গত ২৭ মে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের উৎক্ষেপণকেন্দ্র থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেটটি পরীক্ষামূলকভাবে উড়ে যায়। জানুয়ারি ও মার্চে দুটি মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর এ ধাপে স্পেসএক্স স্টারশিপ মিশনে সাফল্য আসবে বলে অনেক উচ্চাশা ছিল।

স্টারশিপ মূলত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। ওপরের অংশটিকে বলা হয় ‘শিপ’। এটি বসানো থাকে নিচের বিশাল রকেট ইঞ্জিনের ওপর, যার নাম ‘সুপার হেভি’। এই দুই অংশ মিলিয়ে রকেটটির মোট উচ্চতা ১২০ মিটারের একটু বেশি। তবে সুপার হেভি থেকে আলাদা হওয়ার কয়েক মিনিট পরই বোঝা গেল, চালকবিহীন ওই মহাকাশযানে কিছু ভুল হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরতে শুরু করে দিল।

পরীক্ষামূলক উড়ালের সরাসরি সম্প্রচারে স্পেসএক্সের এক ধারাভাষ্যকার বলেন, ‘আমরা আসলে স্টারশিপের দিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি।’

কোম্পানিটি পরে নিশ্চিত করে যে হঠাৎ করেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মহাকাশযানটি ভেঙে পড়েছে।

ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স কোম্পানির জন্য এটি ছিল অম্ল–মধুর ফলাফল।

তবে এযাবৎকালে এটাই এই মহাকাশযানের সর্বোচ্চ অর্জন, যা আগের দুবারের অগ্রগতিকে ছাপিয়ে গেছে। তা ছাড়া এবারের রকেট ইঞ্জিনটি ছিল পুরোনো। সেটা ভালো কাজ করেছে। পুরোপুরি পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট বানানোর যে পরিকল্পনা কোম্পানিটির রয়েছে, সেটা এক ধাপ এগিয়ে গেল।

স্টারশিপ মূলত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। ওপরের অংশটিকে বলা হয় ‘শিপ’। এটি বসানো থাকে নিচের বিশাল রকেট ইঞ্জিনের ওপর, যার নাম ‘সুপার হেভি’। এই দুই অংশ মিলিয়ে রকেটটির মোট উচ্চতা ১২০ মিটারের একটু বেশি। তবে সুপার হেভি থেকে আলাদা হওয়ার কয়েক মিনিট পরই বোঝা যায়, চালকবিহীন ওই মহাকাশযানে কিছু ভুল হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরতে শুরু করে।

তবে শেষ কথা হলো, স্টারশিপের নবম পরীক্ষামূলক উড়ালটির পরপর তিনবার ব্যর্থ হওয়ার নজির তৈরি হলো। স্পেসএক্সের অন্য রকেট ফ্যালকন–৯ খুব সফল ও নির্ভরযোগ্য ছিল। কিন্তু স্টারশিপের এই তিনটি ব্যর্থতা দেখে অনেকেই ভাবছেন, এর সব কিছুতেই কি গন্ডগোল আছে?

স্পেসএক্সের সবচেয়ে সফল রকেট ফ্যালকন ৯-এর নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি। তবে কয়েক মাসের মধ্যে তিনটি পরীক্ষা ব্যর্থ হওয়ার কারণে পর্যবেক্ষকদের কারও কারও মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটি হলো, স্পেসএক্সের স্টারশিপের সবকিছু কি ভুল পথে যাচ্ছে?

২৭ মের যাত্রায় সমস্যা কী ছিল?

সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরীক্ষাকালীন উপাত্তগুলো পরে আসবে। পরবর্তী অভিযানের আগে ভুল শুধরে নিতে স্পেসএক্স এসব উপাত্ত কাজে লাগাবে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী জনাথন ম্যাকডাওয়েল বলেন, ২৭ মের পরীক্ষার শুরুটা আগের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। মহাকাশযানটি সফলভাবে কক্ষপথে পৌঁছেছে, অর্থাৎ রকেট ঠিকমতো পুরো সময় কাজ করেছে।

জনাথন ম্যাকডাওয়েল আরও বলেন, মহাকাশযানটি তার কক্ষপথে ঠিকঠাক পৌঁছেছিল। তবে ইতিমধ্যে অভিযান পরিচালনাকারী দলটি সমস্যায় পড়ে। বুস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এটি নিয়ন্ত্রিতভাবে নামার বদলে সাঁ করে মেক্সিকো উপসাগরের পানিতে পড়ে। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যে মহাকাশযানটি নকল স্টারলিংক স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। পে-লোড দরজা আটকে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে।

তবে ম্যাকডাওয়েলের মতে এ অভিযানের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো, কক্ষপথে চলার সময় স্টারশিপের দিকটা ঠিক রাখতে পারেনি স্পেসএক্স।

স্টারশিপের এযাবৎকালের সেরা যাত্রা হওয়া সত্ত্বেও মহাকাশযানটিতে ফুটো দেখা দিতে লাগল। এটি ভেঙে পড়ে মুখ থুবড়ে পৃথিবীর পরিমণ্ডলে ফিরে এল।

দ্রুত ব্যর্থ হও, দ্রুত শেখো

স্পেসএক্স একই কাজ বারবার করে শেখার নীতিতে পরিচালিত হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যর্থতাকে তারা বাধা নয়, বরং শেখার সুযোগ হিসেবে দেখে।

এ প্রবণতা স্পেসএক্সকে বড় সাফল্যের পথে নিয়ে গেছে। তবে বারবার ব্যর্থতা দীর্ঘ মেয়াদে বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তবু কোম্পানিটি আশা করে যে ব্যর্থ হতে হতে দ্রুত শেখার নীতি শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। ফ্যালকনের পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট সিরিজ তৈরি করার সময় এমনটাই হয়েছিল।

বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও মহাকাশযান প্রকৌশলী লিয়া-নানি আলকনসেল মনে করেন, স্টারশিপের ক্ষেত্রে যে একই পন্থা কাজ করবে, তা নিশ্চিত নয়।

লিয়া-নানি আলকনসেল বিবিসিকে জানান, স্টারশিপের প্রতিবারের উৎক্ষেপণ ফ্যালকনের তুলনায় অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ। এর প্রধান লক্ষ্য হলো, মানুষকে মঙ্গল গ্রহে পাঠানো। অথচ এর বাজার কিন্তু এখনো তৈরি হয়নি। সুতরাং এর বড় আর্থিক ঝুঁকি রয়েছে।

শেষ পর্যন্ত স্টারশিপের নবম পরীক্ষামূলক মহাকাশযানটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ব্যর্থ হলেও স্পেসএক্সের অন্য রকেট ফ্যালকন–৯ খুব সফল ও নির্ভরযোগ্য। কিন্তু স্টারশিপের এই তিনটি ব্যর্থতা দেখে অনেকেই ভাবছেন, এর ভবিষ্যৎ কী হবে।

লিয়া-নানি আলকনসেল আরও বলেন, স্টারশিপের এসব ব্যর্থতা এবং এগুলো আমলে না নেওয়ার, এমনকি সফল বলে উদ্‌যাপনের রেওয়াজটা ভালো কিছু বলছে না। এগুলো তাদের নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতার পরিচয় দেয় না।

ম্যাকডাওয়েল আভাস দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে আরও ব্যর্থতা আসবে।

লিয়া-নানি আলকনসেল বলেন, ‘এই রকেটে সম্পূর্ণ নতুন প্রজন্মের মহাকাশপ্রযুক্তি রয়েছে। তাই তাদের সমস্যার মুখোমুখি হওয়াটা আমাকে মোটেও অবাক করে না। আমি মনে করি, তারা শেষ পর্যন্ত এটাকে সফলভাবে চালু করতে পারবে।’

স্পেসএক্স কি অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী?

মাস্ক ও তার কোম্পানি স্বপ্ন দেখে, একদিন তাদের রকেট মানুষকে মঙ্গল গ্রহে নিয়ে যাবে।

নাসা তার আর্টেমিস কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্টারশিপকে ব্যবহার করতে চায়। এ কর্মসূচির লক্ষ্য হলো, চাঁদে দীর্ঘ মেয়াদে মানববসতি স্থাপন করা।

সাংবাদিক ও লেখক ডেভিড হোয়াইট হাউস বলেন, মানুষ বহনকারী প্রথম ফ্লাইটটি ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের জন্য নির্ধারিত। সময় কিন্তু ফুরিয়ে আসছে।

ম্যাকডাওয়েল বলেন, চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য স্টারশিপের প্রস্তুত হতে অনেক বছর লাগতে পারে, যা নাসার জন্য ‘খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি’ তৈরি করতে পারে।

ম্যাকডাওয়েল আরও বলেন, ‘মহাকাশের খেলায় আমরা “ইলন টাইম” কথাটা বলি। যদি তিনি বলেন যে তিনি এক বছরের মধ্যে কিছু করবেন, তাহলে সেটাকে তিন বছর ধরে রেখে আপনার ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখুন।’

আশাবাদের কোনো কারণ আছে কি?

বাণিজ্যিক মহাকাশযাত্রা দ্রুত বাড়ছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানিগুলো মহাকাশকে পুঁজি করে পৃথিবী ছাপিয়ে নতুন অর্থনীতি গড়ার চেষ্টা করছে।

ম্যাকডাওয়েল বলেন, জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন এবং কিছু চীনা উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতায় আছে। স্পেসএক্সের মতো বড় পরিসরে কেউ চেষ্টা করছে না। স্পেসএক্স যদি স্টারশিপকে চালু করতে পারে, পারতে তাদের হবেই, তবে এ শিল্পে তারাই নেতৃত্ব দেবে।

তাহলে শেষ তিনটি পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পরও কি আশার কোনো জায়গা আছে?

ম্যাকডাওয়েল বলেন, হয়তো আশাবাদ নয়, তবে হিসাবি আত্মবিশ্বাস অবশ্যই আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ভরয গ য স প সএক স র ল বল ন অন ক ব য রক ট র জন য আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

কদমতলীতে তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

রাজধানীর কদমতলীর সিটি ধারা এলাকায় নাঈম হোসেন (১৮) নামে এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মৃত্যু হয় তার।

পুলিশ ও স্বজনের সূত্রে জানা যায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ছিলেন নাঈম। কদমতলীর সিটি ধারা এলাকার ৭ নম্বর সড়কের বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তার বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনায়। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কদমতলীর সিটি ধারার ৮ নম্বর সড়কে নাঈমকে ছুরিকাহত অবস্থায় পাওয়া যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

কদমতলী থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, নিহত নাঈমের সঙ্গে অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে আরেক অটোরিকশা চালকের বাকবিতণ্ডা হয়েছিল কয়েকদিন আগে। এর জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ