মা এসেছিলেন পোশাক কারখানায় কাজের খোঁজে। সঙ্গে এসেছিল শিশুসন্তানও। মা যখন ভবনের ভেতরে কাজ নিয়ে কথা বলছিলেন, মেয়ে তখন হাতে ছোট বল নিয়ে বাইরে খেলছিল। মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় তখন গোড়ালি সমান পানি। রাস্তার পাশে নালায় তখন তীব্র স্রোত। বল নিয়ে খেলতে গিয়ে নালায় পড়ে স্রোতে ভেসে যায় শিশুটি। দৃশ্যটি এক যুবকের চোখে পড়লেও তিনি দৌড়ে আসার আগেই শিশুটি নালায় তলিয়ে যায়। তাঁর চিৎকার-চেঁচামেচিতে সবাই এগিয়ে এলেও শিশুটিকে আর বাঁচানো যায়নি। এক ঘণ্টা চেষ্টার পর প্রায় ২০০ মিটার দূরে নালা থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরের উত্তর আগ্রাবাদ আনন্দিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিন বছরের মোছাম্মত হুমায়রা একই এলাকার আবদুর রহমানের মেয়ে। এ নিয়ে আড়াই মাসের ব্যবধানে নালায় পড়ে দুই শিশু নিহতের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ বছরে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের খাল-নালায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। 

গতকাল সরেজমিন নগরের আনন্দিপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ২টার দিকে শিশু হুমায়রার মা আসমা বেগম আনন্দিপুর নিয়াজ খানের ভবনে থাকা একটি ছোট পোশাক কারখানায় কাজের জন্য এসেছিলেন। তিনি ওই কারখানার মালিক শিরিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন শিশু হুমায়রা বল নিয়ে ভবনটির মুখে ও রাস্তায় খেলছিল। ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ বলটি পাশের সড়কে চলে যায়। সেখানে তখন হাঁটুর ওপর পানি। বলটি কুড়িয়ে আনতে গিয়ে মূল সড়কের নালায় পড়ে গেলে স্রোতে ভেসে যায় সে।

পাশের নিয়াজের ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শিশুটি নালায় তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক যুবক এগিয়ে আসেন। বাঁচাতে পারেননি শিশুটিকে। তাঁর চিৎকার-চেঁচামেচিতে শিশুটির মাসহ স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তারা নালার স্ল্যাব তুলে তল্লাশি চালাতে থাকেন। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। এক ঘণ্টা পর একই সড়কের মদিনা ফার্মেসির পাশে একটি ভবনের সামনে নালা থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধার করে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা.

শারমিন আলম বলেন, শিশুটিকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তখন আসলে কিছু করার ছিল না।

শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমার বাসায় পাঁচটা মেশিন নিয়ে বিভিন্ন কারখানার পোশাক তৈরি করি। শিশুটির মা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে কাজ নিয়ে কথা বলছিলাম। এর মধ্যে বাইরে থেকে চিৎকার শুনে শিশুটির মা, আমিসহ ছুটে গিয়ে দেখি, শিশুটি নালায় তলিয়ে গেছে।

উদ্ধারকাজে থাকা মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, বৃষ্টি হলেই এখানে রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যায়। পাশের মুন্সীবাড়ি সড়কে তখন কোমরপানি থাকে। এবার নালা পরিষ্কার করায় পানি কম উঠেছে। তবে মুন্সীবাড়ি সড়কে হাঁটুর ওপর পানি জমেছিল। শিশুটি মুন্সীবাড়ি সড়কে বল কুড়াতে গিয়ে নালায় স্রোতে ভেসে গেছে।

হাসপাতাল থেকে নেওয়ার পর শিশুটিকে হালিশহর গোল্ডেন আবাসিক এলাকায় ফুফুর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। খাটে ছোট্ট হুমায়রাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তাকে ঘিরে আহাজারি করছিলেন স্বজন। তার দাদি বারবার ‘আমার পাখি কই গেল রে...’ বলে আহাজারি করছিলেন। মা তখন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন। বাবা আবদুর রহমানও দিশেহারা।

হুমায়রার চাচা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি ভোলা। নদীভাঙনে বাড়ি চলে যাওয়ায় ছোটবেলা থেকেই আমরা চট্টগ্রামে থাকি। এখন সবাই আলাদা থাকি। আবদুর রহমান আমার ছোট ভাই। তার একটিই মেয়ে। সে ডিশ লাইনের কাজ করে।’ 

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি

নালায় পড়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বুধবার রাতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে এক কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। 

প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহানকে। সদস্য করা হয়েছে ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলামকে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এস ছ ল সদস য তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ