স্টারশিপ মহাকাশযানের তৃতীয়বারের পরীক্ষাও ব্যর্থ, ইলন মাস্কের স্পেসএক্স এখন কী করবে
Published: 8th, June 2025 GMT
গত ২৭ মে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের উৎক্ষেপণকেন্দ্র থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেটটি পরীক্ষামূলকভাবে উড়ে যায়। জানুয়ারি ও মার্চে দুটি মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর এ ধাপে স্পেসএক্স স্টারশিপ মিশনে সাফল্য আসবে বলে অনেক উচ্চাশা ছিল।
স্টারশিপ মূলত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। ওপরের অংশটিকে বলা হয় ‘শিপ’। এটি বসানো থাকে নিচের বিশাল রকেট ইঞ্জিনের ওপর, যার নাম ‘সুপার হেভি’। এই দুই অংশ মিলিয়ে রকেটটির মোট উচ্চতা ১২০ মিটারের একটু বেশি। তবে সুপার হেভি থেকে আলাদা হওয়ার কয়েক মিনিট পরই বোঝা গেল, চালকবিহীন ওই মহাকাশযানে কিছু ভুল হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরতে শুরু করে দিল।
পরীক্ষামূলক উড়ালের সরাসরি সম্প্রচারে স্পেসএক্সের এক ধারাভাষ্যকার বলেন, ‘আমরা আসলে স্টারশিপের দিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি।’
কোম্পানিটি পরে নিশ্চিত করে যে হঠাৎ করেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মহাকাশযানটি ভেঙে পড়েছে।
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স কোম্পানির জন্য এটি ছিল অম্ল–মধুর ফলাফল।
তবে এযাবৎকালে এটাই এই মহাকাশযানের সর্বোচ্চ অর্জন, যা আগের দুবারের অগ্রগতিকে ছাপিয়ে গেছে। তা ছাড়া এবারের রকেট ইঞ্জিনটি ছিল পুরোনো। সেটা ভালো কাজ করেছে। পুরোপুরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট বানানোর যে পরিকল্পনা কোম্পানিটির রয়েছে, সেটা এক ধাপ এগিয়ে গেল।
স্টারশিপ মূলত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। ওপরের অংশটিকে বলা হয় ‘শিপ’। এটি বসানো থাকে নিচের বিশাল রকেট ইঞ্জিনের ওপর, যার নাম ‘সুপার হেভি’। এই দুই অংশ মিলিয়ে রকেটটির মোট উচ্চতা ১২০ মিটারের একটু বেশি। তবে সুপার হেভি থেকে আলাদা হওয়ার কয়েক মিনিট পরই বোঝা যায়, চালকবিহীন ওই মহাকাশযানে কিছু ভুল হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরতে শুরু করে।তবে শেষ কথা হলো, স্টারশিপের নবম পরীক্ষামূলক উড়ালটির পরপর তিনবার ব্যর্থ হওয়ার নজির তৈরি হলো। স্পেসএক্সের অন্য রকেট ফ্যালকন–৯ খুব সফল ও নির্ভরযোগ্য ছিল। কিন্তু স্টারশিপের এই তিনটি ব্যর্থতা দেখে অনেকেই ভাবছেন, এর সব কিছুতেই কি গন্ডগোল আছে?
স্পেসএক্সের সবচেয়ে সফল রকেট ফ্যালকন ৯-এর নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি। তবে কয়েক মাসের মধ্যে তিনটি পরীক্ষা ব্যর্থ হওয়ার কারণে পর্যবেক্ষকদের কারও কারও মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটি হলো, স্পেসএক্সের স্টারশিপের সবকিছু কি ভুল পথে যাচ্ছে?
২৭ মের যাত্রায় সমস্যা কী ছিল?
সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরীক্ষাকালীন উপাত্তগুলো পরে আসবে। পরবর্তী অভিযানের আগে ভুল শুধরে নিতে স্পেসএক্স এসব উপাত্ত কাজে লাগাবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী জনাথন ম্যাকডাওয়েল বলেন, ২৭ মের পরীক্ষার শুরুটা আগের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। মহাকাশযানটি সফলভাবে কক্ষপথে পৌঁছেছে, অর্থাৎ রকেট ঠিকমতো পুরো সময় কাজ করেছে।
জনাথন ম্যাকডাওয়েল আরও বলেন, মহাকাশযানটি তার কক্ষপথে ঠিকঠাক পৌঁছেছিল। তবে ইতিমধ্যে অভিযান পরিচালনাকারী দলটি সমস্যায় পড়ে। বুস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এটি নিয়ন্ত্রিতভাবে নামার বদলে সাঁ করে মেক্সিকো উপসাগরের পানিতে পড়ে। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যে মহাকাশযানটি নকল স্টারলিংক স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। পে-লোড দরজা আটকে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।
তবে ম্যাকডাওয়েলের মতে এ অভিযানের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো, কক্ষপথে চলার সময় স্টারশিপের দিকটা ঠিক রাখতে পারেনি স্পেসএক্স।
স্টারশিপের এযাবৎকালের সেরা যাত্রা হওয়া সত্ত্বেও মহাকাশযানটিতে ফুটো দেখা দিতে লাগল। এটি ভেঙে পড়ে মুখ থুবড়ে পৃথিবীর পরিমণ্ডলে ফিরে এল।
দ্রুত ব্যর্থ হও, দ্রুত শেখো
স্পেসএক্স একই কাজ বারবার করে শেখার নীতিতে পরিচালিত হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যর্থতাকে তারা বাধা নয়, বরং শেখার সুযোগ হিসেবে দেখে।
এ প্রবণতা স্পেসএক্সকে বড় সাফল্যের পথে নিয়ে গেছে। তবে বারবার ব্যর্থতা দীর্ঘ মেয়াদে বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
তবু কোম্পানিটি আশা করে যে ব্যর্থ হতে হতে দ্রুত শেখার নীতি শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। ফ্যালকনের পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট সিরিজ তৈরি করার সময় এমনটাই হয়েছিল।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও মহাকাশযান প্রকৌশলী লিয়া-নানি আলকনসেল মনে করেন, স্টারশিপের ক্ষেত্রে যে একই পন্থা কাজ করবে, তা নিশ্চিত নয়।
লিয়া-নানি আলকনসেল বিবিসিকে জানান, স্টারশিপের প্রতিবারের উৎক্ষেপণ ফ্যালকনের তুলনায় অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ। এর প্রধান লক্ষ্য হলো, মানুষকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো। অথচ এর বাজার কিন্তু এখনো তৈরি হয়নি। সুতরাং এর বড় আর্থিক ঝুঁকি রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত স্টারশিপের নবম পরীক্ষামূলক মহাকাশযানটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ব্যর্থ হলেও স্পেসএক্সের অন্য রকেট ফ্যালকন–৯ খুব সফল ও নির্ভরযোগ্য। কিন্তু স্টারশিপের এই তিনটি ব্যর্থতা দেখে অনেকেই ভাবছেন, এর ভবিষ্যৎ কী হবে।লিয়া-নানি আলকনসেল আরও বলেন, স্টারশিপের এসব ব্যর্থতা এবং এগুলো আমলে না নেওয়ার, এমনকি সফল বলে উদ্যাপনের রেওয়াজটা ভালো কিছু বলছে না। এগুলো তাদের নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতার পরিচয় দেয় না।
ম্যাকডাওয়েল আভাস দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে আরও ব্যর্থতা আসবে।
লিয়া-নানি আলকনসেল বলেন, ‘এই রকেটে সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের মহাকাশপ্রযুক্তি রয়েছে। তাই তাদের সমস্যার মুখোমুখি হওয়াটা আমাকে মোটেও অবাক করে না। আমি মনে করি, তারা শেষ পর্যন্ত এটাকে সফলভাবে চালু করতে পারবে।’
স্পেসএক্স কি অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী?
মাস্ক ও তার কোম্পানি স্বপ্ন দেখে, একদিন তাদের রকেট মানুষকে মঙ্গল গ্রহে নিয়ে যাবে।
নাসা তার আর্টেমিস কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্টারশিপকে ব্যবহার করতে চায়। এ কর্মসূচির লক্ষ্য হলো, চাঁদে দীর্ঘ মেয়াদে মানববসতি স্থাপন করা।
সাংবাদিক ও লেখক ডেভিড হোয়াইট হাউস বলেন, মানুষ বহনকারী প্রথম ফ্লাইটটি ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের জন্য নির্ধারিত। সময় কিন্তু ফুরিয়ে আসছে।
ম্যাকডাওয়েল বলেন, চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য স্টারশিপের প্রস্তুত হতে অনেক বছর লাগতে পারে, যা নাসার জন্য ‘খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি’ তৈরি করতে পারে।
ম্যাকডাওয়েল আরও বলেন, ‘মহাকাশের খেলায় আমরা “ইলন টাইম” কথাটা বলি। যদি তিনি বলেন যে তিনি এক বছরের মধ্যে কিছু করবেন, তাহলে সেটাকে তিন বছর ধরে রেখে আপনার ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখুন।’
আশাবাদের কোনো কারণ আছে কি?
বাণিজ্যিক মহাকাশযাত্রা দ্রুত বাড়ছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলো মহাকাশকে পুঁজি করে পৃথিবী ছাপিয়ে নতুন অর্থনীতি গড়ার চেষ্টা করছে।
ম্যাকডাওয়েল বলেন, জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন এবং কিছু চীনা উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতায় আছে। স্পেসএক্সের মতো বড় পরিসরে কেউ চেষ্টা করছে না। স্পেসএক্স যদি স্টারশিপকে চালু করতে পারে, পারতে তাদের হবেই, তবে এ শিল্পে তারাই নেতৃত্ব দেবে।
তাহলে শেষ তিনটি পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পরও কি আশার কোনো জায়গা আছে?
ম্যাকডাওয়েল বলেন, হয়তো আশাবাদ নয়, তবে হিসাবি আত্মবিশ্বাস অবশ্যই আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ভরয গ য স প সএক স র ল বল ন অন ক ব য রক ট র জন য আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
লিখে কী হয়? আপনাদের লেখা কি কেউ পড়ে…
এ রকম প্রশ্ন হামেশা শুনতে হয়। শুনতে হয়, ‘আজকে লেকে হাঁটার সময় কয়েকজনকে আপনার নাম বললাম, কেউ দেখি চেনেন না আপনাকে।’ কেউ বলেন, ‘লিখে কেমন পানটান? রিকশা বা মেট্রোর ভাড়া ওঠে?’ এসব কথায় আগে মন খারাপ হতো, এখন সয়ে গেছে। লেখা হয়তো কম লোকে পড়েন; কিন্তু কেউ কেউ তো পড়েন!
আগে অনেকেই আপা বলতেন, একটু আলগা খাতির পেতাম। লেখার সঙ্গে ছবি ছাপার রেওয়াজ চালু হওয়ার পর সে বিভ্রাট গেছে; কিন্তু তারও একটা বিড়ম্বনা আছে। বৃষ্টির মধ্যে রায়গঞ্জের মহান্তদের গ্রাম ঘুরে সলঙ্গা বাজারে একটি ঘোল–মাঠার দোকানে বসে ছিলাম। দোকানকর্মী সাগর (ছদ্মনাম) বললেন, ‘আপনে সাংবাদিক, তাই না? আপনের ফটো দেকিচি; কিন্তু আপনেক ম্যালা (অনেক) কাহিল লাগতেছে। ঘোল খালি (খেলে) ভালো লাগবি। সাগরেরও একটা সেকায়েত আছে। মনে করছেন প্রথম আলোতে একটু লিখলেই কাজ হবে।
সাগর একটা বেসরকারি মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণি বা ইবতেদায়ি ছাত্র। ফার্স্ট বয়। তার খুব ইচ্ছা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিজের মেধা যাচাই করা। সে পথ এবার বন্ধ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বছরের বৃত্তি পরীক্ষায় কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হক থাকবে না। তাদের অংশ নিতে দেওয়া হবে না। সাগর তার হক চায়। তাকে কথা দিই লিখব বিষয়টি নিয়ে।
আমাদেরও অনেক আশা তাঁর কাছে। দেশের মানুষের সদিচ্ছার কাছে। সাগরদের কথা শুনতে হবে মন দিয়ে। সবার হক প্রতিষ্ঠার পথে অনেক কাঁটা। আন্দোলন চলবেএর মধ্যে সবকিছু ওলট–পালট করে সাগরের বয়সী অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেল ঢাকার দিয়াবাড়িতে ২১ জুলাই দুপুরে। আল মাহমুদের কবিতার পঙ্ক্তি দিয়ে বলতে হয়—সলঙ্গার সাগরের সেকায়েত হারিয়ে যায় সেই বিষাদ সিন্ধুতে। লিখতে হয়, ‘মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি আরেক “মাইলফলক” হয়ে থাকবে।’ প্রথম আলো ছাপে সেই তাড়াহুড়ার লেখা। অনেকগুলো পরামর্শ ছিল সে লেখায়। সম্পাদক সব সময় বলেন, শুধু সমস্যা বললে হবে না, কিছু সমাধানের কথাও লিখতে হয়। লেখাটা নজরে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের, তিনি আমলে নেন। ডেকে পাঠান আলোচনার জন্য।
তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানে ব্যস্ততার কারণে যেতে এক দিন দেরি হয়। প্রধান উপদেষ্টা সময় দেন। সঙ্গে নিয়ে যাই একাত্তরের সামাজিক ইতিহাস, স্বাধীনতার ৫০ বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অর্জন আর ২০২৪ সালের বন্যাকে প্রচ্ছদকাহিনি করে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রতিবেদন ২০২৪’। প্রথমা থেকে প্রকাশিত প্রথম দুটি বই তিনি বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখলেন। একাত্তরে অধিকৃত বাংলাদেশে নারীরা কীভাবে নীরবে সৃজনশীলতার সঙ্গে আর ঠান্ডা মাথায় সামাজিক যুদ্ধে শরিক হয়েছিলেন, সে কথা আমি বর্ণনা করতে করতেই তিনি বইটির এক জায়গা থেকে নিজেই পড়ে শোনালেন।
আবার আমরা ফিরে যাই মাইলস্টোন স্কুলে; ভালো শ্রোতা পেয়ে আমি জোরের সঙ্গেই বলতে থাকি, একটি খেয়ানৌকা ডুবলে বা লঞ্চডুবি হলে তার মালিককে নিয়ে আমরা কত না সময় খরচ করি; কিন্তু আজ পর্যন্ত স্কুলের মালিকেরা কেন চুপ আছেন। কেউ কেন কোনো কথা বলছেন না?
সাংবাদিকেরা গলদঘর্ম চিকিৎসকদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছেন; কিন্তু মাইলস্টোনের বোর্ড মেম্বারদের কেন কোনো প্রশ্ন করছেন না? সব উঁচু ইমারতের জরুরি নির্গমন সিঁড়ি থাকার কথা—মাইলস্টোনের ভবনগুলোতে কেন সেই ব্যবস্থা নেই। বিমান ভেঙে না পড়লেও অন্য কোনোভাবে আগুন লাগতে পারত, সে ক্ষেত্রে আগুন নেভানোর কী ব্যবস্থা ছিল? ফায়ার হাইড্রেন্ট ছিল কি?
দেখলাম, ভবনটি যেন গড়া হয়েছে এক শিশু জেলখানা হিসেবে। সিঁড়ি ছাড়া ভবনে কাউকে বের করার খোলা জায়গা নেই। পুরো ভবন লোহা ও ইস্পাতের বেড়া দিয়ে আবদ্ধ করা। কেন? হোস্টেলগুলোতে রাতে আগুন লাগলে শিক্ষার্থীদের বের হওয়ার সহজ কোনো পথ আছে কি?
ওই জায়গায় আগুন না লাগলেও বিধ্বস্ত ইমারত বিমানবন্দর–সংলগ্ন হওয়ায় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক বা কর্মীরা বিমানের ওঠা–নামার আওয়াজের যে শব্দদূষণের শিকার হন, তার কি কোনো পরিমাপ বা পরিণতির মূল্যায়ন আছে?
আলোচনা আর শেষ হয় না। জানতে চাইলেন খুব সুনির্দিষ্ট সুপারিশ কী হতে পারে। প্রথম আলো প্রকাশিত লেখার আলোকে কথা এগোয়। বলি—১. নিরাপদ দূরত্বে স্কুল সরিয়ে নিতে হবে (সারা দিন বিমানের আওয়াজ শিশুর জন্য নিরাপদ নয়); ২. শিক্ষার্থী আর শিক্ষক–কর্মচারীদের মনে সামাজিক সহায়তা দিতে হবে; ৩. উপদ্রুত স্কুলটিতে এখন ‘স্বাভাবিক’ পড়াশোনা নয়, শুধু খেলাধুলা, ছবি আঁকা, গান ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হিলিং প্রক্রিয়াও শুরু করতে হবে; ৪. সব প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিরীক্ষণ করতে হবে; ৫. টেলিভিশন ও অন্যান্য মাধ্যমে দুর্ঘটনার বীভৎস ছবি ও ভিডিও প্রচার বন্ধ রাখতে হবে; ৬. দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রসারে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
প্রধান উপদেষ্টার অনুমতি নিয়ে সারা দেশে এসএসসি শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা আর পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর প্রসঙ্গ নিয়েও মতামত জানালাম। এগুলো রোধে স্কুল ও সমাজভিত্তিক ব্যবস্থা নিয়েও কথা হয়। কথা হয় একাত্তরের সামাজিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা ও প্রকাশনার উদ্যোগ নিয়ে। ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা বিভিন্ন বেসরকারি ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধে তাঁদের যে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে, তিনি সে ব্যাপারটিও আমলে নিলেন। পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশন এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, এটা তাঁর আশা।
আমাদেরও অনেক আশা তাঁর কাছে। দেশের মানুষের সদিচ্ছার কাছে। সাগরদের কথা শুনতে হবে মন দিয়ে। সবার হক প্রতিষ্ঠার পথে অনেক কাঁটা। আন্দোলন চলবে।
গওহার নঈম ওয়ারা লেখক গবেষক
[email protected]