বর্তমানে প্রায় সব চাকরির প্রাথমিক ধাপেই বহুনির্বাচনি প্রশ্ন (এমসিকিউ) পরীক্ষা রয়েছে—হোক সেটা বিসিএস, ব্যাংক বা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ। সময় সীমিত, প্রশ্ন বেশি, ভুলের জন্য নেতিবাচক মার্কিং—এই বাস্তবতায় কেবল মুখস্থ আর দীর্ঘ সময় ধরে পড়ালেখা করলেই সফলতা আসে না। দরকার স্মার্ট পড়াশোনা ও পরিকল্পিত রিভিশন।  এই লেখায় আমরা এমসিকিউ পরীক্ষায় উৎকর্ষ অর্জনের জন্য কার্যকর কৌশল নিয়ে আলোচনা করব।

এমসিকিউ পরীক্ষার চ্যালেঞ্জ

এমসিকিউ পরীক্ষা জ্ঞানের পাশাপাশি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মানসিক প্রস্তুতি পরীক্ষা করে। মূল চ্যালেঞ্জগুলো হলো—প্রশ্ন বেশি, সময় কম, প্রতি প্রশ্নে ৩০–৪০ সেকেন্ড মাত্র। ভুল উত্তরের জন্য নেগেটিভ মার্কিং। গাইড ও প্রশ্নব্যাংকের উপচে পড়া তথ্য ভেতর থেকে কী পড়বেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। একটি বিষয় শিখে তা দীর্ঘদিন মনে রাখা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট পড়াশোনা ও পুনরাবৃত্তির কৌশল অপরিহার্য।

স্মার্ট পড়াশোনার কৌশল

সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরন বিশ্লেষণ

প্রথমেই প্রতিটি পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবণ্টন ভালোভাবে জানুন। যেমন বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, এবং আইসিটির ওপর প্রশ্ন থাকে। সিলেবাসের প্রতিটি বিষয়ের জন্য কত সময় বরাদ্দ করবেন, তা ঠিক করুন। একটি দৈনিক রুটিন তৈরি করুন, যেখানে দুর্বল বিষয়গুলোর জন্য বেশি সময় রাখবেন। ধরুন, আপনার গণিত দুর্বল—তাহলে সপ্তাহে ৩-৪ দিন গণিতের জন্য ২-৩ ঘণ্টা করে বরাদ্দ করুন। প্রশ্নভিত্তিক অধ্যয়ন করুন, বইভিত্তিক নয়। যে বিষয় বা অধ্যায়ে বেশি প্রশ্ন আসে, সেগুলো আগে গুরুত্ব দিন।  বিগত পাঁচ বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে জানুন, কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। এই বিশ্লেষণ আপনার পড়াশোনাকে ফোকাসড করবে।  সেই সঙ্গে একটি প্রশ্ন কীভাবে পরিবর্তন হয়ে ঘুরেফিরে আসে, তা বোঝার জন্য আগের বছরের প্রশ্নপত্র পড়ুন, নোট নিন। একই ধাঁচের প্রশ্নে ভুল না করাই স্মার্ট প্রস্তুতির মূল।

গুরুত্বপূর্ণ টপিকে অগ্রাধিকার

প্রতিটি বিষয়ের মূল ধারণাগুলো চিহ্নিত করুন। যেমন বাংলা: গুরুত্বপূর্ণ লেখক, তাঁদের রচনা, এবং সাহিত্যিক পুরস্কার। ইংরেজি: ব্যাকরণ, শব্দভান্ডার, এবং রিডিং স্কিল বাড়ান। গণিত: শর্টকাট পদ্ধতি ও সূত্রের প্রয়োগ। সাধারণ জ্ঞান: মুক্তিযুদ্ধ, ভূগোল, সমসাময়িক ঘটনা, এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন ইত্যাদি।  এই টপিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সময় বরাদ্দ করুন।

আরও পড়ুন৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা: বিষয়ভিত্তিক মডেল টেস্ট-৩২৪ মে ২০২৫

বেসিক ধারণা স্পষ্ট করুন

এমসিকিউ পরীক্ষায় ভালো করার জন্য বিষয়ের মূল ধারণাগুলো ভালোভাবে বোঝা অত্যাবশ্যক। শুধু মুখস্থ না করে প্রতিটি টপিকের অন্তর্নিহিত অর্থ এবং প্রয়োগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন। কারণ, এমসিকিউ প্রশ্ন প্রায়শই সরাসরি না এসে একটু ঘুরিয়ে আসতে পারে।

সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি

বই বা গাইডে দেওয়া তথ্য নয়, আপনি নিজে যে তথ্য লিখে রাখবেন, সেটাই বারবার পড়তে সুবিধা হয়। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাইলাইট করুন এবং টেবিল, চার্ট, বা মাইন্ড ম্যাপ ব্যবহার করুন। সংক্ষিপ্ত, মার্কড ও হাইলাইটেড নোট হলে দ্রুত রিভিশন সম্ভব। এই নোট দ্রুত পুনরালোচনার জন্য আদর্শ। উদাহরণস্বরূপ, সংবিধানের অনুচ্ছেদ বা ইতিহাসের ঘটনার ক্রম সংক্ষিপ্ত টেবিলে সাজান।

আরও পড়ুনবেসরকারি ব্যাংকে চাকরির সুযোগ, স্নাতক–স্নাতকোত্তরে আবেদন২০ মে ২০২৫

ডিজিটাল রিসোর্সের ব্যবহার

আধুনিক প্রযুক্তি আপনার প্রস্তুতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।  ইউটিউব  এর শিক্ষামূলক ভিডিও দেখুন। মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে পরীক্ষা দিন।

সময় ব্যবস্থাপনা

পরীক্ষার সময় সীমিত। তাই প্রশ্ন সমাধানের কৌশল শিখুন, সহজ প্রশ্ন আগে উত্তর দিন।  প্রথমে যেগুলো নিশ্চিত জানেন, সেগুলো সমাধান করুন। এলিমিনেশন মেথড প্রয়োগ করুন। ভুল অপশন বাদ দিয়ে সঠিক উত্তর খুঁজুন। নেগেটিভ মার্কিং এড়াতে শুধু নিশ্চিত হলেই উত্তর দিন।

আরও পড়ুনপ্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে রাজস্ব খাতে চাকরি, নেবে ২৫ জন১৪ মে ২০২৫কার্যকর পুনরাবৃত্তির কৌশল

রিপিটেশন

‘তিন ধাপ পদ্ধতি’ অনুসরণ করুন। মনোবিজ্ঞানের এই পদ্ধতি তথ্য দীর্ঘ মেয়াদে মনে রাখতে সাহায্য করে। প্রথম পাঠ: বিষয়টি বুঝে পড়ুন। দ্বিতীয় পাঠ: ৩ দিনের মধ্যে আবার পড়ুন, হাইলাইট করুন গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তৃতীয় পাঠ: ৭ দিনের মধ্যে সংক্ষেপে রিভিশন দিন—তবে এবার ভুল অংশে ফোকাস করুন।

একটিভ রিকল

চোখ বন্ধ করে পড়া বিষয় মনে করার চেষ্টা করুন। এটি মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি শক্তিশালী করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ মনে করার চেষ্টা করুন।

ফ্ল্যাশকার্ড

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সূত্র, বা সংজ্ঞা ফ্ল্যাশকার্ডে লিখুন। একপাশে প্রশ্ন, অন্যপাশে উত্তর। যাতায়াতের সময় বা অবসরে এগুলো দেখুন।

আরও পড়ুনজ্বালানি ও খনিজ সম্পদের অধীনে নিয়োগ, বেতন স্কেল ৮,৫০০ থেকে ৩৫,৫০০১৮ মে ২০২৫

মক টেস্ট

সপ্তাহে ২-৩টি মক টেস্ট দিন, টাইমার সেট করে। ভুল উত্তর বিশ্লেষণ করে দুর্বলতা শনাক্ত করুন। এটি পরীক্ষার চাপ সামলানোর অভ্যাস গড়ে তুলবে।

গ্রুপ আলোচনা

বন্ধুদের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করুন। একে অপরকে প্রশ্ন করে জ্ঞান পরীক্ষা করুন। তবে বিতর্ক এড়িয়ে ফলপ্রসূ আলোচনায় মনোযোগ দিন।

পরীক্ষার দিনের প্রস্তুতি

আগের রাতে নতুন বিষয় না পড়ে শুধু নোট রিভিশন করুন। মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে গভীর শ্বাস নিয়ে শান্ত থাকুন। পর্যাপ্ত ঘুম ও স্বাস্থ্যকর খাবার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তাই ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমান। ধ্যান বা হালকা ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে পারেন। ইতিবাচক মনোভাব রেখে নিজের প্রস্তুতির ওপর ভরসা রাখুন।

উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা

এমসিকিউ পরীক্ষা শুধু জ্ঞানের নয়, কৌশল ও ধৈর্যের পরীক্ষা। প্রতিদিন নিজের উন্নতি পর্যবেক্ষণ করুন, অন্যের সঙ্গে তুলনা নয়। প্রতিটি ভুল একটি শিক্ষা; প্রতিটি প্রচেষ্টা আপনাকে লক্ষ্যের কাছে নিয়ে যায়। নিয়মিত চর্চা, স্মার্ট পরিকল্পনা, এবং অটুট আত্মবিশ্বাস আপনাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দেবে।

শেষ কথা

এমসিকিউ পরীক্ষায় সফলতার মূল চাবিকাঠি হলো পুনরাবৃত্তি ও কৌশলী প্রস্তুতি। আজই একটি মক টেস্ট দিয়ে দুর্বলতা চিহ্নিত করুন এবং সেগুলো কাটিয়ে উঠতে কাজ শুরু করুন। মনে রাখবেন, ‘সাফল্য তখনই আসে, যখন প্রস্তুতি ও সুযোগ মিলিত হয়।’ আপনার প্রস্তুতি যেন কখনো অপ্রতুল না হয়। শুভকামনা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রস ত ত এমস ক উ প পর ক ষ র র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্কের মতো জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতেও এআইয়ে ঝুঁকছে মানুষ, পরিণতি কী

চলতি বছরের এপ্রিলে কেটি মোরান প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর ছয় মাসের সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এমন এক সাহায্যকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। তাঁর কৃতজ্ঞতা পেয়েছে চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ৩৩ বছর বয়সী এই নারী চ্যাটবটটিকে স্নেহের সঙ্গে ‘চ্যাট’ নামে ডাকেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে কিছু বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে এবং নিজের সঙ্গে আলাপে বাধ্য করেছে, যা আমি এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।’

মোরান তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের কাছেও মনের কথা খুলে বলেছিলেন। এরপরও তিনি মনে করেন, চ্যাটজিপিটিই তাঁকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল যে, তাঁর সম্পর্কের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর দুশ্চিন্তার মূল কারণ। চ্যাটবটটির সঙ্গে এক সপ্তাহ কথা বলার পর, তিনি সম্পর্কটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে।

বিচ্ছেদ, চাকরি পরিবর্তন বা অন্য দেশে চলে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে অভ্যস্ত। তবে এখন কিছু মানুষ নিজের অনুভূতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক নির্মোহ মূল্যায়ন পেতে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

মোরানের মতো কেউ কেউ কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস জোগানোর কৃতিত্ব এআইকে দিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলছেন, এআইয়ের তোষামুদে স্বভাব কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

নিখুঁত নয়

জুলি নাইসকে চ্যাটজিপিটির কাছে মনের কথা খুলে বলতে বাধ্য করেছিল মূলত অবসাদ। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তি শিল্পে তিন বছর কাজ করার পর তিনি দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা এবং ক্রমাগত ক্লান্তিতে ভুগতে শুরু করেন।

গত বছরের শেষের দিকের সেই সময়টি সম্পর্কে জুলি বলেন, ‘অবশেষে আমি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছি, যেখানে মনে হচ্ছিল— আমাকে কিছু একটা করতেই হবে, পরিবর্তন আনতেই হবে। আমি তখন একটা মানব-খোলস মাত্র ছিলাম (নিষ্প্রাণ)।’

জুলি সিদ্ধান্ত নিলেন— স্থান পরিবর্তন করবেন, বিশেষত ফ্রান্সে চলে যাবেন। আর এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য তিনি দ্বারস্থ হন চ্যাটজিপিটির। তিনি তাঁর চাওয়াগুলো (একটি শান্ত শহর, যেখানে ভালো সংখ্যক প্রবাসীর বসবাস থাকবে) এবং তাঁর অপছন্দগুলো (প্যারিসের মতো ব্যস্ত শহর নয়) বিশদভাবে উল্লেখ করলেন। চ্যাটবটটি তাঁকে ফ্রান্সের দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহর ইউজেস সুপারিশ করল। সেখানকার বাসিন্দা ৮ হাজার ৩০০ জনের মতো।

জুলি চলতি বছরের এপ্রিলে সেখানে চলে যান। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই প্রক্রিয়াটি চ্যাটজিপিটির হাতে তুলে দেওয়ায় পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তাঁর অতিরিক্ত চাপ অনেক কমে গিয়েছিল। যদিও তিনি এখন বলছেন, সিদ্ধান্তটি নিখুঁত ছিল না। ইউজেসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আছে ঠিকই। তবে চ্যাটজিপিটি যে তথ্যটি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেটি হলো এই প্রবাসীদের বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত। আর জুলির বয়স ৪৪ বছর।

তরুণদের মধ্যে জিজ্ঞাসার প্রবণতা বেশি

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান উল্লেখ করেছেন, এই প্রবণতাটি তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

গত মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিকোইয়া ক্যাপিটালের ‘এআই অ্যাসেন্ট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বয়সে ২০ থেকে ৩০ বছরের কোঠায় থাকা ব্যবহারকারীদের বিষয়ে অল্টম্যান বলেন, ‘তাঁরা চ্যাটজিপিটির কাছে জিজ্ঞাসা না করে আসলেই জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তগুলো নেন না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাঁদের জীবনে আসা প্রতিটি ব্যক্তি এবং তাঁদের আলাপের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট এআইয়ের কাছে আছে।’ (এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি)।

আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও, ফস্টার স্কুল অব বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন

তবে এভাবে তরুণেরাই শুধু এআইয়ের শরণাপন্ন হচ্ছেন, ব্যাপারটা তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস সিটির বাসিন্দা মাইক ব্রাউন। ২০২৩ সালে ৫২ বছর বয়সে এসে নিজের ৩৬ বছরের বিবাহিত জীবন নিয়ে কী করা উচিত, সেই পরামর্শের জন্য একটি চ্যাটবটের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বন্ধু, যাজক এবং বিবাহ পরামর্শক সবাই তাঁকে বিচ্ছেদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি বলেন, ওই বছরই চালু হওয়া একটি ইন্টারেকটিভ চ্যাটবট ‘পাই.এআই’-এর সঙ্গে ৩০ মিনিটের কথোপকথনের পরই তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হন।

ব্রাউন বলেন, ‘আমার এই ভাবনাগুলো যাচাই করে নেওয়া দরকার ছিল এবং এই পথে এগোনোই যে সঠিক, সেটির জন্য নিশ্চয়তা পাওয়াটা দরকার ছিল।’ তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ দৃষ্টিভঙ্গি পেতে তিনি চ্যাটবটটির ওপর আস্থা রেখেছিলেন।

আরও পড়ুনচ্যাটবট কি মানুষের মতো বুদ্ধিমান হতে পারবে২৯ মে ২০২৪

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ফস্টার স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও কীভাবে মানুষ ও এআইয়ের মধ্যে সহযোগিতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথার্থতা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, কেন মানুষ এভাবে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো সার্বক্ষণিক এটি হাতের কাছে পাওয়া যায়, বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত উত্তর দিতে পারে এবং এটিকে তুলনামূলক বেশি নিরপেক্ষ বলেও মনে করা হয়।

বুসিও বলেন, ‘এআই সাধারণত অনেকটাই কূটনৈতিক ভাষায় অভ্যস্ত, পক্ষান্তরে মানুষ বিশেষত ব্যক্তিগত পরামর্শের ক্ষেত্রে নিজের চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মতামত দিয়ে থাকে।’

তবে বুসিও সতর্ক করে বলেন, বেশিরভাগ এআই মডেলের ‘তোষামোদী’ প্রবণতা থাকায় তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করার বিষয়ে যতটা আগ্রহী, ততটা সেরা পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী নয়। তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (চ্যাটবট) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করতে পারে। কারণ, ব্যবহারকারী খুশি হলে, তারা আবার ফিরে আসে।’

কেটি মোরানের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। চ্যাটজিপিটি বন্ধুর মতো করে কথা বলায় তিনি অবাক হয়েছিলেন বলে জানান। চ্যাটবটটি তাঁকে এ রকম বলেছিল, ‘আপনি এমন কাউকে পাওয়ার যোগ্য, যে আপনাকে আশ্বস্ত করবে; এমন কাউকে নয়, যার নীরবতা আপনাকে দুশ্চিন্তার গোলকধাঁধায় ফেলে দেবে।’

আরও পড়ুনকিশোরকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিয়েছে চ্যাটবট, নির্মাতার বিরুদ্ধে মায়ের মামলা২৪ অক্টোবর ২০২৪

রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তিদের কেউই এআইয়ের ওপর নির্ভর করার জন্য অনুতপ্ত নন বলে জানিয়েছেন। মাইক ব্রাউনের মতে, এআই ‘আবেগী, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের’ মতো কাজ করেছে। কেটি মোরানের কাছে এটি ছিল ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধুর’ মতো। আর জুলি নাইস বলেন, এআই তাঁকে তিনি আসলে কী চান, তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।

এরপরও, অধ্যাপক বুসিও একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।’

এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি বলব, একটু পিছিয়ে আসুন এবং নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে, তা নিয়ে ভাবুন। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করার জন্য যে, আমরা নিজেরাও চিন্তাভাবনার কাজটা করছি।’

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিসহ অন্য এআই চ্যাটবটকে যে ৭ তথ্য দেওয়া যাবে না৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ