চট্টগ্রামে নালায় পড়ে আবার শিশুর মৃত্যু, তদন্তে কমিটি
Published: 10th, July 2025 GMT
মা এসেছিলেন পোশাক কারখানায় কাজের খোঁজে। সঙ্গে এসেছিল শিশুসন্তানও। মা যখন ভবনের ভেতরে কাজ নিয়ে কথা বলছিলেন, মেয়ে তখন হাতে ছোট বল নিয়ে বাইরে খেলছিল। মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় তখন গোড়ালি সমান পানি। রাস্তার পাশে নালায় তখন তীব্র স্রোত। বল নিয়ে খেলতে গিয়ে নালায় পড়ে স্রোতে ভেসে যায় শিশুটি। দৃশ্যটি এক যুবকের চোখে পড়লেও তিনি দৌড়ে আসার আগেই শিশুটি নালায় তলিয়ে যায়। তাঁর চিৎকার-চেঁচামেচিতে সবাই এগিয়ে এলেও শিশুটিকে আর বাঁচানো যায়নি। এক ঘণ্টা চেষ্টার পর প্রায় ২০০ মিটার দূরে নালা থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরের উত্তর আগ্রাবাদ আনন্দিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিন বছরের মোছাম্মত হুমায়রা একই এলাকার আবদুর রহমানের মেয়ে। এ নিয়ে আড়াই মাসের ব্যবধানে নালায় পড়ে দুই শিশু নিহতের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ বছরে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের খাল-নালায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন।
গতকাল সরেজমিন নগরের আনন্দিপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ২টার দিকে শিশু হুমায়রার মা আসমা বেগম আনন্দিপুর নিয়াজ খানের ভবনে থাকা একটি ছোট পোশাক কারখানায় কাজের জন্য এসেছিলেন। তিনি ওই কারখানার মালিক শিরিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন শিশু হুমায়রা বল নিয়ে ভবনটির মুখে ও রাস্তায় খেলছিল। ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ বলটি পাশের সড়কে চলে যায়। সেখানে তখন হাঁটুর ওপর পানি। বলটি কুড়িয়ে আনতে গিয়ে মূল সড়কের নালায় পড়ে গেলে স্রোতে ভেসে যায় সে।
পাশের নিয়াজের ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শিশুটি নালায় তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক যুবক এগিয়ে আসেন। বাঁচাতে পারেননি শিশুটিকে। তাঁর চিৎকার-চেঁচামেচিতে শিশুটির মাসহ স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তারা নালার স্ল্যাব তুলে তল্লাশি চালাতে থাকেন। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। এক ঘণ্টা পর একই সড়কের মদিনা ফার্মেসির পাশে একটি ভবনের সামনে নালা থেকে শিশুটির নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধার করে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা.
শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমার বাসায় পাঁচটা মেশিন নিয়ে বিভিন্ন কারখানার পোশাক তৈরি করি। শিশুটির মা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে কাজ নিয়ে কথা বলছিলাম। এর মধ্যে বাইরে থেকে চিৎকার শুনে শিশুটির মা, আমিসহ ছুটে গিয়ে দেখি, শিশুটি নালায় তলিয়ে গেছে।
উদ্ধারকাজে থাকা মোহাম্মদ আশরাফ বলেন, বৃষ্টি হলেই এখানে রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যায়। পাশের মুন্সীবাড়ি সড়কে তখন কোমরপানি থাকে। এবার নালা পরিষ্কার করায় পানি কম উঠেছে। তবে মুন্সীবাড়ি সড়কে হাঁটুর ওপর পানি জমেছিল। শিশুটি মুন্সীবাড়ি সড়কে বল কুড়াতে গিয়ে নালায় স্রোতে ভেসে গেছে।
হাসপাতাল থেকে নেওয়ার পর শিশুটিকে হালিশহর গোল্ডেন আবাসিক এলাকায় ফুফুর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। খাটে ছোট্ট হুমায়রাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তাকে ঘিরে আহাজারি করছিলেন স্বজন। তার দাদি বারবার ‘আমার পাখি কই গেল রে...’ বলে আহাজারি করছিলেন। মা তখন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন। বাবা আবদুর রহমানও দিশেহারা।
হুমায়রার চাচা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি ভোলা। নদীভাঙনে বাড়ি চলে যাওয়ায় ছোটবেলা থেকেই আমরা চট্টগ্রামে থাকি। এখন সবাই আলাদা থাকি। আবদুর রহমান আমার ছোট ভাই। তার একটিই মেয়ে। সে ডিশ লাইনের কাজ করে।’
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি
নালায় পড়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। বুধবার রাতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে এক কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহানকে। সদস্য করা হয়েছে ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলামকে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বাড়ির নাম শাহানা।
সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত বাড়ির নাম শাহানায় দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দিকা। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেক্টিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড।
নির্মাণের বাইরে লীসা গাজী লেখক, নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত