ভারতে করোনার প্রকোপ বাড়ায় বেনাপোলে সতর্কতা জারি
Published: 8th, June 2025 GMT
ভারতের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। এরই মধ্যে দেশটির বিভিন্ন স্থানে ওমিক্রনের একটি নতুন ধরন বা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে।
এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সংক্রমণ এড়াতে দেশের সব নৌ, স্থল ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মানার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
চলতি মাসের ৪ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা.
আরো পড়ুন:
জাবিতে ছাত্রদলের হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম
করোনার টিকা ক্রয়
‘২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে’ সালমান গংয়ের বিরুদ্ধে নামছে দুদক
এমতাবস্থায় ভারতসহ বিভিন্ন সংক্রমিত দেশ থেকে আগত সন্দেহজনক যাত্রীদের দেশের স্থল, নৌবন্দর ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর হেলথ ডেস্কের সহায়তার বিষয়ে স্বাস্থ্য বার্তা প্রদান এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিবিড়ভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
রবিবার (৮ জুন) বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দেখা যায়, মেডিকেল ডেস্কে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে দেখা গেছে।
ভারত ফেরত যাত্রী হরিদাস জানান, ১০দিন আগে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। আজ দেশে ফিরলাম। বাংলাদেশের মতো ভারতের কোথাও করোনা বা ওমিক্রনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি।
ভারত ফেরত যাত্রী মনিকা রানী বলেন, “এক মাস চিকিৎসার পর আজ দেশে ফিরে এলাম। ভারতের কোথাও নতুন করে করোনার প্রভাব ছড়িয়েছে বলে শুনিনি। দেশে আসার পর দেখছি করোনার পরীক্ষা করছে।”
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার আব্দুল মজিদ বলেন, “ভারতে জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, দেশটির কিছু স্থানে ওমিক্রনের নতুন এক ধরন বা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে এ ধরনটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সতর্কতার জন্য ভারত ফেরত সকল যাত্রীকে আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। আমাদেরকে পরিচালক স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন, যদি কারো শরীরে করোনা বা ওমিক্রনের উপসর্গ পাওয়া যায় তাহলে যেন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে রাখে।”
অন্যদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের ফিরতি যাত্রায় যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঈদ পরবর্তী (ঈদুল আজহার ফিরতি যাত্রা) ট্রেন যাত্রায় সব যাত্রীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য এবং মাস্ক পরিধান করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
২০২০ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়। এরপর থেকে দেশে কয়েক দফায় সংক্রমণ বেড়েছে এবং জনস্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সরকারিভাবে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম এড়ানোসহ স্বাস্থ্যবিধি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ায় এসব বিধি-নিষেধ অনেকাংশে শিথিল করা হয়।
সম্প্রতি দেশে আবারও কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা গেছে। এরপরই আবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম স ক পর স ক রমণ কর ন র পর ক ষ অন র ধ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের
প্রতিবছর জুলাই মাস বিশ্বব্যাপী ‘জরায়ুর ফাইব্রয়েড সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য নারীদের মধ্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এর সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা।
ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর একধরনের নন ক্যানসারাস টিউমার বা মাংসপিণ্ড, যা প্রজননক্ষম নারীদের হতে পারে। লেইওমায়োমা বা মায়োমা নামেও এটি পরিচিত। জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হয়। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে জীবনমানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।
লক্ষণ বা উপসর্গ
এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যায় পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব।
তলপেটে চাপ বা ব্যথা। শরীর ফুলে যাওয়া।
ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রনালির সমস্যা।
সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা।
গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব।
বয়স ও বংশগতির প্রভাব।
ওজনাধিক্য, হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি।
নির্ণয় ও চিকিৎসা
আলট্রাসাউন্ড, পেলভিক ইমেজিং, এমআরআই বা জরুরি ক্ষেত্রে হাইফু বা হিস্টেরস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড শনাক্ত করা যায়।
টিউমার ছোট হলে বা উপসর্গ না থাকলে ওষুধ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি, ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন, এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা জরায়ু অপসারণ করা হয়। চিকিৎসার ধরন বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন সচেতনতা জরুরি
ফাইব্রয়েড খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু অনেক নারী উপসর্গ পেয়েও সময়মতো এর চিকিৎসা নেন না। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্ষুধা, ক্লান্তি, বন্ধ্যত্ব নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
এই টিউমার ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ফাইব্রয়েড নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। ফাইব্রয়েড হলে সন্তান হবে না, এমন ধারণাও অমূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ