড়কে, হাজারও মানুষের সামনে। তাই পুরো টিমই এখানে যৌথভাবে কাজ করে।
সিরিজটির ডিওপি ছিলেন স্বনামধন্য সিনেমাটোগ্রাফার হৃদয় সরকার। প্রযোজনা করেছে উইচিং এন্টারটেইনমেন্ট। শুটিং হয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল, সদরঘাট, কাওরান বাজার, পুরান ঢাকা ও ওয়ারীতে।
ম্যাজিশিয়ান রাজু বলেন, আমি একা নই। আমার সঙ্গে ছিল একদল মানুষ— ক্যামেরা ক্রু, প্রোডাকশন বয়, সহকারী সবাই। তারা না থাকলে এটা সম্ভব হতো না। তাদের পরিশ্রম, ধৈর্য ও বিশ্বাস আমাকে সাহস দিয়েছে। ‘লাইফ ইজ ম্যাজিক’ শিগগিরই মুক্তি পাবে একটি অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে। তবে নির্দিষ্ট তারিখ ও প্ল্যাটফর্মের নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
রাজু বলেন, মানুষ যেভাবে সিনেমা-নাটক দেখে, তেমন করে ম্যাজিকও একদিন আমাদের বিনোদনের অংশ হয়ে উঠুক—সেই চেষ্টাই করছি। ম্যাজিক মানে শুধু শো নয়। এটা আমার ভালোবাসা, জীবনের অংশ।