চামড়ার সরকারি নির্ধারিত দরের প্রতিফলন নেই উত্তরাঞ্চলে, লোকসানে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা
Published: 8th, June 2025 GMT
কোরবানির ঈদের পরই চাঙা হওয়ার কথা দেশের কাঁচা চামড়ার বাজার। বছরে ব্যবহৃত ৮০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয় এই মৌসুমে, যা চামড়া শিল্পের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তবে সেই ‘স্বর্ণসময়ও’ এবার রঙ হারিয়েছে। সরকার বর্গফুট প্রতি দাম নির্ধারণ করলেও উত্তরাঞ্চলের বাজারে তার প্রতিফলন নেই। চাহিদা নেই, নেই ন্যায্যমূল্যও। খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মৌসুমি সংগ্রাহক সবাই লোকসানে বিক্রি করছেন চামড়া। কেউ কেউ বলছেন, প্রতি বছরই একই দৃশ্য দেখা যায়, কাগজে থাকে দাম, কিন্তু মাঠে নামে ধস। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের সেই ব্যবসায়ীরা, যারা প্রান্তিক পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন। তারা দামের স্বপ্ন দেখেই লোকসানে হেঁটে যাচ্ছেন।
এবারও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ছাগলের চামড়ার দাম ছিল ২০-২৫ টাকা। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁসহ অন্তত ১২টি জেলার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চামড়ার দাম কোথাওই সরকারি রেট ছুঁতে পারেনি, বরং অনেক জায়গায় চামড়া বিক্রি হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪৫-৫০ টাকায়।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী জহুরুল হক বলেন, গতবারও লোকসান গুনেছি, এবার ভেবেছিলাম দাম উঠবে। কিন্তু এবারও গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছি, যেখানে সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এটা হওয়া উচিত ছিল অন্তত ১২০০ টাকা।
দিনাজপুর সদর উপজেলার চামড়া সংগ্রাহক রহিম উদ্দিন বলেন, তিনটা গরুর চামড়া তুলেছিলাম, সবগুলো মিলে বিক্রি করেছি মাত্র দুই হাজার একশ’ টাকায়। লবণ, ভ্যান, লেবারের খরচ দিয়ে এখনও হিসাব মিলাতে পারিনি। প্রতি বছরই এমনটা হয়। কিন্তু কেউ আসে না দেখতে, আমরা কেন লোকসান করছি।
কুড়িগ্রামের রাজারহাটের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক বলেন, এই এলাকায় কোনো ট্যানারি মালিক আসে না সরাসরি। যাদের কাছে বিক্রি করতে হয়, তারা নিজেদের মতো করে দর বলে। এবার ৬৫০ টাকার বেশি কেউ দেয়নি, অথচ সরকার বলছে, দাম নাকি ১২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এই দামের চিহ্নও আমরা দেখিনি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার হাটে চামড়া বিক্রি করতে আসা কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, গরুর চামড়া দিয়েছি ৭০০ টাকায়। অথচ কোরবানির আগে শুনেছি দাম বেড়েছে। প্রশ্ন হলো, কার জন্য বেড়েছে? যারা শহরে বড় বড় গোডাউনে বসে?
নওগাঁর পত্নীতলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বলেন, ঈদের দিন ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ঘুরেছি শুধু চামড়া সংগ্রহ করতে। সবমিলিয়ে ১৮টা গরুর চামড়া তুলেছি। কিন্তু দাম উঠেছে এত কম যে একরকম ভেঙেই পড়েছি। মনে হচ্ছে এই ব্যবসা আর করব না।
রংপুরের বদরগঞ্জের এক সাধারণ কোরবানিদাতা জাকির হোসেন বলেন, ছাগলের চামড়া নিতে কেউ রাজি হয়নি। মসজিদে দিলেও বলেছে- রাখার জায়গা নেই। শেষ পর্যন্ত পাশের ডোবাতে ফেলে দিয়েছি। কষ্ট লাগে, কিন্তু কিছু করারও নেই।
ঈদের মৌসুমে চামড়া সংগ্রহে নামেন কয়েক হাজার মৌসুমি ব্যবসায়ী। এই ব্যবসায়ীরাই মূলত গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করেন। কিন্তু পরিবহন, লবণ, লেবার ও সংরক্ষণ ব্যয় শেষে অনেকেরই ঘরে ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে।
একসময় ছাগলের চামড়াও যুক্ত হতো চামড়া শিল্পে। এখন সেই চামড়া কেউ নিতে চায় না। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছাগলের চামড়া রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।
রংপুরের মিঠাপুকুরে স্থানীয় মসজিদের খাদেম মোজাম্মেল হক বলেন, লোকে ছাগলের চামড়া মসজিদে দিতে আসছে, কিন্তু কেউ নিতে চায় না। দুই-তিন জায়গায় ফোন দিয়েও কেউ নেওয়ার আগ্রহ দেখায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, ছাগলের চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণে খরচ বেশি, অথচ চূড়ান্ত উৎপাদনে মূল্য কম। ফলে চাহিদা কমে যাওয়ায় এই চামড়া এখন প্রাসঙ্গিকতাই হারাচ্ছে।
বাংলাদেশে চামড়া শিল্পে বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের সম্ভাব্য রপ্তানি আয় হওয়ার কথা। কিন্তু দুর্বল ব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও দূরদর্শিতার অভাবে এই শিল্প নিয়মিত ক্ষতির খাতায় নাম লেখাচ্ছে।
সাভার ও হেমায়েতপুরের ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধি আজিজুল হক অভিযোগ করে বলেন, জেলায় জেলায় চামড়া ঠিকমতো সংরক্ষণ হয় না। লবণের পরিমাণ কম থাকে, অনেক সময় পচে যায়। তাই দাম কম দিতে হয়।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের পাল্টা অভিযোগ, ট্যানারি মালিকরাই বাজারে একচেটিয়া দখল করে রেখেছে। তারা সিন্ডিকেট করে দরপতন ঘটায়। প্রতিবারই ঈদের পর তারা অজুহাত দেয় চামড়া ভালো না, সংরক্ষণ ঠিক হয়নি। অথচ তারাই আগে কোনো দিকনির্দেশনা দেন না।
বগুড়া, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ঈদের সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তদারকি দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও দাম লিখে রাখার জন্য কাগজ দেওয়া হলেও কেউ তা মানেনি। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টিকে ‘ব্যবসায়িক বিষয়’ বলে এড়িয়ে গেছে।
অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.
বগুড়া চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নাজির হোসেন বলেন, বছরের পর বছর আমরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের বাস্তবায়ন দেখি না। ট্যানারি মালিকরা মাঠ পর্যায়ের চামড়া কিনতে আগ্রহী নন, বরং বিভিন্ন দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কম দামে সংগ্রহ করেন। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। তারা চামড়া কিনে সঠিক দামে বিক্রি করতে পারে না, অথচ সরকারের কাছে তাদের কথা পৌঁছায় না। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে অনেকেই এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) বগুড়া জেলা সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, একসময় দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত ছিল চামড়া শিল্প। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সেই শিল্পকেই গলা টিপে ধরা হচ্ছে ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, সিন্ডিকেট, নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বছরের একমাত্র উৎসবকালেই যখন ক্ষতির মুখোমুখি হন, তখন প্রশ্ন ওঠে এই শিল্প আসলে কার স্বার্থে চলছে?
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প র ন ত ক ব যবস য় ম ঠ পর য য় ব যবস য় র ই ব যবস ক বল ন ন বল ন ক রব ন র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি জন্ম দিয়েছে অনেক জল্পনা-কল্পনার
গত ২১ মে থেকে ৩ জুন। এই ১৪ দিন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তার অনুপস্থিতি ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে এ সময়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) অস্বাভাবিক তৎপরতা দেখা গেছে। এই পরিস্থিতে অনেকের প্রশ্ন, দেশটিতে নেতৃত্বে কী পরিবর্তন আসছে?
মনে রাখতে হবে, শি জিনপিং গত ১২ বছর ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন। করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে যে আঘাত হেনেছে, তার ক্ষত এখনও পুরোপুরি কাটেনি। বিশেষ করে চীনের অর্থনীতি যে শ্লথ প্রবৃদ্ধির কবলে পড়েছে, তা থেকে বের হতে পারছে না। এজন্য স্থানীয় সরকারের ঋণ, রিয়াল এস্টেট ব্যবসায় ধস, বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার মতো নানা কারণ দায়ী। এর সঙ্গে রয়েছে ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়া। বয়স্ক মানুষ বেড়ে যাওয়া। তাদের পেনশনের জন্য বিপুল ব্যয়। আর এদের হাত ধরে দেশটি উন্নয়নশীল অবস্থা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উন্নত হওয়ার আগেই নিরাময়অযোগ্য এক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি। সরকার অর্থনীতিতে গতি আনতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কিন্তু সমস্যা কাটাতে পারছে না।
এরই মধ্যে শি জিনপিংয়ের এই লোকসমক্ষে না আসার ঘটনা। এ সময় একজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটেছে। এসব দেখে সর্বোচ্চ স্তরে একটি সম্ভাব্য ক্ষমতার লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাচ্ছেন চীনা রাজনীতির বিশ্লেষকরা।
এটা ঠিক, চীন কোন পথে যাবে- এর বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক প্রভাব রয়েছে। সিসিপি চলার পথ না পাল্টালে স্থানীয় ঋণ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার পতন কি অনিবার্য? অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে দৃষ্টি সরাতে যুদ্ধ বা অন্য কোনো কৌশল নিতে পারে কি? চীনের অভ্যন্তরে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে, যা এই অঞ্চল, বিশেষ করে এশিয়াসহ বাকি বিশ্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। এসব নিয়েই জাপান ফরোওয়ার্ডের বিশ্লেষণী প্রতিবেদন।
শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি নজিরবিহীন
শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক ১৪ দিনের অনুপস্থিতি নজিরবিহীন ঘটনা। ২০১২ সালের মতো আগের অনুপস্থিতিগুলোর থেকে এটা ভিন্ন। তখন তিনি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য ক্ষমতা সংহত করছিলেন। আবার ২০২৩ সালের মতোও নয়। তখন মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করায় পর্দার আড়ালে ছিলেন বলে খবর রটেছিল। এবার তার অনুপস্থিতি ক্ষমতার লড়াইয়ের ক্রমাগত গুঞ্জনের পরে ঘটেছে।
চীনের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, ২০২৪ সালের এপ্রিলেই প্রভাব হারিয়ে থাকতে পারেন শি। তার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে সামরিক বাহিনীর অনুগত অংশ।
শির স্ত্রী পেং লিউয়ান সাম্প্রতিক বিদেশ সফরে তার সঙ্গী হননি। দেশের ভেতরে শির পরিষদবর্গের পদমর্যাদা কমান হয়েছে। উপপ্রধানমন্ত্রী হে লাইফেংয়ের মতো নিম্নপদস্থ কর্মকর্তারা সিসিপির দপ্তর সম্পাদক কাই কির মতো সিনিয়র ব্যক্তিদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।
সিসিপির কেন্দ্র থেকে অস্বাভাবিক সংকেত
সিসিপির কার্যক্রমেও অনিয়ম দেখা গেছে। পলিটিক্যাল ব্যুরো নিয়মিত মাসিক বৈঠক করে। তারা গত মে মাসের শেষে বৈঠক করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগের বৈঠকে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, শি-কে ক্ষমতাচ্যুত করা হতে পারে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পিপলস ডেইলি গত ২ থেকে ৪ জুন প্রথম পাতায় শি জিনপিং এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতার খবর ছাপেনি। তারা কার্বন হ্রাস এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে। একে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
লিবারেশন আর্মি ডেইলি গত ৩০ মে একটি নিবন্ধের শিরোনাম করেছে, ‘জনগণের ক্ষমতা অবশ্যই জনগণের সেবা করবে’। এতে শি-কে সমালোচনা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে। এই খবরটি অন্যান্য সরকারি মাধ্যমগুলোও প্রচার করে। এই ব্যতিক্রমগুলো শির নেতৃত্ব থেকে ইচ্ছাকৃত দূরত্বের ইঙ্গিত বহন করে।
জু কিলিয়াংয়ের রহস্যজনক মৃত্যু
কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জু কিলিয়াংয়ের মৃত্যু এই জল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি শির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
এই মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে ৩ জুনে ঘোষণা করা হয়। এর পাঁচ দিন আগে জুর মৃত্যুর খবর প্রাক্তন চীনা সাংবাদিক ঝাও লানজিয়ান জানিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, জু তীব্র চাপের মধ্যে ‘ভয়ে মারা গেছেন’।
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে শির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন জু। শির সামরিক সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার এই মৃত্যুর কোনো স্পষ্ট কারণ প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া হে ওয়েইডং এবং মিয়াও হুয়ার মতো অন্যান্য সামরিক অনুগতরা সম্প্রতি শির কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন।
প্রাদেশিক পর্যায়ে নীরব রদবদল
শির এই অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ-পর্যায়ের পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত ৩০ মে ঝেং ইয়ানক্সিয়ংকে হংকংয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের যোগাযোগ অফিসের পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করা হয়। কেউ কেউ এই পদক্ষেপটিকে ওয়াং ইয়াং-এর সম্ভাব্য উত্থানের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তিনি সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত। শির উত্তরসূরি বলে তাকে পরিচিত করানো হচ্ছে।
ওয়াং ২০১১ সালের উকান গ্রামের বিক্ষোভে মধ্যপন্থী ব্যবস্থাপনার জন্য পরিচিত। শির কঠোর নীতির সঙ্গে এ ঘটনা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। তিনি ২০১৬ সালে উকানের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ওপর দমনপীড়ন চালিয়েছিলেন।
অন্যান্য প্রাদেশিক এবং মন্ত্রী পর্যায়ের কর্মকর্তা পদে রদবদল আনা হয়েছে। এসবই ক্ষমতা পরিবর্তনের একটি চলমান প্রক্রিয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।
মিলে যাচ্ছে অতীতের ক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে
ইতিহাস বলছে, নেতারা ক্ষমতা হারালে তা বিলম্বে ঘোষণা করে সিসিপি। দেং জিয়াওপিংয়ের সংস্কার কার্যক্রমের সমালোচনার পর ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত (প্রায় তিন বছর) আড়ালে ছিলেন মাও সেতুংয়ের উত্তরসূরি হুয়া গুওফেং।
১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়েন হু ইয়াওবাং। এর নয় মাস পরে অক্টোবরে নিশ্চিত করা হয়েছিল ঘটনাটি।
১৯৮৯ সালের মে মাসে ছাত্র বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোয় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ঝাও জিয়াং। আনুষ্ঠানিক অপসারণ হওয়ার আগেই তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে ভাষণ দিতে এসেছিলেন তিনি। এ ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায়, শি হয়তো নামমাত্র নেতা হিসেবে রয়েছেন। এমনকি তার ক্ষমতা কমানো হয়ে থাকলেও সিসিপি ঐক্যের মুখোশ খুলবে না।
সামাজিক অস্থিরতা এবং উদ্বেগ
তৃণমূল পর্যায়ে উত্তেজনা সুস্পষ্ট। গত ২০ মে ৮০০ আরএমবি (১১১ মার্কিন ডলার) মজুরি না পাওয়ায় টেক্সটাইল কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ আগুন ৩৭ ঘণ্টা ধরে জ্বলে এবং উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসাধারণের সহানুভূতি ছিল বেতন না পাওয়া কর্মীর পক্ষে। এটা পদ্ধতিগত বৈষম্যের প্রতি গভীর হতাশার প্রতিফলন।
চীনা রাজনীতির বিশ্লেষক ইউয়ান হংবিং জানিয়েছেন, মধ্য ও নিম্ন-স্তরের সিসিপি নেতারা পরিবর্তনের প্রত্যাশায় সামরিক, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক জোট তৈরি করছেন। এটা চীনা সমাজে বিরাজমান উদ্বেগের প্রতিফলন।
চীন কি ক্ষমতার সড়কের মোড়ে দাঁড়িয়ে?
চীন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী আগস্টে সিসিপির আসন্ন চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন। সেখানে হয়তো শি জিনপিংয়ের ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে। সেটাই বলে দেবে কোন পথে যাবে চীন। নতুন নেতারা কি পার্টির স্বৈরাচারী মডেল ত্যাগ করবেন? নাকি তারা শি-কে বলির পাঠা বানিয়ে ব্যবস্থাটি টিকিয়ে রাখবেন? আপাতত গুজব ডালপালা মেলছে। ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ। পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিশ্ব। আপাতত, শি-কে ঘিরে অস্বাভাবিক ঘটনা এবং সিসিপির মুখোশের ফাটলগুলো চীনের ভবিষ্যৎ গতিপথ সম্পর্কে একটি গভীর অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দেয়।